খেলাধুলা

ঘুরে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের রোমাঞ্চকর জয়

১০ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নেমে আফগানিস্তানের কাছে হারতেই বসেছিল বাংলাদেশ। শেষ দিকে বোলাররা দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়ানোয় অঘটন আর ঘটেনি।

তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডে ৭ রানে জিতেছে মাশরাফি বিন মুর্তজার দল।

টানা তিনটি ফুল লেংথ বল, চতুর্থটি অফ স্টাম্পের বাইরে স্লোয়ার। সেটাই তাসকিন আহমেদকে এনে দেয় মোহাম্মদ নবির উইকেট। সীমানার কাছে ছুটে গিয়ে নবির ক্যাচ তালুবন্দি করেন সাব্বির রহমান। তাসকিনের সেই ওভারের শেষ বলে আসগর স্তানিকজাইয়ের ক্যাচ তালুবন্দি করেন মাহমুদউল্লাহ।

নিজের শেষ ওভারে আঘাত হেনে বাংলাদেশের আশা বাঁচিয়ে রাখেন  মাশরাফি বিন মুর্তজা। অধিনায়কের বলে নাজিবুল্লাহ জাদরানের ক্যাচ গ্লাভসবন্দি করেন মুশফিকুর রহিম।

নিজের শেষ ওভারে হাশমতুল্লাহ শাহিদিকে ফেরান তাইজুল ইসলাম। তার বলে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত হওয়ার আগে ১১০ বলে ৭২ রান করেন হাশমতুল্লাহ।

সাকিব আল হাসানের বলে স্টাম্পড হয়ে ফিরেন রহমত শাহ (৯৩ বলে ৭১ রান)। এগিয়ে এসে বল পাননি এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। সুযোগ কাজে লাগাতে কোনো ভুল করেননি মুশফিকুর রহিম। ভাঙে ১৪৪ রানের জুটি।

রহমত শাহর পর অর্ধশতক করেন হাশমতুল্লাহ শাহিদি। ওয়ানডেতে এটাই তার প্রথম অর্ধশতক।

দ্রুত দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যানকে হারানো আফগানিস্তান প্রতিরোধ গড়ে রহমত শাহ ও হাশমতুল্লাহ শাহিদির ব্যাটে। তৃতীয় উইকেটে এই দুই জনে গড়েন শতরানের জুটি। রুবেল হোসেনকে ছক্কা হাঁকিয়ে অর্ধশতক করেন রহমত।

বোলিংয়ে এসেই আঘাত হানেন সাকিব আল হাসান। তার বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফিরেন আফগানিস্তানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান শাবির নুরি (২৪ বলে ৯)।

আগের বলেই এগিয়ে এসে এক ছক্কা হাঁকানো মোহাম্মদ শাহজাদকে ফেরান মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ অধিনায়কের বলে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে। শূন্য রানে জীবন পাওয়া শাহজাদ ২১ বলে করেন ৩১ রান।

মাশরাফি বিন মুর্তজার বলে কঠিন একটু সুযোগ হাতছাড়া করেন রুবেল হোসেন। শাবির নুরির ক্যাচ অনেকটা দৌড়েও তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি। মিডঅন থেকে লংঅনের কাছে পেছন দিক থেকে আসা বল তার হাত ফস্কে যায়।

দ্বিতীয় ওভারেই মোহাম্মদ শাহজাদকে জীবন দিলেন ইমরুল কায়েস। তাসকিন আহমেদের বলে স্লিপে ক্যাচ তালুবন্দি করতে পারেননি তিনি।

তামিম ইকবাল, মাহমুদউল্লাহর অর্ধশতকে আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়েছে বাংলাদেশ। মঞ্চ প্রস্তুত করে দিয়েছিলেন এই দুই ব্যাটসম্যান। তবে শেষের দিকে সাকিব আল হাসান ছাড়া আর কেউ জ্বলে উঠতে না পারায় সংগ্রহটা আরও বড় হয়নি স্বাগতিকদের। জয়ের জন্য ২৬৬ রানের লক্ষ্য পেয়েছে আফগানরা।

রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শেষ বলে ২৬৫ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।

১০ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। পঞ্চম বলেই ফিরে যান সৌম্য সরকার। দৌলত জাদরানের বল পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।

তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েসের শুরুতে কয়েকবার বেঁচে গেছেন অল্পের জন্য। ১৩, ১৭, ২১ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে পারতেন তিনি। তবে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পাওয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সঙ্গেই প্রতিরোধ গড়েন তামিম।

বিপজ্জনক হয়ে উঠা দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নবি। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা এই অফ স্পিনারের বল ইমরুলের ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড হয়ে স্টাম্পে আঘাত হানে।

তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৭৯ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি উপহার দেন তামিম। রশিদ খানের বলে কাট করে চার হাঁকিয়ে ৬৩ বলে পৌঁছান অর্ধশতকে। মিরওয়াস আশরাফের বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে লংঅফে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার দারুণ ইনিংসটি।

৯৮ বলে ৯টি চারে ৮০ রান করার পথে দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তামিম।

বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের সঙ্গে মাহমুদুউল্লাহর ৪০ রানের জুটিতে দুইশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। দৌলতের বলে লংঅন ও মিডউইকেটের মাঝ দিয়ে দারুণ এক চারে ৬৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান।

রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় নবির বলে সীমানায় মিরওয়াইস আশরাফকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ৭৪ বলে খেলা তার ৬২ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও দুটি ছক্কায়।

৪১তম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২০৩ রান। তখনও মাঠে নামতে বাকি মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের। সেখান থেকে ২৮০/২৯০ রান অসম্ভব ছিল না।

রশিদ খানের স্পিনে পরপর দুই ওভারে মুশফিক ও সাব্বির ফিরে গেলে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। বোল্ড হয়ে ফিরেন মুশফিক, বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হন সাব্বির। দুই ব্যাটিং ভরসার কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি।

বাংলাদেশকে আড়াইশর পথে রাখেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। কয়েকটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া আফগানরা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফেরায় দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৪০ বলে তিনটি চারে ৪৮ রান করেন সাকিব।

অভিষেকে একটি উইকেট পেয়েছেন আফগানিস্তানের নাভিন-উল-হক। ১৭ বছর বয়সী পেসার ফিরিয়েছেন মাশরাফিকে।

৭ উইকেট হাতে থাকা বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে ৬৯ রানের বেশি রান করতে পারেনি।

৭৩ রানে ৪ উইকেট নেন নেন পেসার দৌলত। দুটি করে উইকেট নেন রশিদ ও নবি।

 

 

Share this content:

Related Articles

Back to top button