জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

মুনিয়ার প্রেম-সম্পর্ক-মরদেহ উদ্ধার, যা বললেন বোন

এবিএনএ : গুলশান-২ এর একটি ফ্ল্যাট থেকে গতকাল সোমবার উদ্ধার মোসারাত জাহানের (মুনিয়া) মরদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) মর্গে পাঠিয়েছে পুলিশ। এদিকে বোনের লাশ উদ্ধার, প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন মুনিয়ার বড় বোন নুসরাত জাহান। তার আগে বোনের নিহতের ঘটনায় বাদী হয়ে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন নুসরাত। আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগে বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে মামলায় আসামি করেন তিনি। এক ভিডিও সাক্ষাতকারে ছোটবোন মুনিয়ার প্রেম-সম্পর্ক-মরদেহ উদ্ধারের বিষয়গুলো ছাড়াও বোনের সঙ্গে তার শেষ কথোপকথনের বিষয়গুলোও তুলে ধরেছেন।

অভিনেতা বাপ্পির সঙ্গে মুনিয়ার সম্পর্ক নিয়ে গুঞ্জন:
ছোট বোন মুনিয়ার সঙ্গে ঢাকাই চলচ্চিত্রের অভিনেতা বাপ্পির প্রেমের যে সম্পর্ক ছিল, তা নিয়ে নুসরাত বলেন, ‘এগুলো কেউ রটাচ্ছে, মিথ্যা কোনো কথা। পরিচয় মানুষের থাকতেই পারে, আপনার সাথে আমার থাকতে পারে, আরেকজনের সাথে থাকতে পারে। এর মানে হচ্ছে এটা না। আমার কথা হচ্ছে আমার বোন চলে গেছে এখন ওর চরিত্র নিয়ে অনেক কিছু আসবে আমি এটা জানি। আমার বোন মারা গেছে, আমার সন্তান মারা গেছে। এখানে তার চরিত্র কি ছিল, তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। প্রমাণ করুক কেউ, ওর চরিত্র খারাপ ছিল। ও মরে গেছে। এ রমজান মাসে ওরে মাইরা ফেলছে, না হয় মরে গেছে, না হয় বাধ্য করছে। যেটাই করুক ওইটারই বিচার চাই। যেই করেছে আমি চাই বিচার হোক। আমি আপনাদের মাধ্যমে সরকারকে বলতে চাই।’

মুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি নুসরাত:
বড় বোন হয়েও ছোট বোনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি নুসরাত। এ ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘দুই মাস আগে আমার সাথে বাকবিতণ্ডা হয়। আমি পাঁচদিন কথাও বলি নাই। সে ঢাকায় যাবে, সে বাসা নেবে। ইন্টার পরীক্ষাও দিবে আমাকে খুশি করতে বলছে। আনভীর ওকে বিয়েও করবে। বলতেছে আপু এটা কাউকে বলা যাবে না, আনভীর নিষেধ করছে। আমি বলছি এটাতো আমি রাজি না, এটা হয় না। এটা কীভাবে হবে? বলে যে না কিছুদিন গোপন রাখতে হবে বলছে, বিয়ে করে। বিয়ে করে পরে বাইরে নিয়ে স্যাটেল করবে। আমি পারিনি… আনভীরকে সে অনেক ভালোবাসতো।’

অডিও রেকর্ডিংয়ের ব্যাপারে নুসরাত যা বললেন:
একটি অডিও রেকর্ডে ৫০ লাখ টাকা বিষয়ে দুইজনের কথোপকথন শোনা যায়। মুনিয়া কোনো টাকা নিয়েছিল কিনা জানতে চাইলে বড় বোন বলেন, ‘মুনিয়া টাকা নিয়েছিল কিনা টাকার এটা আমরা শুনার পর ধারণা করেছি, বিয়ের কথা আসায় আনভীর এমন ব্লেম দিয়েছে। যেন সে চলে আসে। এটা হতে পারে, তবে আমার বোন টাকা নেয়নি। সে আনভীরকে ভালোবাসতো। তাকে ফুঁসলিয়ে নেওয়া হয়েছে।’

আমি নাকি আনভীরকে ফাঁসাতে মুনিয়াকে ব্যবহার করেছি- এ কথা উল্লেখ করে নুসরাত জাহান বলেন, ‘আমায় একটা নাম্বার থেকে ফোন করে টাকার জন্য। আমাকে অনেক নোংরা কথা বলেছে। আমি নাকি ওরে দিয়া ব্যবসা…। ফোনে বলে এখন মিডিয়া করতেছি, কথা বলতেছি এগুলো টাকা নেওয়ার জন্য করতেছি। বোনকে দিয়ে বিজনেস করানোর জন্য আনভীরকে ফাঁসাচ্ছি। এরপর ফোন কেটে দিছি।’

মুনিয়ার আত্মহত্যা নিয়ে সন্দেহ:
ছোট বোনের আত্মহত্যা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে নুসরাত বলেন, ‘আমার মনে হচ্ছে হত্যা। ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাজি ছিল। তাহাজ্জত পড়তো, পাঁচ ওয়াক্ত যে নামাজ পড়ে সে কীভাবে সুইসাইড করে? যদি সুইসাইড করেও থাকে এমন কিছু অপমানজনক করা হয়েছে যা সে নিতে পারেনাই। এখানে অনেক সিন্ড্রোম ছিল যে মার্ডার করা হয়েছে। আমার মনে হয় না, সে সুইসাইড করতে পারে। আমরা তো ঝুলন্ত পেয়ে আত্মহত্যা ভাবছি। পরে মাথায় আসলো একটা মানুষ যদি ঝুলে যায়, তা পা ছটফট করে তাহলে একটা সিট সাজনো ছিল। সিটটা নিচে পড়ে যাওয়ার কথা।’

তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ সেন্স আর কি যেটা ওই সময় আমার হিতাহিত জ্ঞানে আসে নাই। যেটা আমি পরে ভেবেছি। সব পরিপাটি ছিল যেটা আমি ও পুলিশ অবজার্ভ করেছি। পুলিশও শতভাগ বলতে পারবে না যে এটা সুইসাইড ছিল। ওনারা এ রকম অনেক কেস ডিল করেন, আমার চেয়ে ওনারা বেশি অভিজ্ঞ। হয়তো তাকে মেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।’

ঘটনার দিনের ব্যাপারে নুসরাত যা বলেছেন:
আত্মহত্যার দিন সকালে বিপদের আভাস দিয়েছিলেন মুনিয়া- একথা উল্লেখ করে নুসরাত জানান বলেন, ‘সোমবারে সকাল বেলায় কথা হয়েছে লাস্ট। সোমবার যে কথা হয়েছে, আমাকে ফোন করে, ওর ফোনের কান্নায় আমার ঘুম ভাঙে, ও ফোন দিয়া বলে আমাকে ধোকা দিয়েছে, আপু আনভীর আমাকে ধোকা দিছে। সে আমায় বলে আপু আমি অনেক বিপদে আছি, অনেক বিপদে আছি তুমি তাড়াতাড়ি বাসায় আসো। আমি তাকে বুঝাই, বলি তুমি একটু রেডি হও, তোমাকে আপু এসে নিয়ে যাচ্ছি। কুমিল্লা নিয়া আসব, পরে বলে যে আমি তো তোমার সাথে অভিমান করে চলে আসছি, এখন কীভাবে আসব। ওর লজ্জা কাজ করছিল তো আমি ওকে নরমাল করি। ১১টার দিকে সে আমায় কল করে বলে আপু আমার অনেক বিপদ তুমি কখন আসবা যেকোনো সময় কিছু একটা হয়ে যাবে আপু।’

তিনি আরও বলেন, ‘যাওয়ার পর ওরে অনেকবার কল করেছি ও ধরেনি। সেখানে গিয়াও ওরে যখন পাচ্ছিলাম না তখন বাসার মালিকের ওয়াইফকে কল করি। সে জানায় এক্সট্রা কোনো চাবি নাই। পরে মালিক আমাকে পরামর্শ দেন মিস্ত্রি এনে তালা ভাঙার। যখন তালা ভাঙতেছি তখনো ওর কোনো আলাপ না দেখে আমরা ভয় পাই। ও কোনো রেসপন্স করতেছে না, আমরা ভয় পাচ্ছি কি হচ্ছে কি হচ্ছে, তালা ভেঙে দেখি ও ঝুলন্ত। এরপর পুলিশকে কল করি, ইফতারের পর পুলিশ আসে।’

নুসরাত বলেন, ‘পুলিশ আসলে উপরে যাই, যাওয়ার পর দেখলাম ও ঝুলন্ত অবস্থায় আছে কিন্তু তার পা বিছানায়। পা দুটা হালকা বিছানায় বাঁকা। বিছানা খুব পরিপাটি ছিল, বিছানায় যদি সেই শুইতো বা উঠে দাঁড়াতো একটু সিন্ড্রম, মানে খুব পরিপাটি ছিল। একটা সিট ছিল সেটাও পরিপাটি ছিল। পরে পুলিশ ওরে নিচে নামায়।’

মুনিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় পুলিশ সহযোহিতা করেছিল কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে নুসরাত বলেন, ‘পুলিশ আমাকে সহযোগিতা করতে বাধ্য ছিল। সব কিছু প্রমাণ ছিল ওই বাসায়। আমার বোনের সাথে ছবি, ও প্রতিনিয়ত ওই বাসায় যেত। তাকে নিয়ে অগণিত লেখা, ছবি আঁকতো, সব কিছু হাতে। তার মোবাইলে অনেক কিছু আছে, যা পুলিশের কাছে। ডায়েরিতে সব লিখেছে কী কী করছে।’

এ ছাড়া নুসরাত আরও বলেন, ‘আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। অনেক সৎ ছিলেন। আমাদের শহরের সবাই জানে ওনারা কেমন ছিলেন। ওনারা নেই, ওনাদের সন্তান, এতিম একটা মেয়ে। তার সাথে যা হয়েছে। আমি তার সুষ্ঠু বিচার চাই। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে বিচার চাই। বাংলাদেশের সবকিছুর ঊর্ধে তিনি, তার কাছে আমার সন্তানের মতো বোনের অপমৃত্যুর বিচার চাই। সে হয়তো অনেক বড় কিছু… তাই বলে কি বিচার পাবো না (কান্না)? আমার মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে কোনো কিছু চাওয়ার নাই এটা ছাড়া।’

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button