জাতীয়ধর্মবাংলাদেশলিড নিউজ

বিজয়া দশমী আজ, বাজছে বিদায়ের সুর

এবিএনএ : প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে আজ শনিবার শেষ হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গোৎসবের চতুর্থ দিন গতকাল শুক্রবার মহানবমীর সন্ধ্যায় আরতি শেষে দেবীর বন্দনায় প্রতিটি পূজামণ্ডপে বিষাদের সুর বাজতে শুরু করে।

আজ মা দুর্গার বিদায়
মহানবমীতে গতকাল পূজা শুরু হয় সকাল সাড়ে ৬টায়। সন্ধ্যায় অনুষ্ঠিত হয় আরতি প্রতিযোগিতা। দিনভর চলেছে চণ্ডীপাঠ আর ভক্তদের কীর্তনবন্দনা। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মহানবমীতে বিভিন্ন মন্দির ও মণ্ডপে ছিল ভক্ত ও দর্শনার্থীর উপচে পড়া ভিড়। নবমী পূজা শেষে অশ্রুসজল নয়নে ভক্তরা দুর্গতিনাশিনী দেবী দুর্গার পায়ে অঞ্জলি দিয়েছে।

হিন্দু শাস্ত্র মতে, নবমী তিথিতে রাবণ বধের পর শ্রী রামচন্দ্র এই পূজা করেছিলেন। নীলকণ্ঠ ফুল, যজ্ঞের মাধ্যমে অনুষ্ঠিত হয় নবমী বিহিত পূজা। নবমী পূজার মাধ্যমে মানবকুলে সম্পদলাভ হয়।

শাস্ত্র অনুযায়ী গতকাল শাপলা, শালুক ও বলিদানের মাধ্যমে দশভুজা দেবীর পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

পূজা শুরুর পর ভক্তরা প্রার্থনা করতে থাকে দেবীর উদ্দেশে। নীল অপরাজিতা ফুল নবমী পূজার বিশেষ অনুষঙ্গ। নবমী পূজায় যজ্ঞের মাধ্যমে দেবী দুর্গার কাছে আহুতি দেওয়া হয়। ১০৮টি বেল পাতা, আম কাঠ, ঘি দিয়ে এই যজ্ঞ করা হয়। পূজা শেষে যথারীতি অঞ্জলি, প্রসাদ বিতরণ পর্ব অনুষ্ঠিত হয়।

আজ মা দুর্গার বিদায়। তাই গতকাল শেষবারের মতো দেবীর আশীর্বাদ কামনায় নারী, পুরুষ, শিশু-কিশোর সব বয়সের ভক্ত নিবিষ্ট মনে প্রার্থনা করে। প্রতিটি মণ্ডপেই কয়েক দফা করে পুষ্পাঞ্জলি দেওয়া হয়। বিদায়বেলায়ও চলেছে ঢাক আর শঙ্খধ্বনি, টানা মন্ত্র পাঠ, উলুধ্বনি, অঞ্জলি, ঢাকের বাজনার সঙ্গে ছিল ধুনচি নৃত্য। সন্ধ্যায় আরতির পাশাপাশি মণ্ডপে মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হয়েছে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

অষ্টমীর রাত থেকে শুরু হয়ে নবমীর সারা দিনই কম-বেশি বৃষ্টি ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মণ্ডপে মণ্ডপে ছিল ভক্ত ও দশনার্থীর ভিড়। শুক্রবার সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় ঢাকেশ্বরী ও রামকৃষ্ণ মন্দিরের পাশাপাশি রাজধানীর রমনা কালীমন্দির, বনানী পূজামণ্ডপ, সিদ্ধেশ্বরী মন্দির, স্বামীবাগ লোকনাথ ব্রহ্মচারী আশ্রম, ধানমণ্ডি কলাবাগান মাঠ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, বাংলাবাজার পূজা কমিটি, নর্থব্রুক হল রোড, প্রতিদ্বন্দ্বী, তাঁতীবাজার পূজা কমিটি, শঙ্ঘমিত্র শাঁখারীবাজার, পানিটোলা, বরদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান কমিটি, হাজারীবাগ সুইপার কলোনি, গৌতম মন্দির, ভোলাগিরি আশ্রম, রাধাবল্লভ জিউ বিগ্রহ মন্দির, বৃহত্তর মিরপুর সর্বজনীন পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ, বাসাবো বালুর মাঠের আয়োজনে ভিড় ছিল বেশি। এই ভিড় সামলাতে পুলিশ-র‌্যাবসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনীর তৎপরতা লক্ষ করা গেছে।

বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, আজ সকাল সাড়ে ৭টায় রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে দশমী পূজা শুরু হবে। সকাল ৯টা ৫১ মিনিটের মধ্যে পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন করা হবে। সন্ধ্যায় প্রতিমা বিসর্জন ও শান্তিজল গ্রহণ। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির প্রাঙ্গণ থেকে বিকেল ৩টায় বিজয়া শোভাযাত্রা বের হবে, যা শহরের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করবে। এরপর প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে।

সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় দেবী দুর্গা এবার মর্তলোকে (পৃথিবী) আসেন নৌকায় চড়ে; যার ফল হচ্ছে অতি বৃষ্টি ও শস্য বৃদ্ধি। আর মা দুর্গা স্বর্গলোকে বিদায় নেবেন ঘোটকে (ঘোড়া) চড়ে, যার ফল হচ্ছে রোগ-ব্যধি বাড়বে ও ফসল নষ্ট হবে। তবে এ প্রসঙ্গে ঢাকা রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ বলেন, ফলাফল যাই হোক মা মঙ্গলময়ী, আনন্দময়ী। তিনি জগতের কল্যাণ করেন। তিনি সন্তানের কল্যাণই করবেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা উপলক্ষে আজ সরকারি ছুটির দিন। দিনটি উপলক্ষে বাংলাদেশ বেতার, বাংলাদেশ টেলিভিশনের পাশাপাশি বেসরকারি টিভি চ্যানেল ও রেডিও বিশেষ অনুষ্ঠানমালা সম্প্রচার করবে। তা ছাড়া জাতীয় দৈনিকগুলোতেও থাকবে বিশেষ নিবন্ধ।

সারা দেশে এবার পূজামণ্ডপের সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৭। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৩৯৫। গতবারের চেয়ে এবার ৬৮২টি বেশি মণ্ডপ হয়েছে। রাজধানী ঢাকায় এবার পূজা হচ্ছে ২৩১টি মণ্ডপে, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২২৯। এবার সবচেয়ে বেশি পূজামণ্ডপ হয়েছে চট্টগ্রামে। সেখানে এক হাজার ৭৬৭টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে। এর পরে দিনাজপুরে এক হাজার ২৪২টি এবং গোপালগঞ্জে এক হাজার ১৭৫টি মণ্ডপে পূজা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা নিশ্চিত করেছেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button