
এবিএনএ : রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের প্রতি চাপ প্রয়োগে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জি-৭ সম্মেলনে আসা নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার জি-৭ শীর্ষ সম্মেলনের আউটরিচ অধিবেশনে বক্তব্য প্রদানকালে এই আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নিপীড়ন ও মানবাধিকার লংঘনের ঘটনায় কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে জবাবদিহিতা ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার জন্য বিশ্ব নেতৃবৃন্দের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
শেখ হাসিনা বলেন, দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাস্তবায়নে রাখাইন রাজ্যে কার্যকর পরিবেশ তৈরিতে মিয়ানমারকে অবশ্যই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। রোহিঙ্গাদের বারবার দেশ থেকে বিতারণ বন্ধ ও মূল সমস্যা সমাধানে দেশটিকে অবশ্যই কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের আন্তর্জাতিক বিশেষ করে জি-৭ দেশগুলোর আরো সমর্থন প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গাদের সমস্যার মূল মিয়ানমারেই নিহিত এবং তাদেরকেই এর সমাধান করতে হবে। রোহিঙ্গাদের তাদের নিজ দেশে ফেরত নিতে হবে, যেখানে তারা শতশত বছর ধরে বসবাস করে আসছে। ইতিমধ্যেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের অধিকার নিশ্চিত করতে মিয়ানমারের সঙ্গে চুক্তি করেছি। এই প্রক্রিয়া যাতে স্থায়ী ও টেকসই হয় সেজন্য আমরা এতে ইউএনএইচসিআর’কে অন্তর্ভুক্ত করেছি।
রাখাইন এডভাইজরি কমিশনের সুপারিশসমূহ অতিদ্রুত ও নিঃশর্ত বাস্তবায়নে মিয়ানমারকে রাজি করানো এবং অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যথাযথ অবরোধ আরোপে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব গ্রহণে কাজ করার জন্য জি-৭ নেতাদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চালানো গণহত্যা ও মানবাধিকার লংঘনের জন্য জবাবদিহিতা ও সুবিচার নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিতে হবে। বাংলাদেশ জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১ লাখের বেশি মিয়ানমারের নাগরিককে আশ্রয় দিয়েছে। তারা নিজ দেশে গণহত্যার মুখোমুখি হওয়ায় জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে। আমাদের জনগণ তাদের বাড়িঘর ও হৃদয় দুর্দশাগ্রস্ত রোহিঙ্গাদের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছে। নিজেদের খাবার তাদের সঙ্গে ভাগ করে নিয়েছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোর জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রশংসা করে শেখ হাসিনা বলেন, মোট ১২২টি দেশিয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও এবং জাতিসংঘ সংস্থা কক্সবাজারে বাস্তুচ্যুত মিয়ানমার নাগরিকদের ক্যাম্পগুলোতে কাজ করছে। সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা আমাদের নিজস্ব সম্পদ থেকে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়, চিকিৎসাসেবা ও অন্যান্য মৌলিক সেবা দিয়ে যাচ্ছি। আসন্ন বর্ষা ও সাইক্লোন মৌসুমের জন্য আমরা প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নিচ্ছি।
তিনি আরও বলেন, সরকার পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারী প্রায় ১ লাখ রোহিঙ্গাকে ‘ভাসানচর’ নামে একটি নিরাপদ দ্বীপে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই স্থান বসবাসের উপযোগী ও নিরাপদ। সেখানে প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় পর্যাপ্ত সুরক্ষা থাকবে, বসবাসের পরিবেশ উন্নত হবে ও জীবিকার সুযোগ থাকবে। আমরা সেখানে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রও নির্মাণ করছি।
Share this content: