আন্তর্জাতিকবাংলাদেশলিড নিউজ

রোহিঙ্গা মুসলিমদের বাদ দিয়েই ‘শান্তি সম্মেলন’ মিয়ানমারের

এবিএনএ : মিয়ানমারের বিভিন্ন অঞ্চলে গত পাঁচ দশক ধরে যে গৃহযুদ্ধের মতো পরিস্থিতি চলছে, সে অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আলোচনা শুরু হয়েছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর শত-শত প্রতিনিধি সরকার ও সেনাবাহিনীর সাথে আলোচনার জন্য রাজধানী নাইপিদোতে জড়ো হয়েছেন।
বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, এ সম্মেলনে রোহিঙ্গা মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলমানদের মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর হত্যা, ধর্ষণ, অগ্নিসংযোগ এবং নির্যাতনের কারণে হাজার-হাজার রোহিঙ্গা মুসলমান তাদের বাড়ি-ঘর থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বুধবার থেকে শুরু হওয়া শান্তি সম্মেলনে তাদের ডাকা হয়নি এবং সে বিষয়টি নিয়ে কোন আলোচনাও হবে না।
এ সম্মেলনে যেসব বিদ্রোহী গোষ্ঠী যোগ দিয়েছে তাদের মধ্যে অন্যতম হলো- কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্স আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি এবং আরাকান আর্মি। মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সুচি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন দেশজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা তার প্রধান লক্ষ্য হবে। কিন্তু তার দল ক্ষমতাসীন হবার পরে উল্টো সহিংসতা বেড়েছে। বিভিন্ন ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠী মিয়ানমারে অধিকতর স্বায়ত্তশাসন চায় এবং দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের উপর তাদের অংশীদারিত্ব পেতে আগ্রহী। কিন্তু মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বরাবরই সেটি উপেক্ষা করেছে। মিয়ানমারের সবচেয়ে সক্রিয় বিদ্রোহী গ্রুপ নর্দার্ন অ্যালায়েন্স শেষ পর্যন্ত এ আলোচনায় যোগ দিয়েছে। ধারণা করা শেষ মুহূর্তে চীনের হস্তক্ষেপের কারণে এ বিদ্রোহী গোষ্ঠী সম্মেলনে আসতে রাজী হয়েছে।
সম্মেলনে সুচি বলেন, ‘ক্ষমতায় আসার পর তারা শান্তি প্রতিষ্ঠার যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন সেটির ফলাফল এখন দৃশ্যমান হয়েছে।’
দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলে ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যকার সংঘাতের কারণে অর্থনৈতিক উন্নয়ন হচ্ছে না। সেসব অঞ্চলের মানুষ দারিদ্রের মধ্যে বসবাস করছে। ক্ষুদ্র জাতি-গোষ্ঠীর মানুষজন বলছেন, সুচি তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছেন না। বরং তিনি সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।
তবে সুচি চেষ্টা করছেন যাতে এসব জাতি-গোষ্ঠীর সাথে সরকার একটি শান্তি চুক্তি করতে পারে। কিন্তু এ সম্মেলনে সেটি হবার কোন আশা নেই। তবে মিয়ানমারের স্বাধীনতার লাভের পর বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সাথে আলোচনা শুরুর বিষয়টিকে অনেক বিশ্লেষক ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন।
১৯৮০’র দশক থেকে মিয়ানমারের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলে সহিংসতা চরম আকার ধারণ করেছে। সেনাবাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর সংঘাতের কারণে হাজার-হাজার মানুষ তাদের বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। অনেকে সীমান্তের অপর পাশে চীনে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছে। অনেক বিশ্লেষক বলছেন, যতক্ষণ পর্যন্ত একটি শান্তি চুক্তিতে পৌঁছানো সম্ভব না হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত এ ধরনের সম্মেলনকে সফল বলা যায় না।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button