জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

প্রশ্ন ফাঁস রহস্য উন্মোচনের দাবি পুলিশের

এবিএনএ : প্রশ্ন ফাঁস রহস্যের কূল কিনারা করার দাবি করেছে পুলিশ। তাদের দাবি, পরীক্ষার হলে প্রশ্ন পাঠানোর সময় একটি পক্ষ প্রশ্নের ছবি তুলে চক্রটির কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর পরীক্ষার আগের রাতে যেসব প্রশ্ন সামাজিক মাধ্যমে আসে, সেগুলো ভুয়া। সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন ছড়িয়ে দেয়ায় যারা কাজ করেন তাদের ১৪ জনকে আটকের কথা জানিয়েছে পুলিশ। তবে তাদের কাছে যারা প্রশ্ন পাঠায়, তাদেরকে এখনো ধরতে বা শনাক্ত করতে পারেনি বাহিনীটি। গত ১ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হওয়া এসএসসির প্রতিটি পরীক্ষা শুরুর আগে প্রশ্ন এসেছে সামাজিক মাধ্যমে। তবে এসব প্রশ্ন পাওয়া গেছে সকালে। এ কারণেই সন্দেহ ছিল কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোর সময় কোনো সুযোগে কেউ সেগুলো সামাজিক মাধ্যমে তুলে দিচ্ছে কি না। কারণ, প্রশ্ন এর আগে ফাঁস হলে সেগুলো প্রচারও করা হতো আগে। গত ৪ ফেব্রুয়ারি প্রশ্ন ফাঁসকারীদেরকে ধরিয়ে দিলে পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হাতেনাতে ধরা পড়েছে পরীক্ষার্থী, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র, স্কুল শিক্ষক, মাদ্রাসা শিক্ষক, কলেজ ছাত্র, অভিভাবক এমনকি ব্যাংকার। তাদেরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পুরো চক্রটিকে ধরার চেষ্টা চলছে।

এই অবস্থায় শনিবার দিবাগত রাতে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উত্তর বিভাগের অভিযানে গ্রেপ্তার ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এসব তথ্য পাওয়ার দাবি করেছে বাহিনীটি। এদের বিষয়ে জানতে রবিবার দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন আসার প্রক্রিয়া তুলে ধরেন ডিএমপির গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন। গত রাতে যে ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে, তারা হলেন রাহাত ইসলাম, মো. সালাহউদ্দিন, মো. সুজন, জাহিদ হোসেন, সুফল রায় ওরফে শাওন, আল-আমিন, সাইদুল ইসলাম, আবির ইসলাম নোমান, আমান উল্লাহ, বরকত উল্লাহ্, আহসান উল্লাহ্, শাহাদাৎ হোসেন ওরফে স্বপন, ফাহিম ইসলাম এবং তাহসিব রহমান। এদের মধ্যে আমান উল্লাহ, আহসান উল্লাহ্ এবং বরকত উল্লাহ তিন ভাই। ফেসবুকে যারা প্রশ্ন দেয়ার ‘বিজ্ঞাপন’ প্রচার করতেন, তাদের মধ্যে এই তিনজন আছেন বলে দাবি পুলিশের। এই তিনজনের মধ্যে আহসান সিরাজুল ইসলাম মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী।

আটকদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর পুলিশ কর্মকর্তা আবদুল বাতেন বলেন, ‘আসামিরা পরীক্ষার আগের দিন ফেসবুকে ভুয়া প্রশ্নপত্র দিয়ে শিক্ষার্থীদের আস্থা অর্জন করে। পরদিন পরীক্ষা শুরুর ৩০-৪০ মিনিট আগে কেন্দ্র থেকে বিভিন্নভাবে প্রশ্ন সংগ্রহ করে। সেগুলো ফেসবুক ম্যাসেঞ্জার, ইমো এবং হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে ছড়িয়ে দেয়া হয়। এর বিনিময়ে তারা বিকাশ ও রকেটের মাধ্যমে একেকজনের কাছ থেকে ৫০০ থেকে দুই হাজার টাকা করে আদায় করে।’

কাদের মাধ্যমে এরা প্রশ্ন পায়-এমন প্রশ্নে ডিবি কর্মকর্তা বাতেন বলেন, ‘প্রশ্ন যখন পরীক্ষার হলে পাঠানো হয়, তখন ওই সময়টাতে কেউ এর ছবি তুলে আসামিদের পাঠায়। এই সময়টা পরীক্ষার ৩০-৪০ মিনিট আগে।’ কিন্তু এর আগেও তো সামাজিক মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণ মিলেছে- একজন গণমাধ্যম কর্মীর এমন এমন প্রশ্নে বাতেন বলেন, ‘সেগুলো ভুয়া প্রশ্ন।’ কিন্তু গণিত প্রশ্ন ফেসবুকে এসেছে সকাল ৮ টা ৩০ মিনিটে। এত সকালে কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোর তো কথা না। তাহলে এই প্রশ্ন কীভাবে এলো- এমন প্রশ্নে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’

পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠানোর সময় কারা প্রশ্নের ছবি তুলে তা ফাঁস করছে- এমন প্রশ্নে বাতেন বলেন, ‘কারা এই চক্রের সঙ্গে জড়িত তাদের কাছে যাওয়া খুব কঠিন।’ জিজ্ঞাসাবাদে আটকরা কারও নাম জানিয়েছে কি না- এমন প্রশ্নে গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, ‘ওরা শত শত হাজার হাজার চেইন। কখনো চট্টগ্রাম থেকে প্রশ্ন পাঠানো হয়, কখনো আরেক জেলা থেকে। তাদের শনাক্ত করা কঠিন।’

প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় শিক্ষা বোর্ড বা মন্ত্রণালয়ের কারও সংশ্লিষ্টতা এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়। এবার প্রশ্ন ফাঁস রোধে পরীক্ষার্থী এবং কেন্দ্রে কাজ করা শিক্ষক-কর্মচারীদের মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ডিবি কর্মকর্তা বাতেন মনে করেন, কেন্দ্রে প্রশ্ন পাঠানোয় যাদের দায়িত্ব দেয়া হয়, তাদেরও মোবাইল ফোন নিষিদ্ধ করা উচিত। তাহলে সুফল পাওয়া যেতে পারে।

Share this content:

Related Articles

Back to top button