
এবিএনএ : বিশ্বের বৃহত্তম বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের প্রতিষ্ঠাতা স্যার ফজলে হাসান আবেদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার বনানীর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে স্ত্রীর কবরে শায়িত হলেন বিশ্ববরেণ্য এই উন্নয়ন-রূপকার। বনানী কবরস্থানের এ ব্লকের ১৫ রোডে স্ত্রী আয়শা আবেদের কবরে রবিবার দুপুর দেড়টার কিছু সময় পর ফজলে হাসান আবেদকে সমাহিত করা হয়। এর আগে বেলা ১২টা ৪৫ মিনিটে আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা হয় আবেদের। সকাল দশটা থেকে তার মরদেহে শেষ শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের ঢল নামে।
শুরুতেই রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়। রাষ্ট্রপতির পক্ষে মেজর আশিকুর রহমান এবং প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে উপ-সামরিক সচিব কর্নেল মো. সাইফুল্লাহ শ্রদ্ধা জানান। এরপর জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী স্যার ফজলে হাসান আবেদকে শ্রদ্ধা জানান। এরপর ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী মিয়া, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এরপর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। আর্মি স্টেডিয়ামে ফজলে হাসান আবেদকে শ্রদ্ধা জানান নোবেলজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনুসও। এসময় তিনি কান্নায় ভেঙে পড়েন। পরে বিভিন্ন পোশার মানুষজন এই গুণীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান। দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত চলে শ্রদ্ধা নিবেদন। পরে লাশবাহী গাড়ি রওনা হয় বনানী কবরস্থানের দিকে। সেখানে সকাল থেকে ৭ জন কবর খোঁড়ার কাজ করেন। পরে ফজলে হাসান আবেদকে সমাহিত করা হয়। ফজলে হাসান আবেদ ৮৩ বছর বয়সে গত শুক্রবার রাত ৮টা ২৮ মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে ইন্তেকাল করেন। তিনি মস্তিষ্কে টিউমারে আক্রান্ত হয়ে ২৮ নভেম্বর থেকে ওই হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন।
১৯৩৬ সালের ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচং গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন ফজলে হাসান আবেদ। পাবনা জেলা স্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন এবং ঢাকা কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ব্রিটেনের গ্লাসগো বিশ্ববিদ্যালয়ে নেভাল আর্কিটেকচারে ভর্তি হয়েছিলেন। পরে সে বিষয়ে পড়া বাদ দিয়ে তিনি লন্ডনের চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউনট্যান্টসে ভর্তি হন। ১৯৬২ সালে তিনি তার প্রফেশনাল কোর্স সম্পন্ন করেন। দেশে ফিরে ১৯৭২ সালে ব্র্যাক প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠার পর তা বর্তমানে বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থায় পরিণত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের কয়েক কোটি মানুষ ব্র্যাকের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে জড়িত।
কর্মজীবনে তিনি ১৯৮০ সালে র্যামন ম্যাগসাইসাই পুরস্কার, ২০১১ সালে ওয়াইজ প্রাইজ অব এডুকেশন, ২০১৪ সালে লিও টলস্টয় ইন্টারন্যাশনাল গোল্ড মেডেল, স্প্যানিশ অর্ডার অব সিভিল ম্যারিট, ২০১৫ সালে বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি পুরস্কারসহ বিশ্বের প্রথমসারির বেশ কয়েকটি পুরস্কার অর্জন করেন। সর্বশেষ চলতি বছর তিনি সিঙ্গাপুর ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে দক্ষিণ এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে সাউথ এশিয়ান ডায়াসপোরা অ্যাওয়ার্ড, শিক্ষায় ভূমিকা রাখায় ইয়াডান পুরস্কারের জন্য মনোনীত হন।
Share this content: