জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

‘বালিশকাণ্ডে’ ৩৪ জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

এবিএনএ : আলোচিত রূপপুরের গ্রিন সিটি আবাসন প্রকল্পে অনিয়মের ঘটনায় ৩৪ জনকে দায়ী করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। এরমধ্যে চারজন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি  মন্ত্রণালয়ের। বাকি ৩০ জন গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অধীনে। এই ঘটনায় যুক্ত গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের ১৬ জনকে বরখাস্ত করে বিভাগীয় মামলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। বুধবার সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনেকক্ষে গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী  শ. ম রেজাউল করিম সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারদের কালো তালিকাভুক্ত করার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান মন্ত্রী।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের গ্রিনসিটি প্রকল্পের ২০ ও ১৬ তলা ভবনের ১১০টি ফ্ল্যাটের জন্য অস্বাভাবিক মূল্যে আসবাবপত্র কেনা ও তা ভবনে উঠানোর খরচ দেখানোর ঘটনা ঘটে।গত ১৬ মে পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের থাকার জন্য গ্রিন সিটি আবাসন পল্লীতে ২০ তলা ১১টি ও ১৬ তলা আটটি ভবন হচ্ছে। এরই মধ্যে ২০ তলা আটটি ও ১৬ তলা একটি ভবন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। প্রতিটি ফ্ল্যাটের জন্য একটি বৈদ্যুতিক চুলার দাম ধরা হয়েছে সাত হাজার ৭৪৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ছয় হাজার ৬৫০ টাকা, একটি বালিশের দাম ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৯৫৭ টাকা এবং তা ভবনে তুলতে খরচ ধরা হয়েছে ৭৩০ টাকা। একটি বৈদ্যুতিক কেটলির দাম পাঁচ হাজার ৩১৩ টাকা যা তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে দুই হাজার ৯৪৫ টাকা। একটি টিভির দাম ধরা হয়েছে ৮৬ হাজার ৯৭০ টাকা তা ভবনে তুলতে খরচ দেখানো হয়েছে সাত হাজার ৬৩৮ টাকা, এই টিভি রাখার কেবিনেটের দাম ধরা হয়েছে ৫২ হাজার ৩৭৮ টাকা। বিভিন্ন আসবাব কেনা ও উঠানোর ক্ষেত্রে দুর্নীতির চিত্র ফুটে উঠলেও এটি ‘বালিশকাণ্ড’ হিসেবে পরিচিতি পায়।

সংবাদ সম্মেলনে গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুরের গ্রিন সিটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন ২০ ও ১৬ তলা ভবনের আসবাবপত্র ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী ক্রয়ে ও ভবনে ওঠানোর অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পেরে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছি। কমিটির তদন্ত পরিসরের ব্যাপ্তি করে দিয়ে বলেছি অন্যায়ভাবে কোনো নির্দোষ কর্মকর্তা-কর্মচারী বা সংশ্লিষ্ট কেউ যেন অভিযুক্ত না হয়। পাশাপাশি বলেছি যত বড় ক্ষমতাসম্পন্ন বা দায়িত্বশীল পদে থাকা ব্যক্তি হোন না কেন তার দায়ভার পেলে তাকে যেন অনুকম্পা দেখানো না হয়।’

মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞান প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত চারজনের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেবে। আমাদের মন্ত্রণালয়ের অধীনস্তদের মধ্যে অবসরে যাওয়া একজন ও এলপিআরএলে থাকা তিনজনের ব্যাপারে ভিন্ন রকম আইনগত ব্যবস্থা হবে। যারা চাকরিতে আছেন তাদের মধ্যে ১৬ জনকে গুরুতর অভিযোগে সাময়িক বরখাস্ত ও বিভাগীয় মামলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গণপূর্তমন্ত্রী বলেন, ‘এ ঘটনায় সম্পৃক্ত যে তিনটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান, তারা ৩৬ কোটি  ৪০ লাখ নয় হাজার টাকা অতিরিক্ত বিল নিয়েছেন, তা উদ্ধারে ব্যবস্থা নিয়েছি। তাদের পেন্ডিং কিছু বিল আছে অন্য কাজে, সেখান থেকে এই টাকা কেটে রাখব। তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যায় করলে ব্যবসা করা  যাবে না। তাদের লাইসেন্স ব্লাকলিস্ট করা হবে।’ গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই সিদ্ধান্ত দুর্নীতিকে না বলার জন্য জিরো টলারেন্সের ক্ষেত্রে একটি উল্লেখযোগ্য সিদ্ধান্ত। যারা অনিয়মে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন তাদের জন্য এটা একটা বার্তা যে, দায়িত্বশীল পদে থেকে রাষ্ট্রের অর্থের অপব্যবহার বা নিজের সুবিধা নেয়া বা কাউকে পাইয়ে দেয়ার ঘটনাকে কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না।’

মন্ত্রী বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স কালো তালিকাভুক্ত করাসহ অন্যান্য পদ্ধতিতে আমরা অগ্রসর হব।; তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের কথা বলেছেন। সরকারের অংশ হিসেবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য কাজ করছি। যেখানেই অনিয়ম-দুর্নীতি, তার বিরুদ্ধেই আমাদের কঠোর অবস্থান। আমরা চাই দেশে উন্নয়নের গতিকে ধ্বংস করার ভয়াবহ ব্যাধি দুর্নীতি যেন না থাকে। এ লক্ষ্যে আমাদের মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’

প্রায়ই অভিযোগ উঠে তদন্ত আলোর মুখ দেখে না- এ বিষয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের গৃহীত ব্যবস্থা সব মানুষ জানবে এবং অপরাধীদের কোনোরকম ছাড় দেয়ার সুযোগ নেই।’ গণমাধ্যমের কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা সোচ্চার হয়েছেন বিধায় এত গভীরে খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব হয়েছে। আমার মন্ত্রিত্বকালীন আমি সব গণমাধ্যমের সহযোগিতা পাচ্ছি।’

সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মন্ত্রী বলেন, ‘টেন্ডারসংক্রান্ত সব অনিয়ম আমরা খতিয়ে দেখবো। আমাদের দৃষ্টিতে এলে যেকোনো অনিয়মের বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নেব। গণমাধ্যম অনেক শক্তিশালী। আপনারা আমাদেরকে সাহায্য করতে পারেন। কোথাও কোনো অনিয়ম থাকলে আমাদেরকে জানার সুযোগ করে দিন। রাষ্ট্রের অংশ হিসেবে অনিয়মের বিষয়ে আমাদেরকে জানানো সাংবাদিকদের কর্তব্য। আমরা এখন পর্যন্ত পাওয়া অভিযোগের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, ভবিষ্যতেও নেব।’

Share this content:

Back to top button