আইন ও আদালতবাংলাদেশলিড নিউজ

আশিয়ান সিটির কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা

এ বি এন এ : আশিয়ান সিটির জমি হস্তান্তর, উন্নয়ন ও বিজ্ঞাপনসহ সব ধরনের কার্যক্রমে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন আপিল বিভাগ।

আশিয়ান সিটি বৈধ বলে দেয়া হাইকোর্টের রায় স্থগিত করে সোমবার প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের আপিল বিভাগ এ নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।

আদালতে বেলার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ফিদা এম কামাল। সঙ্গে ছিলেন এম আমিনউদ্দিন ও মিনহাজুল হক চৌধুরী। আশিয়ান সিটির পক্ষে ছিলেন আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ।

রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা।

অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, এ রায়ের আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ প্রকল্পটির কোনও ধরনের কার্যক্রম চালাতে পারবে না।

এর আগে বৃহস্পতিবার আশিয়ান সিটির রায় স্থগিত চেয়ে চেম্বার জজ আদালতে আবেদন করে রিটকারী পক্ষ। পরে চেম্বার জজ তা শুনানির জন্য পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন।

জানা যায়, ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি হাইকোর্টের বৃহত্তর বেঞ্চ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামতের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখানের আশিয়ান সিটি প্রকল্পটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

এর প্রায় আট মাস পর ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর আশিয়ান সিটি প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওই রায়টি রিভিউ চেয়ে হাইকোর্টে একটি আবেদন করেন।

এর ওপর শুনানি নিয়ে চলতি বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে ২০১৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দেয়া রায়টি কেন পুনর্বিবেচনা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

রুলের ওপর শুনানি শেষে আদালত রায় অপেক্ষমাণ রাখেন।

পরে গত ১৬ আগস্ট বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি নাঈমা হায়দার, কাজী রেজা-উল হকের বৃহত্তর বেঞ্চ আশিয়ান সিটির রিভিউ মঞ্জুর করে রায় দেন।

রিভিউয়ের পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ। অন্যদিকে রিটকারীর পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার ফিদা এম কামাল ও সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

আশিয়ান সিটির রিভিউয়ের ব্যাপারে রিটকারী পক্ষের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘আশিয়ান সিটি ১১শ’ ৯৭ একর জমি ভরাট করতে চায়। কিন্তু যেদিন হাইকোর্ট রায় ঘোষণা করেছিলেন, সেদিনই তারা জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে অনুমতি নিয়েছে। যার কারণে ওরা শুনানির সময় অনুমতিপত্রটি আদালতে দাখিল করতে পারেনি। এজন্য রায়টি রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) চায়। আর আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, তারা এর আগে এ মামলায় আদালতে শুনানি করলেও সে সময় ডিসির কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করার বিষয়টি উত্থাপন করেননি।’

তিনি মনে করেন, এই অনুমতিটা ইচ্ছেকৃতভাবে বের করা হয়েছে, যাতে ইতিপূর্বে দেয়া রায়টি রিভিউ করতে পারেন।

জানা যায়, বেশ কয়েক বছর আগে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড আশিয়ান সিটি নামে একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। প্রকল্প এলাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বিপরীতে হজ ক্যাম্পসংলগ্ন দক্ষিণখান থানার আশকোনা ও কাওলা মৌজা।

অভিযোগ আছে, অনুমতি ছাড়াই প্রকল্প এলাকায় মাটি ভরাটের কাজ শুরু করে। ওই প্রকল্পের কার্যক্রম বন্ধের দাবিতে ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর একটি রিট আবেদন নিয়ে হাইকোর্টে আসে আইন ও সালিশ কেন্দ্র, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি, ব্লাস্ট, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, ইনস্টিটিউট অব আর্কিটেক্ট বাংলাদেশ, নিজেরা করি ও পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন।

রিটকারীদের অভিযোগ, ১৯৭২ সালের ল্যান্ড হোল্ডিং লিমিটেশন অর্ডার অনুসারে বাংলাদেশের কেউ ৩৩ একর বা ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখতে পারেন না। কিন্তু আশিয়ান সিটি প্রকল্পের কাগজপত্র অনুসারে তারা ৪৩ দশমিক ১১ একর ভূমিতে আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন পেলেও কয়েকশ’ একর জমি নিয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু করে। তাছাড়া ওই প্রকল্প এলাকা প্লাবন ভূমি ও নিচু জমি হওয়ায় এবং সেখানে খাল থাকায় জলাধার আইন অনুসারে ওই জমিতে আবাসন প্রকল্প করা যায় না বলেও রিট আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এই রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে ২০১৩ সালের ২ জানুয়ারি হাইকোর্ট অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেন। এতে আশিয়ান সিটি প্রকল্পের মাটি ভরাট, প্লট বিক্রিসহ যেকোনো আঙ্গিকে এর বিজ্ঞাপন প্রচার অবিলম্বে বন্ধের নির্দেশ দেয়া হয়।

একই সঙ্গে রুল জারি করেন। রুলে রাজউকের অননুমোদিত সব প্রকল্পের মাটি ভরাট কার্যক্রম, বিজ্ঞাপন প্রচার ও প্লট বিক্রি বন্ধের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।

আশিয়ান সিটি প্রকল্প এলাকা পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয় রুলে।

গৃহায়ণ সচিব, ভূমিসচিব, পরিবেশ সচিব, স্বরাষ্ট্র সচিব, তথ্য সচিব, রাজউক চেয়ারম্যান, ঢাকা জেলা প্রশাসক, পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক (তত্ত্বাবধান ও বাস্তবায়ন) এবং আসিয়ান সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালককে চার সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

আদালত পরিবেশ অধিদফতরের দেয়া আশিয়ান সিটির অবস্থানগত ছাড়পত্র, এর নবায়ন, আশিয়ান সিটির উত্তরা আবাসিক প্রকল্পকে রাজউকের দেয়া অনুমোদন এবং আশিয়ান সিটিকে অধিদফতরের জরিমানা কমিয়ে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের দেয়া আদেশ স্থগিত করেন।

রিট আবেদন থেকে জানা যায়, জলাশয় ভরাটের অভিযোগে পরিবেশ মন্ত্রণালয় ২০১২ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আসিয়ান সিটিকে করা অধিদফতরের ৫০ লাখ টাকা জরিমানা কমিয়ে পাঁচ লাখ টাকা নির্ধারণ করে।

রুলে ওই প্রকল্পকে দেয়া অবস্থানগত ছাড়পত্র, এর নবায়ন, জরিমানা হ্রাস এবং রাজউকের দেয়া অনুমোদন কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না, তা-ও জানতে চাওয়া হয়।

একই সঙ্গে আসিয়ান সিটির ওই প্রকল্পের অনুমোদন সংক্রান্ত কাগজপত্র আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এ পর্যন্ত কতগুলো প্লট বিক্রি করা হয়েছে, সে-সংক্রান্ত তালিকাও আদালতে দাখিল করতে বলা হয়। এ ছাড়া বেসরকারি আবাসিক প্রকল্প ও ভূমি উন্নয়ন বিধিমালা, ২০০৪ সংশোধনের পর কতগুলো আবাসন প্রকল্পের অনুমোদন দেয়া হয়েছে, সে-সংক্রান্ত তালিকাও দাখিল করতে বলা হয়।

এরপর ২০১৪ সালে এসব রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি হয়। চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে বিচারপতি সৈয়দ এ বি মাহমুদুল হক, বিচারপতি কাজী রেজা-উল হক ও বিচারপতি এবিএম আলতাফ হোসেনের বৃহত্তর বেঞ্চে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতের ভিত্তিতে আশিয়ান সিটি প্রকল্প অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন।

রায়ে এই প্রকল্পে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) অনুমোদন ও পরিবেশ অধিদফতরের দেয়া অনুমতিপত্র বেআইনি ঘোষণা করা হয়। পরিবেশ অধিদফতরের করা ৫০ লাখ টাকা জরিমানার আদেশও বহাল করা হয় এই রায়ে। পরবর্তীতে রায়টি রিভিউ চেয়ে আবেদন করে আশিয়ান সিটি কর্তৃপক্ষ। এই রিভিউ আবেদনের ওপর ১৬ আগস্ট রায় হয়।

Share this content:

Back to top button