আইন ও আদালতলিড নিউজ

রায় কার্যকর হলেই সন্তুষ্ট হবো: সিনহার বোন

এবিএনএ : সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদের বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস বলেছেন, রায় হয়েছে ভালো কথা। কিন্তু এ রায় কার্যকর হলে এবং সকল আসামিদের শাস্তি নিশ্চিত হলেই সন্তুষ্ট হবো। যাদের খালাস দেয়া হয়েছে তাদেরও শাস্তি হওয়া উচিৎ ছিল। সোমবার (৩১ জানুয়ারি) বিকেলে রায় শেষে কক্সবাজার আদালত প্রাঙ্গণে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় প্রধান ২ আসামির ফাঁসির রায়ে দীর্ঘদিনের আশা পূরণ হয়েছে। এ রায়ে আমরা কিছুটা সন্তুষ্ট। ৭ জনকে খালাস না দিয়ে যাবজ্জীবন দেয়া উচিৎ ছিল। কারণ যাবজ্জীবন পাওয়া অপরাধীদের মতো তারাও সমান অপরাধী। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেবো।

শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বলেন, তাদের একদম যে সম্পৃক্ততা নেই সেটা তো সম্ভব না। দায়বদ্ধতা কেউই এড়াতে পারে না। সে ক্ষেত্রে তাদের কিছু সাজা হতে পারতো। তাহলে প্রত্যাশা আরেকটু বেশি পূরণ হয়েছে বলা যেত। আর সন্তুষ্টির ব্যাপার যদি বলেন, তাহলে সেদিনই হবো যেদিন রায় কার্যকর হবে। খালাসপ্রাপ্তদের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে যাবেন কিনা- এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ওই বিষয়ে আমাদের আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলবো। যেহেতু বিশ্লেষণের বিষয় আছে সেহেতু চিন্তা করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।

আপনার মায়ের রায়ের বিষয়ে কোন প্রতিক্রিয়া আছে কিনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, মা টিভি দেখছেন। টিভি দেখেই তিনি বিষয়টি সম্পর্কে জানছেন। আমরা সবসময় এই প্রত্যাশাতেই ছিলাম, যেন প্রধান দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজা হয়। কারণ এটা তো ওপেন জিনিস। এটা না হলেই অবাক হতাম। আমরা বিজ্ঞ আদালতকে ধন্যবাদ জানাই, এতো চুলচেরা বিশ্লেষণ করে রায়টি দিয়েছেন সেজন্য। আর অবশ্যই আমি সন্তুষ্ট। সন্তুষ্ট ও প্রত্যাশা দুই শব্দকে আলাদা করে রেখেছি। সন্তুষ্টির জায়গাটা সেদিন বলবো যেদিন এই রায়টা কার্যকর হবে। তবে আমাদের প্রত্যাশা অনেকখানি পূরণ হয়েছে।

এক বছর পাঁচ মাসের মধ্যে এতো বড় একটি আলোচিত মামলার রায় হয়েছে- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শারমিন বলেন, ‘এটাই আল্লাহর রহমত। আল্লাহ তো তাদেরকেই সাহায্য করে, যারা কাজ করেন। আইনজীবীরা অনেক কষ্ট করেছেন। সবাই অনেক ধৈর্য নিয়ে কাজ করেছেন বলেই আমরা রেজাল্ট পেয়েছি। হতাশ হয়ে যাওয়ার কিছুই নেই। আমরা যদি সত্যি আগ্রহ নিয়ে কাজ করি তাহলে কিন্তু আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। সেটাই আজকের এই রায়ের মাধ্যমে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। এদিকে কক্সবাজারের জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাঈল সোমবার বিকেল সোয়া ৪টার দিকে এ রায় দেন। বহুল আলোচিত এই মামলায় রায় ঘোষণার সময় কক্সবাজার আদালতে ছিলেন মামলার বাদী শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌস।

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম বলেন, সিনহা হত্যা মামলায় ৭ আসামির খালাসে অসন্তুষ্ট আমি। কারণ তারাও অপরাধী। সিনহা হত্যার পেছনে তাদেরও সহযোগিতা ছিল। যদি সহযোগিতা না থাকতো তাহলে তারা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড়াতো না। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত ৩ আসামি নুরুল আমিন, মো. আয়াজ ও নিজাম উদ্দিনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সালাহ উদ্দিন বলেন, আজকে আমার আসামিদের প্রতি প্রকৃত ন্যায়বিচার হয়নি। ঘটনার ৫ দিন পর এসে সিনহার বোন শারমিন তাদের আসামি করেছেন। এটি অন্যায়। আমার আসামিদের যাবজ্জীবন সাজা দেয়াতে আমি অসন্তোষ এবং উচ্চ আদালতে আপিল করবো। তবে এ রায়ে জনসাধারণ ও অনেক আইনজীবীরা বলছেন, অন্যায়ভাবে কাউকে হত্যা করার অপরাধে যে শাস্তি পেতে হয় সেটা সুস্পষ্ট প্রমাণ করেছে আজকের রায়। এই রায়ে সাধারণ মানুষের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে।

কক্সবাজার আদালতের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আয়াসুর রহমান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরা যদি কোন অন্যায় কাজ করে থাকে, তাদেরও যে বিচার হয় আজকের রায় তার উদাহরণ। এই যুগান্তকারী রায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য মাইলফলক হয়ে থাকবে। সাধারণ এবং নিরীহ মানুষ যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তার একটি প্রতিফলন হচ্ছে আজকের এই রায়।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button