জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

উপজেলা কমিটির সুপারিশ ছাড়া রাস্তা-সেতু-কালভার্ট নির্মাণ নয়

এবিএনএ : উপজেলা কমিটির সুপারিশ ছাড়া নতুন রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের অনুমতি দেয়া হবে না বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সরকারমন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম। রোববার (১৬ আগস্ট) সচিবালয়ে গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা নদীর ওপর পিসি গার্ডার সেতু এবং চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিত সেতুর ডিজাইন সংক্রান্ত আলোচনা সভায় মন্ত্রী এমন মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ‘দেশের গ্রামগঞ্জে নতুন পাকা রাস্তা, সেতু ও কালভার্ট করতে হলে স্ব স্ব উপজেলা পরিষদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটিতে আলোচনার মাধ্যমে যৌক্তিকতা প্রমাণসাপেক্ষে কার্যবিবরণীতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। যাতে যত্রতত্র রাস্তা, ব্রিজ নির্মাণ করে বাংলাদেশের ভূ-প্রকৃতির ক্ষতি না হয়।’

‘উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধি, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে এই কমিটি গঠন করা যেতে পারে’ উল্লেখ করে তাজুল ইসলাম বলেন, ‘কমিটি কর্তৃক যাচাই-বাছাই করে যে প্রতিবেদন দেয়া হবে, তা বিবেচনায় নিয়ে রাস্তা ও ব্রিজ নির্মাণের অনুমোদন দেয়া হবে। এতে যত্রতত্র রাস্তাঘাট ও ব্রিজ নির্মাণ বন্ধ হবে।’

প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন, সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রে নদীর নাব্যতা, পানি প্রবাহ ঠিক রাখা, নৌ-চলাচল, কৃষি সেচ ও মৎস্য এবং পরিবেশের বিষয়টি নিশ্চিত করা এবং যেখানে-সেখানে ব্রিজ নির্মাণ না করে অর্থাৎ আইন অনুযায়ী নির্মাণ করতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলীকে প্রধান করে একটি কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত দেন মন্ত্রী। কমিটিতে সদস্য হিসেবে থাকবেন স্থানীয় সরকার বিভাগ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিআইডব্লিউটিএসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরের প্রতিনিধিরা।

নদীর নাব্যতার স্বার্থে বড় বড় নদীগুলোর কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত কিলোমিটারের মধ্যে কোনো সেতু না করার ব্যাপারে কমিটিকে একটি নীতিমালা করে তার খসড়া মন্ত্রণালয়ে দাখিল করতে বলেন মন্ত্রী। তিস্তা নদীর ওপর নির্মিতব্য পিসি গার্ডার সেতু এবং ডাকাতিয়া নদীর ওপর নির্মিতব্য সেতু নদীর নাব্যতা, পানি প্রবাহ ও নৌ-চলাচল ইত্যাদি বিষয় ঠিক আছে কি-না, তা পুনর্বিবেচনা করে এই কমিটিকে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশনা দেন তাজুল ইসলাম।

হাইড্রলজিক্যাল, মরফোলজিক্যাল ও নেভিগেশন সমীক্ষায় নদীর বৈশিষ্ট্য, অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে নব্যতা বৃদ্ধি করে পানি সরবরাহ, মৎস্য চাষ এবং কৃষি সেচ ব্যবস্থা অক্ষুণ্ন রাখার ওপর জোর দিয়ে তিনি বলেন, ‘ব্রিজ নির্মাণের সময় নদীর দুই পাশের খাল কোনো অবস্থাতেই সংকোচন করা যাবে না।’

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়সহ যেসব সংস্থা ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ করছে তাদের সকলকে প্রধানমন্ত্রীর অনুশাসন মেনে নেভিগেশন, নদীর নাব্যতা, ড্রেজিং ও নৌ-চলাচল ব্যবস্থা ঠিক রেখে নির্মাণ করার আহ্বান জানান স্থানীয় সরকারমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। নদী ও জমির ওপর অর্থনীতির বড় একটি অংশ নির্ভর করে। তাই নদীর যে বহুমাত্রিক সুবিধা আছে সেগুলোকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড জোরদার করতে হবে।’

স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে জানানো হয়, গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ উপজেলার সঙ্গে কুড়িগ্রাম জেলার চিলমারী উপজেলার যোগাযোগ নেটওয়ার্ক তৈরিসহ কুড়িগ্রামের সঙ্গে রাজধানী ঢাকার যাতায়াতের দূরত্ব কমিয়ে আনা এবং গ্রামীণ এলাকার দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরির মাধ্যমে জনগণের অর্থনৈতিক ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে ৮৮৫ দশমিক ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে তিস্তা নদীর ওপর এক হাজার ৪৯০ মিটার দীর্ঘ পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ প্রকল্পে অনুমোদন দেয় একনেক। এছাড়া সভায় চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলাধীন ডাকাতিয়া নদীর ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পে নদীর নাব্যতা, ড্রেজিং পরিবেশসহ বিভিন্ন বিষয় মাথায় রেখে ডিজাইন করার বিষয়ে আলোচনা হয়।

স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন, পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোকন উদ-দৌলা, এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ খান, বিআইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যান কমডোর গোলাম সাদেক, পানি উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোতাহের হোসেন, সেতু নির্মাণের প্রকল্প পরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সভায় উপস্থিত ছিলেন।

Share this content:

Back to top button