আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

নারীর স্তন নিয়ে গল্প ও ছবি প্রকাশ করছেন ভারতীয় শিল্পী

এবিএনএ: নারীদের স্তন ও জীবনের গল্প নিয়ে সম্প্রতি ভারতীয় শিল্পী ইন্দু হরিকুমার ইনস্টাগ্রামে ছবি প্রকাশ করছেন। ছবি প্রকাশ করার পরেই দেশটিতে ব্যাপক সাড়া ফেলেছে নারীদের মধ্যে। দৈনিন্দিন জীবনে নারীদের চলার ক্ষেত্রে যৌন হেনস্তা এবং তাদের জীবনের নানা ঘটনার পেছনে পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন, কোন দৃষ্টিতে পুরুষরা নারীদের দেখেন, আর নারীরাই বা তাদের দৈহিক গঠনের গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে কী ভাবেন।

ইন্দু কুমারের সমীক্ষায় নারীর দৃষ্টিতে পুরুষরা মেয়েদের যে প্রত্যঙ্গের প্রতি সবচেয়ে বেশি আকর্ষণবোধ করেন সেটি হলো তাদের স্তন। তবে, ইন্দু হরিকুমারকে যদি এ নিয়ে প্রশ্ন করেন, তাহলে তার কাছ থেকে এর একটা অন্যরকম জবাব পাবেন। তার মতে, নারীরাও স্তন নিয়ে ভাবেন, তবে তা তাদের নিজেদের স্তন।

বিবিসিকে ইন্দু বলেন, ‘প্রায় এক বছর আগে তিনি ইনস্টাগ্রামে একজনের সাথে গল্প করছিলেন, যার বিষয় ছিল স্তন।’

সেই নারী বলছিলেন, ‘তিনি যখন কোথাও যান, কোনো ঘরে ঢোকেন তখন পুরুষদের কী প্রতিক্রিয়া হয়। পুরুষরা তার বৃহৎ স্তন ছাড়া যেন আর কিছুই দেখতে পান না।’

গত কয়েক মাস ধরে ইন্দু হরিকুমার একটি প্রকল্প নিয়ে কাজ করছেন, যার নাম দেয়া হয়েছে আইডেন্টিটি বা ‘আত্মপরিচয়’। তবে এই ‘আইডেন্টিটি’র বানানের শেষ অংশটা লেখা হয়েছে দুটো ‘টি’ দিয়ে। যার অর্থ খুবই পরিষ্কার।

ইনস্টাগ্রামে গল্প করতে করতে এ প্রকল্পের ধারণা মাথায় আসে ইন্দু হরিকুমারের। ওই নারীর কথার জবাব দিতে গিয়ে ইন্দু জানান, তার নিজের ক্ষেত্রে উল্টো অভিজ্ঞতা হয়েছে। কারণ অল্প বয়সে তার নিজের বুকের গঠনের জন্য তিনি সবসময়ই হীনমন্যতায় ভুগতেন।

তিনি বলেন, ‘তখন আমরা দু’জন মিলে ঠিক করলাম আমরা এ নিয়েই একটা প্রকল্প শুরু করবো। যেখানে নারীরাই এ বিষয়ে তাদের কথা বলবেন। অনেক নারীই এতে আগ্রহ দেখালেন, এবং আমরা প্রকল্পে হাত দিলাম। প্রকল্পের নাম হিসেবে দু’টো টি দিয়ে আইডেন্টিটি লেখার ভাবনাটা এসেছিল আমাদের এক বন্ধুর মাথা থেকে। আমাদের মনে হলো, এটাই উপযুক্ত নাম।’

তার প্রকল্পে অনেক নারী সাড়া দিয়েছেন। মুম্বাইয়ের বাসিন্দা ইন্দু মূলত ইনস্টাগ্রামেই কাজ করেন। তিনি জানুয়ারি মাসে একটি পোস্ট ছেড়ে নারীদের আহ্বান জানান তারা যেন তাদের স্তন নিয়ে ব্যক্তিগত গল্প শেয়ার করেন।

পৃথিবীতে মানবদেহের সবচেয়ে ‘আলোচিত, প্রদর্শিত এবং আকাঙ্ক্ষিত’ অংশটি নিয়ে নারীরা যেন তাদের আনন্দ, বেদনা এবং কদাচিৎ অপমানের শিকার হবার গল্প বলেন। সেই গল্পের সঙ্গে যেন তাদের ছবিও বলে দেন, যেমনভাবে তিনি জানতে চান।

হরিকুমার বলেন, এর যে সাড়া পাই আমরা তা ছিল অভূতপূর্ব। কারণ সব নারীরই তার বক্ষ নিয়ে একটা-না-একটা গল্প আছে, এবং এর আকৃতি ও গঠন তার আত্মপরিচয়েরও একটা অংশ হয়ে যায়।

ইন্দু বলেন, তার নিজের গল্পও কম চিত্তাকর্ষক নয়।

‘আমি যখন টিনএজার তখন আমি ছিলাম ভীষণ রোগা, হাড়-জিরজিরে। আমি সবসময় ভাবতাম কবে আমার বুক একজন পরিণত নারীর মতো হবে। দেখতাম টিনএজ ছেলেরা সেই সব মেয়েদের প্রতিই আকৃষ্ট হয় যাদের স্তন সুগঠিত। আর যাদের বুক আমার মতো সমান ছিল তারা ভাবতো তাদেরকে কেউ কোনো দিন ভালোবাসবে না।’

ইন্দু বলেন, তিনি ভাবতেন তার শরীরের নিশ্চয়ই কোনো একটা সমস্যা আছে, তিনি ভালোবাসার উপযুক্ত নন। এ জন্য তিনি কিছু ক্ষতিকর সম্পর্কেও জড়িয়ে পড়েছিলেন, এই ভেবে যে যা পাওয়া যায় তা নিয়ে নেয়াই ভালো।

এ প্রকল্পে নারীরা নিজেদের পরিচয় গোপন রেখে ব্যক্তিগত গল্প প্রকাশ করছেন। তবে ইন্দুর বয়স এখন মধ্য-তিরিশের কোঠায়। এখন তিনি মনে করেন তিনি একটি সুন্দর দেহের অধিকারী, কিন্তু এখানে পৌঁছাতে তার অনেক সময় লেগেছে।

তিনি বলছেন, এ কারণে তিনি যখন বুক নিয়ে মনোকষ্টে-ভোগা কোনো নারীর গল্প পড়েন, তখন তিনি তাকে খুব ভালোভাবে বুঝতে পারেন।

নারীদের মধ্যে স্তনের আকৃতি নিয়ে অসন্তুষ্টি দু’ভাবেই কাজ করে। ব্রিটেনে ৩৮৪ জন নারীর ওপর চালানো এক জরিপে দেখা যায়, তাদের ৪৪ শতাংশ চান যদি এর আকৃতি আরো বড় হতো, আর ৩১ শতাংশ চান এর আকৃতি যদি ছোট হতো।

হরিকুমার বলেন, ‘ছোট স্তনের আকার নিয়ে কষ্টে ভোগেন এমন নারী যেমন আছেন, তেমনি এর আকৃতি বড় বলে তা নিয়ে লজ্জা ও নানা অসুবিধার শিকার হন এমন নারীও আছে।

ইন্দু হরিকুমারের ইনস্টাগ্রাম প্রকল্পে কেউ কেউ লিখেছেন, ‘যারা মনে করেন যে বড় স্তন আকর্ষণীয় – আসলে তা এক নিষ্ঠুর মিথ্যে ছাড়া কিছুই নয়। আমি এর জন্য দৌড়াতে পারি না, জিমে যেতে পারি না, যোগ ব্যায়াম করতে পারি না।’

‘এখন আমার সন্তান বুকের দুধ খাচ্ছে, এখন তো আরো অসুবিধার সময়। তবে এমন অনেক নারীও আছেন যারা তাদের নিজ দেহ নিয়ে গর্ব ও আনন্দ বোধ করেন।’

একজন নারী লিখেছেন, তিনি চান তার গল্পের সাথে ছবিটাতে যেন তাকে শয়নকক্ষের মধ্যে বসিয়ে আঁকা হয়। কারণ পুরুষের মনের ওপর তার স্তনের যে অভিঘাত হয় সে সম্পর্কে তিনি সচেতন, তিনি জানেন যে তার শক্তি কতখানি।

ভারতের রক্ষণশীল সমাজে ইন্দু হরিকুমারের প্রকল্প এক ব্যতিক্রমী ঘটনা। এই প্রকল্পের ডাকবাক্স খোলার পর থেকে ইন্দু প্রচুর ইমেইল ও ছবি পাচ্ছেন। দু’মাসে প্রায় ৬০টি গল্প পেয়েছেন তিনি। তার মধ্যে ১৯টির জন্য ছবি এঁকে শেষ করেছেন। এসব ছবি গল্পগুলোর সাথে প্রকাশিত হবে কিন্তু তাতে তাদের আসল চেহারার সাথে কোনো মিল থাকবে না, তারা কে কোথা থেকে লিখেছেন তারও কোনো ইঙ্গিত থাকবে না।

তিনি বলেন, ‘ভারতের ছোট-বড় অনেক শহর থেকেই তিনি চিঠি পাচ্ছেন। যারা লিখছেন তাদের বয়স ১৮ থেকে ৫০ এর মধ্যে। গোপনীয়তা রক্ষার নিশ্চয়তা পেয়েই তারা মন খুলে তাদের নিজেদের ব্যক্তিগত অনুভূতি নিয়ে লিখতে পারছেন।’

Share this content:

Related Articles

Back to top button