খেলাধুলা

টাইগারদের জয়, র‌্যাংকিং ৬ অর্জন

এবিএনএ : ত্রিদেশীয় ওয়ানডে সিরিজে শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে পাঁচ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এর ফলে শ্রীলঙ্কাকে সরিয়ে র‌্যাংকিংয়ে ছয় নম্বরে উঠে এল মাশরাফি বাহিনী। একইসঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে বিদেশের মাটিতে প্রথমবার হারানোর স্বাদ পেল টিম টাইগার্স। তামিম-সাব্বিরের ভিত গড়ে দেয়া এই ম্যাচে নিজের দায়িত্বশীল ব্যাটিং নৈপুন্যে দারুন এই অর্জন এনে দিলেন রিয়াদ-মুশফিক জুটি। তবে আক্ষেপ শুধু মাত্র চ্যাম্পিয়ন হওয়ার।

কিউইদের দেওয়া ২৭১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের প্রথম বলেই তামিম ছয় মেরে খেলা শুরু করলেও তৃতীয় বলে সাজঘরে ফিরলেন সৌম্য সরকার। জিতেন প্যাটেলের বলটি তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা কোরি অ্যান্ডারসনের তালুবন্দী হন সৌম্য সরকার। দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দারুণ জুটি গড়েন তামিম ইকবাল এবং সাব্বির রহমান। ধীরে ধীরে উইকেটে থিতু হয়ে আস্তে আস্তে হাত খোলেন। টানা ব্যর্থতায় সমালোচনায় জর্জরিত সাব্বির এদিন ভালোই সঙ্গ দিলেন তামিমকে। দুজনেই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। ৫৪ বলে ৬ বাউন্ডারি এবং ১ ওভার বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ৩৬ তম ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। আর ৬৪ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি করেন সাব্বির।

তবে এই দুজন মারকুটে ব্যাটসম্যানের ছন্দ ভাঙেন মিচেল স্যান্টনার। তার বলে কে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন ৮০ বলে ৬৫ রান করা তামিম। শেষ হলো দ্বিতীয় উইকটে ১৩৬ রান অসাধারণ জুটি। সাব্বিরও টিকতে পারলেন না। দলের স্কোর আর  মাত্র ৫ রান যোগ হতেই  ৮৩ বলে ৯ বাউন্ডারিতে সমান ৬৫ রান করে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে গেলেন তিনি। হতাশ করলেন তরুণ মোসাদ্দেকও। ১০ রান করে জিতেন প্যাটেলের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়লেন তিনি! মুহূর্তে ৩ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ। এই বিপদের মুহূর্তে উইকেটে ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। বলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটা ততটা জরুরী ছিল না। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কী মনে হলো; হ্যাশিম ব্যানেটের বলটা অযথা তুলে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে স্যান্টনারের তালুবন্দী হলেন তিনি! আউট হওয়ার আএ ৩২ বলে ২ বাউন্ডারিতে করেছেন ১৯ রান। মুশফিকের সঙ্গী হন মাহমুদ উল্লাহ।

এর আগে টাইগারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিং লাইন আপের সামনে নুয়ে যায় নিউজিল্যান্ড দল। মাশরাফি, সাকিব ও নাসিরের জোড়া আঘাত ও মুস্তাফিজ, রুবেলের বোলিংয়ের সামনে ৮ উইকেটে ২৭০ রান করে ইনিংস শেষ করে তারা।

এদিন কোরি অ্যান্ডারসনের বিপজ্জনক উইকেট স্কয়ার লেগে মুঠোবন্দি করেছিলেন মাহমুদউল্লাহ, এর পর মিডঅফে জেমস নিশামকে। দারুণ ফিল্ডিংয়ে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ধসে ভূমিকা রেখেছেন তিনি।  প্রথমটির উইকেট শিকারি সাকিব আল হাসান, পরেরটি মাশরাফি মুর্তজা। তারা দুজনে পরের দুই ওভারে  আরও দুটি উইকেট নেন। ক্রিজে নেমে মাত্র ৫ বল খেলে মিচেল স্যান্টনারকে বোল্ড করে সাকিব তার দ্বিতীয় উইকেট নেন। ২ বল খেলে কলিন মুনরোকে পেছনে মুশফিকুর রহিমের ক্যাচ বানান মাশরাফি।

নাসির হোসেনের দুর্দান্ত বোলিং নৈপুণ্যের পর সাকিব আল হাসান পেলেন নিজের প্রথম উইকেট। স্কয়ার লেগে কোরি অ্যান্ডারসনকে মাহমুদউল্লাহর ক্যাচ বানান তিনি।  ৩২ বলে ২৪ রান করেন কিউই ব্যাটসম্যান।

দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফেরায় চাপটা এমনিতেই বেশি ছিল নাসিরের ওপর। সেটা আরও বেড়ে যায় শুরুতে টম ল্যাথামের ক্যাচ মিস করলে। বোলিংয়েও সুবিধা করতে পারছিলেন না তিনি। অতঃপর ফিরলেন তিনি স্বরূপে, বাংলাদেশকে দ্বিতীয় উইকেট এনে দিয়েছেন নাসিরই। হাফসেঞ্চুরি করে বিধ্বংসী হয়ে ওঠা নাইল ব্রুমকে ফিরিয়েছেন তিনি মাশরাফির হাতে ক্যাচ বানিয়ে। স্কয়ার লেগে মাশরাফির হাতে ধরা পড়ার আগে ব্রুম খেলেন ৭৬ বলে ৬৩ রানের ইনিংস।

এখানেই থামেননি এই অলরাউন্ডার; ইনিংসের তৃতীয় বলে যার ক্যাচ ছেড়েছিলেন, সেই ল্যাথামকে বোল্ড করে ফিরেছেন তিনিই। ব্রুমকে আউট করার পরের ওভারে এসে প্যাভিলিয়নে ফেরত পাঠান সেট ব্যাটসম্যান ল্যাথামকে। দুইবার ‘জীবন’ পাওয়ার সুবিধা কাজে লাগিয়ে হাফসেঞ্চুরি পূরণ করে এই ওপেনার এগিয়ে যাচ্ছিলেন সেঞ্চুরির দিকেও। কিন্তু বোল্ড হয়ে গেলে থেমে যায় তার ৮৪ রানের ইনিংস। ৯২ বলের ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছিলেন ১১ বাউন্ডারিতে।

অথ্চ রানের খাতা খোলার আগেই প্যাভিলিয়নে ফিরে যেতে পারতেন ল্যাথাম। যদিও ভাগ্য সহায় হওয়ায় ইনিংসের তৃতীয় বলে বেঁচে যান নাসির ক্যাচ মিস করায়। নতুন ‘জীবন’ পেয়ে ইনিংস লম্বা করে পূরণ করেন ওয়ানডে ক্যারিয়ারের অষ্টম হাফসেঞ্চুরি।

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে নেমে শুরুতেই টাইগারদের উইকেট এনে দিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান। এই পেসারের স্লোয়ারে প্যাভিলিয়নে ফিরে গেছেন ওপেনার লুক রঞ্চি। প্রথম উইকেটটা পেয়ে যেতে পারতেন মাশরাফি, পাননি নাসির হোসেন ক্যাচ মিস করায়। সাকিব অবশ্য ভুল করেননি। মুস্তাফিজের স্লোয়ারে বোকা বনে গিয়ে রঞ্চি বল মারেন উড়িয়ে, বৃত্তের ভেতর থেকে বল তালুবন্দি করতে সমস্যা হয়নি সাকিবের।

Share this content:

Back to top button