আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

ব্রুনাইতে ‘কঠোর’ শরীয়া আইন চালুর ঘোষণা

এবিএনএ: ব্রুনাই সরকার নতুন ইসলামি শরীয়া ভিত্তিক আইন করতে যাচ্ছে, যেখানে সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্ক, ধর্ষণ, মোহাম্মদ (সা.) কে অবমাননার মতো অপরাধের শাস্তি হবে মৃত্যুদণ্ড। নতুন শরীয়া আইনে চুরির শাস্তি হিসেবে অঙ্গচ্ছেদের বিধান থাকছে। নতুন আইন অনুযায়ী ধর্ষণ, ব্যভিচার, ব্যবচ্ছেদ, ডাকাতি এবং নবী মোহাম্মদ (সা.) এর প্রতি অবমাননা ও মানহানিকে মৃত্যুদণ্ডযোগ্য করা হয়েছে। আর গর্ভপাতের জন্য শাস্তি হবে চুরির মতো অঙ্গচ্ছেদ।

১৮ বছরের কম বয়সী মুসলমান শিশুদের ‘ইসলাম ছাড়া অন্য ধর্মের শিক্ষা গ্রহণের’ জন্য “প্ররোচিত বা উত্সাহিত’ করাটাকে অপরাধমূলক দণ্ড হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। আইন বেশিরভাগ মুসলমানদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, যদিও কিছু দিক অমুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে। বুধবার এই সিদ্ধান্তের পর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ব্রুনাই এর সুলতান হাসান আল-বলখাই বুধবার জাতির উদ্দেশ্যে এক ভাষণ দেন। তিনি বলেন, আমি ইসলামিক শিক্ষাকে এই দেশে শক্তিশালী করতে চাই।

নতুন আইন অনুযায়ী সমলিঙ্গের মধ্যে যৌন সম্পর্কের শাস্তির জন্য চারজন প্রত্যক্ষদর্শী সাক্ষীর প্রয়োজন হবে। দেশটিতে আগেই সমকামিতাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করা হয়েছে। বর্তমানে সমকামিতার জন্য শাস্তি রয়েছে ১০ বছরের কারাদণ্ড। ব্রুনাই এর সমকামী গোষ্ঠী এমন ঘোষণায় হতাশ ও ভীত। তারা এমন শাস্তিকে ‘মধ্যযুগীয় শাস্তি’ বলে অভিহিত করেছে।

সুলতান শাসিত দ্বীপ রাষ্ট্র ব্রুনাই বর্তমানে অর্থনৈতিকভাবে বেশ সমৃদ্ধ। তারা বিপুল পরিমান তেল ও গ্যাস রপ্তানি করে থাকে। সুলতান এর বয়স বর্তমানে ৭২ বছর। যিনি ব্রুনাই এর বিনিয়োগ সংস্থার প্রধান। বিশ্বের কিছু শীর্ষ হোটেলের মালিক তিনি। যার মধ্যে রয়েছে লন্ডনের ডর্চেস্টার হোটেল ও লস অ্যাঞ্জেলসের বিবিয়ারলি হিলস হোটেল। দেশটির এমন ঘোষণার পর হলিউড তারকা জর্জ ক্লুনিসহ অনেক তারকা বিলাসবহুল এসব হোটেল বয়কটের ঘোষণা দিয়েছেন। লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল ও আফ্রিকান স্টাডিজের বিল্ডিং ব্রুনাই গ্যালারির নাম পরিবর্তনের দাবি জানিয়েছে শিক্ষার্থীরা।

চার লাখ ২০ হাজার জনসংখ্যার এই দেশে মুসলমান রয়েছে দুই তৃতীয়াংশের মতো। ব্রুনেইতে মৃত্যুদণ্ড থাকলেও ১৯৫৭ সালের পর তা দণ্ড হিসেবে কার্যকর করা হয়নি। দেশটি প্রথম শরীয়া আইন চালু করে ২০১৪ সালে। তখন সাধারণ ও শরীয়া দু’ধরনের আইনই বহাল রাখা হয়। এখন আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই নতুন এই দণ্ডবিধি কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছেন সুলতান। প্রথম দফায় কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের মতো শাস্তি সমূহ ২০১৪ সাল থেকে চালু করা হয়। তখন অঙ্গচ্ছেদ ও পাথর নিক্ষেপের মতো আইনগুলো পরবর্তী দুই ধাপে কার্যকর করার কথা বলা হয়েছিল।

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এর একজন কর্মকর্তা বলেন, যখন এ ধরনের বিধান করা হয়েছিল ৫ বছর আগে তখনই অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ব্রুনাই এর এই আইন সম্পূর্ণরূপে মানবাধিকার পরিপন্থি। এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ এই আইনকে ‘নিষ্ঠুর, অমানবিক ও পশ্চাৎপদ’ হিসেবে অভিহিত করেছে। এটাকে মানবাধিকারের ‘গুরুতর লঙ্ঘন’ বলেও অভিহিত করেছে সংস্থাটি।

Share this content:

Back to top button