খেলাধুলালিড নিউজ

দ্বিতীয় টেস্টে বিশাল ব্যবধানে হারল বাংলাদেশ

এবিএনএ : পাল্লেকেলের দ্বিতীয় টেস্টে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় বিপর্যস্ত টাইগাররা। ২০৯ রানের বিশাল ব্যবধানে জিতল স্বাগতিক শ্রীলংকা। ৪৩৭ রানের তাড়ায় ২২৭ রানে গুটিয়ে গেল বাংলাদেশের ইনিংস। পঞ্চম দিনে ২২ ওভারের মধ্যেই শেষ বাংলাদেশ। উইকেট হারিয়েছে ৫টি। আর রান যোগ হয়েছে মাত্র ৫০টি। শেষ দুই ওভারে এক রানও যোগ করতে পারেনি বাংলাদেশ। অথচ উইকেট হারিয়েছে ৩টি। পর পর দুই ওভারে উইকেট তিনটি তুলে নেন মেন্ডিস ও জয়াবিক্রমা।

মূলত পাল্লেকেলের দ্বিতীয় টেস্টে অভিষিক্ত তরুণ স্পিনার জয়াবিক্রমার কাছেই গেছে বাংলাদেশ। অভিষেক টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে ১১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি। মোট ২০ উইকেটের অর্ধেকের বেশিই তার দখলে! চতুর্থ দিন শেষে তবু আশাজাগানিয়া কথা শোনা গিয়েছিল বাংলাদেশ শিবিরে। সেটি ছিল অভিজ্ঞ লিটন দাস ও ব্যাট করতে জানা স্পিনার মিরাজের ভরসায়। টেস্টে মিরাজের সেঞ্চুরি রয়েছে। লিটন দাসের সেঞ্চুরি না থাকলেও ৮টি হাফসেঞ্চুরি রয়েছে। লিটন-মিরাজে ভরসা করেই অন্তত ড্রয়ের স্বপ্নও দেখছিল কেউ কেউ। এক কথায় শেষ স্বীকৃত ব্যাটিং জুটি তারা। কিন্তু পঞ্চম দিনের সকালেই লিটন জানালেন, সতীর্থদের মতো তিনিও লংকান স্পিনার জয়াবিক্রমার বল ঝোঝেন না।

মাঠে নেমেই দায়িত্বজ্ঞানহীনতার পরিচয় দেন। দিনের শুরুতেই আউট তিনি। যোগ করতে পেরেছেন মাত্র ৩ রান। ৪৬ বলে ১৭ রান করেছেন লিটন। রিভিউ নিয়েও নিজের উইকেট বাঁচাতে পারেননি তিনি। মিরাজ-লিটনের যে জুটি কমপক্ষে ১০০ রান যোগ করার কথা তা যোগ করল মাত্র ৫ রান। লিটনের আউটের পর মাঠে নেমে ৩০ বল টিকেছেন তাইজুল। যোগ করেছেন ২ রান মাত্র। এর পর ৩৩ বলে ৭ রান করে মেন্ডিসের শিকার তাসকিন। এর চেয়ে কী বা করতে পারেন তিনি। যেখানে দলের টপঅর্ডার ব্যাটসম্যানরা ২০-২৫ এর মধ্যে আউট হয়ে যান।

৭১তম ওভারে মিরাজ ও আবু জায়েদকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের কফিনে শেষ প্যারেক ঠুকে দেন জয়াবিক্রমা।  মিরাজের ব্যাট থেকে এসেছে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩৯ রান।  মুশফিক থেকে ১ রান কম করেছেন। শ্রীলংকার ছোড়া ৪৩৭ রানের বড় লক্ষ্যে নেমে বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারের প্রথম পাঁচজনের প্রত্যেকেই ছোট ছোট ইনিংস খেলেছেন। প্রতিটি জুটি ছুঁয়েছে ৩০ বা তার বেশি রান। কিন্তু কেউ ফিফটি করতে পারেননি। তামিম কালও ভালো শুরু করেন। দারুণ কিছু শটে ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। ইনিংসের দ্বিতীয় বলে সুরঙ্গা লাকমালকে চার এবং নতুন বলের শুরুতে রমেশ মেন্ডিসকে ছক্কা মারেন। পরে মেন্ডিসই ফেরান তামিমকে।

দারুণ টার্ন ও বাউন্সে ব্যাটের কানায় লেগে বল চলে যায় উইকেটকিপারের গ্লাভসে। টানা চার ফিফটির পর তামিম আউট হন ২৬ বলে ২৪ করে। সাইফ হাসানও প্রথমে ইতিবাচক ছিলেন। এরপর বাঁ-হাতি স্পিনার প্রাভিন জয়াবিক্রমাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে ধরা পড়েন কাভার পয়েন্টে। তবে এরইমধ্যে চার টেস্টের ক্যারিয়ারে সর্বোচ্চ ৩৪ রান তুলে ফেলেন তিনি। সেঞ্চুরির পর দুই ইনিংসে শূন্য করা নাজমুল হোসেন থামেন ২৬ করে। তাকেও ফেরান জয়াবিক্রমা।

অধিনায়ক মুমিনুল হকও ভালো ব্যাটিং শুরু করেন। উইকেটের সঙ্গে দ্রুত মানিয়ে নেন। আউট হয়েছেন বাজে বলে মারতে গিয়ে। মেন্ডিসের করা অফ-স্টাম্পের বাইরের বলে খেলতে গিয়ে ব্যাটের কানায় লেগে বোল্ড হন। ফেরেন ৩২ করে।  ৬ ও ৩১ রানের সময় ‘জীবন’ পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মুশফিকুর রহিম।

ঝুঁকি নিয়ে শেষ পর্যন্ত ৪০ রানে আউট হওয়া মুশফিক দলের সর্বোচ্চ স্কোরার। বেশ কয়েকবার ঝুঁকিপূর্ণ শট খেলেন। মেন্ডিসের বাড়তি লাফানো বল তার গ্লাভসে লেগে বল যায় লেগ স্লিপে। ৪১.৪ ওভারে ১৭১ রানে পাঁচ উইকেট হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। সিরিজের প্রথম ম্যাচের ড্রয়ে মাত্র ৩০ পয়েন্ট নিয়েই শেষ হলো বাংলাদেশের টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। আর শ্রীলংকা ১-০ ব্যবধানে সিরিজটি জিতল। ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ৪৯৩ রান করেছিল স্বাগতিকরা। জবাবে বাংলাদেশ অলআউট হয় ২৫১ রানে।

২৪২ রানে পিছিয়ে থেকে ফলোঅনে পড়লেও সফরকারীদের তা করায়নি শ্রীলংকা। দ্বিতীয় ইনিংসে নিজেরা ব্যাট করতে নেমে ৯ উইকেটে করে ১৯৪ রান। ফলে বাংলাদেশের সামনে লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৩৭ রানের। যা তাড়া করে জিততে ইতিহাস গড়তে হতো বাংলাদেশকে। ইতিহাস তো হয়ইনি। লক্ষ্যের ধারে কাছেও পৌঁছে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম সেশনটাই শেষ করতে পারেনি মুমিনুল বাহিনী। ২০৯ রানের হারের লজ্জা নিয়েও শ্রীলংকা মিশন শেষ হলো বাংলাদেশের।

স্কোর কার্ড

শ্রীলংকা প্রথম ইনিংস ৪৯৩/৭ ডিক্লেয়ার।

বাংলাদেশ প্রথম ইনিংস ২৫১।

শ্রীলংকা দ্বিতীয় ইনিংস ১৯৪/৯ ডিক্লেয়ার।

বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংস ২২৭ (অলআউট)

শ্রীলংকা ২০৯ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ: প্রাভিন জয়াবিক্রমা

বোলিং : লাকমাল ৪-২-১৪-০, রমেশ মেন্ডিস ২৮-২-১০৩-৪, জয়াবিক্রমা ৩২-১০-৮৬-৫, ধনাঞ্জয়া ৭-১-১৯-১।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button