কাঁদছে কিউবা

এবিএনএ : কাঁদছে কিউবা। প্রাণপ্রিয় বিপ্লবী, সাবেক প্রেসিডেন্ট ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুতে চারদিকে আহাজারি। বুক চাপড়ে কাঁদছে মানুষ। রাষ্ট্রীয়ভাবে চলছে ৯ দিনের শোক। সারাদেশে জাতীয় পতাকা রয়েছে অর্ধনমিত। শনিবার প্রেসিডেন্ট রাউল ক্যাস্ত্রো রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর মৃত্যুর সংবাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে বুকফাটা আর্তনাদে কাঁদতে থাকেন কিউবার মানুষ। সঙ্গে সঙ্গে সারা বিশ্বে সৃষ্টি হয় এক আলোড়ন। মানুষের শিরদাড়া বেয়ে নেমে যেতে থাকে হিম অনুভুতি। সত্যি, ফিদেল ক্যাস্ত্রো আর নেই! বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভূয়সী প্রশংসাকারী এই বিপ্লবী প্রতীকের মৃত্যু সংবাদে বাংলাদেশের মানুষের মাঝেও নেমে আসে শোক। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেন। সর্বস্তরের মানুষকে গ্রাস করে এক নিকট-আত্মীয় হারানো বেদনা। বিশ্বের বাঘা বাঘা নেতারা মহান এই নেতার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেন। শনিবার থেকেই কিউবায় রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু হয়েছে। এদিন সংক্ষিপ্ত ও ব্যক্তিগত আয়োজনের মধ্য দিয়ে শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়েছে ফিদেল ক্যাস্ত্রোর। আগামী ৪ঠা ডিসেম্বর তার দেহাবশেষ নিয়ে সমাহিত করা হবে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় শহর সান্তিয়াগো ডি কিউবায়। এর আগে হাভানায় ধারাবাহিকভাবে তার স্মরণে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এ সময়ে তার দেহাবশেষ বহন করা হবে ক্যারাভান অব ফ্রিডম রুট দিয়ে। ১৯৫৯ সালের জানুয়ারিতে তিনি এ রুটেই যাত্রা করেছিলেন। বিবিসির সাংবাদিক উইল গ্রান্ট তার রিপোর্টে বলেছেন, হাভানা কাঁদছে। ওয়াশিংটনের গ্রাস থেকে দেশকে মুক্ত করেছিলেন যে নেতা তাকে হারিয়ে মানুষ যেন দিশাহারা। রাজতন্ত্রের কোনো উত্তরাধিকারী ছিলেন না ফিদেল ক্যাস্ত্রো। তবু তিনি নিজের নেতৃত্বের জোরে বিংশ শতাব্দীতে সবচেয়ে বেশি সময় ক্ষমতায় থাকার নেতা। স্বাস্থ্যগত সমস্যার কারণে তিনি ২০০৮ সালে রাজনৈতিক জীবনের ইতি ঘটান। ক্ষমতা তুলে দেন তারই ছোটভাই রাউল ক্যাস্ত্রোর হাতে। কয়েক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা ও তাকে হত্যা চেষ্টা উপেক্ষা করে ফিদেল ক্যাস্ত্রো তার কমিউনিস্ট বিপ্লব অব্যাহত রেখেছেন। নিজের দেশকে মুক্ত রেখেছেন বাইরের বিশ্বের রক্তচক্ষু থেকে। বিশেষ করে ১৯৯০ এর দশকে যখন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হয় তখন কিউবার অর্থনীতি ভেঙে পড়ে। এ সময় মারাত্মক আর্থিক সঙ্কটে দেশ ছেড়ে অনেক মানুষ যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নেন। কিন্তু ঠিকই সেই পরিস্থিতিতেও দেশবাসীর ভালবাসা অর্জন করে ক্ষমতা ধরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন এই নেতা, বিংশ শতাব্দীর আইকন। তাকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত ডনাল্ড ট্রাম্প ‘নিষ্ঠুর স্বৈরশাসক’ আখ্যায়িত করলেও বিশ্বের সব মানুষের কাছে তিনি বিপ্লবের প্রতীক। তাইতো বিশ্বজুড়ে নেতারা তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন।
Share this content: