আমেরিকালিড নিউজ

কোমি বনাম ট্রাম্প: কে মিথ্যুক?

এবিএনএ : সিনেট ইন্টেলিজেন্স কমিটির সামনে এক সাক্ষ্যে হলফ করে এফবিআইয়ের সাবেক প্রধান জেমস কোমি বলেছেন, ট্রাম্প নির্জলা মিথ্যা কথা বলেছেন। জবাবে ট্রাম্প বলেছেন, তাঁর মুখে কোমি যেসব কথা বসিয়েছেন, তার কোনোটাই তিনি বলেননি। তিনি নয়, মিথ্যা বলেছেন কোমি। তিনি কোমির কাছে আনুগত্য দাবি করেননি, অথবা পদচ্যুত-জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ফ্লিনের বিরুদ্ধে রাশিয়ার সঙ্গে আঁতাত নিয়ে তদন্ত বন্ধের কোনো চাপ দেননি। ট্রাম্প নিজের ব্যাপারে এতটাই নিঃসন্দেহ যে হলফ নিয়ে সিনেট কমিটির সামনে সাক্ষ্য দিতেও তিনি প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন।

তাহলে সত্যি বলছেন কে—কোমি না ট্রাম্প?
অধিকাংশ ব্যাপারের মতো এ ব্যাপারেও আমেরিকা দুই ভাগে বিভক্ত। যাঁরা ট্রাম্পের অনুগত সমর্থক, তাঁরা সবাই মনে করেন, ট্রাম্প শতভাগ সত্য বলছেন। অন্যরা ঠিক উল্টো, তাঁরা মনে করেন ট্রাম্প নয়, সত্যি বলছেন কোমি। এই প্রশ্নে হাফিংটন পোস্ট কর্তৃক গৃহীত সদ্য প্রকাশিত এক জরিপে ৪৬ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁরা কোমির বক্তব্য সত্য বলে মনে করেন। অন্যদিকে মাত্র ২৬ শতাংশ মনে করে, ট্রাম্প সত্যি বলছেন।
এই জরিপে রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট এ রকম কোনো বিভাজন করা হয়নি। কিন্তু শুধু রিপাবলিকানদের যদি কে সত্য বলছেন এই প্রশ্ন করা হয়, তাহলে ট্রাম্পকে বিশ্বাস করে এমন লোকের পরিমাণ সম্ভবত ৮০ শতাংশ হবে। ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ট্রাম্পের সমর্থকদের কথা উল্লেখ করে জানিয়েছে, এ বছর এপ্রিলে যখন সারা দেশের মাত্র ৩৮ শতাংশ মানুষ নিজেদের ট্রাম্পের সমর্থক বলে পরিচয় দেয়, তখন রিপাবলিকানদের মধ্যে ট্রাম্প সমর্থকদের পরিমাণ ছিল ৮১ শতাংশ। কোমির সাক্ষ্যের পর এই ধারা পরিবর্তিত হয়েছে, এ কথা ভাবার কোনো কারণ নেই। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রশ্ন তুলেছে, ঠিক আর কী ঘটলে ট্রাম্পের সমর্থকদের মনোভাব বদলাবে?
ট্রাম্পের সবচেয়ে কট্টর সমর্থকদের মধ্যে রয়েছেন ইভানজেলিক্যাল খ্রিষ্টানেরা। শুক্রবার মার্কিন রাজধানীতে সমবেত হয়েছিল রক্ষণশীল হিসেবে পরিচিত ‘ফেইথ এন্ড ফ্রিডম কোয়ালিশন’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাদের এই সভায় ভাষণ দিতে এলে উপস্থিত দর্শকেরা তাঁকে রক তারকার মতো সংবর্ধনা জানান। এই সংগঠনের প্রধান র‍্যালফ রিড সাংবাদিকদের বলেন, হোয়াইট হাউসে এখন আমরা এমন একজন প্রেসিডেন্ট পেয়েছি, আগে তাঁর মতো কেউই ইভানজেলিক্যালদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ এমন বিষয়গুলোর প্রতি এত মনোযোগ দেননি।
একই দিন নিউইয়র্কে পারসোনাল ডেমোক্রেসি ফোরাম অনুষ্ঠিত হয়, সেখানে অবস্থা ছিল ঠিক উল্টো। ডেমোক্রেটিক সিনেটর ক্রিস্টিন জিলিব্রান্ড এই সভায় বলেন, ট্রাম্প তাঁর কথা রাখেননি, এখন সময় এসেছে তাঁর বিদায়ের ব্যবস্থা করা।
রিপাবলিকান সিনেটরদের বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, আপাতত তাঁরা ট্রাম্পের মাথায় ছাতা ধরা বন্ধ করছেন না। সিনেটের শুনানিতে তাঁদের প্রশ্নের ধরন থেকেই স্পষ্ট ছিল কোমির বক্তব্যের বস্তুনিষ্ঠতা প্রশ্নবিদ্ধ করাই তাঁদের একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল। যেমন আরকানসাস থেকে নির্বাচিত সিনেটর টম কটনের জিজ্ঞাস্য ছিল, কোমি যদি ট্রাম্পের ব্যাপারে এতটাই অসন্তুষ্ট, তাহলে তিনি নিজে থেকেই কেন পদত্যাগ করলেন না। সিনেটর রুবিও, নির্বাচনী প্রচারণার সময় ট্রাম্পের সঙ্গে রীতিমতো বাগ্‌যুদ্ধে নেমেছিলেন। তাঁর জিজ্ঞাস্য ছিল, ট্রাম্প যে ব্যক্তিগতভাবে তদন্তের ‘টার্গেট’ নন, এ কথাটা কেন ফাঁস হলো না। স্পষ্টবাক হিসেবে পরিচিত জন ম্যাককেইনের একমাত্র উদ্বেগ ছিল, কোমি হিলারি ক্লিনটনের ই-মেইল নিয়ে তদন্ত বন্ধের সিদ্ধান্ত নিলেন, অথচ ট্রাম্পের ব্যাপারে সেই একই সিদ্ধান্ত নিতে পারলেন না কেন?
ডেমোক্র্যাটরা অবশ্য আশা করছে, ট্রাম্প যত দ্রুত তাঁর জনপ্রিয়তা হারাবেন, তত দ্রুত তাঁর সমর্থকেরাও দলছুট হবেন। কোমির শুনানির পর ট্রাম্পের জনপ্রিয়তা এখন কোন পর্যায়ে, তার একটি প্রমাণ মিলবে ২০ জুন। এদিনে জর্জিয়ায় মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের একটি শূন্য আসনে মুখোমুখি লড়াইয়ে অংশ নেবেন ডেমোক্রেটিক পার্টির জন অসফ ও রিপাবলিকান পার্টির ক্যারেন হ্যান্ডেল।

Share this content:

Back to top button