জাতীয় দলের পদক জয়ী ষষ্ঠী রায়, কিন্তু ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তায় চোখে-মুখে দুঃচিন্তা
এশিয়ান কাপে হকি খেলেও নিশ্চয়তা নেই ভবিষ্যতের—উপকূলীয় দরিদ্র ঘরের মেয়ের সংগ্রামের গল্প


এবিএনএ: গলায় এশিয়ান কাপের পদক, হাতে হকির স্টিক—তবুও চোখে-মুখে নেই স্বস্তির আলো। সাতক্ষীরার উপকূলবর্তী দরিদ্র পরিবারের মেয়ে ষষ্ঠী রায় যখন দেশের হয়ে পদক জিতে ফিরলেন, তখনও তিনি ভাবছেন—এ অর্জন কি তার জীবনের লড়াই থামাতে পারবে?
শ্যামনগরের কাঠালবাড়িয়া গ্রামের কৃষক সুকান্ত রায় ও গৃহিণী মায়ার মেয়ে ষষ্ঠী। পরিবারের মাত্র ২৬ শতাংশ জমিতে চাষ করে ও দিনমজুরির আয়ে সংসার চলে। দুই বোনের বিয়ে হয়ে গেছে, বাকি দুই বোনের দায়িত্ব মা-বাবার সঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন ষষ্ঠী ও তার ছোট বোন।
খেলাধুলার প্রতি ভালোবাসা শুরু ফুটবল দিয়ে, বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্টে নজর কাড়েন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হয়ে। পরে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে উঠে খেলোয়াড় হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লক্ষ্যে বিকেএসপিতে ভর্তির চেষ্টা করেন। প্রথমবার বাদ পড়লেও ২০২১ সালে খুলনার ট্রায়ালে হকির দলে সুযোগ পান—এবং সেটিই হয়ে ওঠে জীবনের মোড় ঘোরানো মুহূর্ত।
জাতীয় হকি দলে জায়গা করে নিয়েছেন ষষ্ঠী। সম্প্রতি শেষ হওয়া এশিয়ান কাপ হকি টুর্নামেন্ট থেকে পদকও জিতেছেন। তবে সুখবরের পরেই আসে বাস্তবতা—বিকেএসপিতে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে তার পরিবারকে প্রতিবছর প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়।
ষষ্ঠীর বক্তব্য, “পদক বা সম্মান থাকলেও আর্থিক নিরাপত্তা নেই। পুরুষদের মত নারীদের জন্য হকি লিগ বা প্রিমিয়ার ডিভিশন নেই। সরকার বা ফেডারেশন যদি নারীদের জন্য আলাদা লিগ চালু করত, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত হতো।”
তিনি আরও জানান, সাতক্ষীরার উপকূলীয় জনপদে রয়েছে অসংখ্য প্রতিভাবান কিশোরী, যারা খেলাধুলায় দেশের গৌরব বয়ে আনতে পারে—শুধু প্রয়োজন সহায়তা ও পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ সুবিধা।
ষষ্ঠীর বাবা সুকান্ত রায় গর্বিত মেয়ের অর্জনে, কিন্তু একইসঙ্গে দুঃখিত, “জাতীয় দলের হয়ে খেলে এসে মেয়ে আবার কৃষিকাজে নামবে—এটা মানতে পারি না।”
তার দাবি, “দেশের হয়ে যারা খেলেন, তাদের ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। সরকার ও ক্রীড়া সংস্থাগুলোর উচিত স্থায়ী পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া।”
এই দরিদ্র ঘরের মেয়েটি শুধু নিজের জন্য নয়, তার মত হাজারো প্রতিভাবান কিশোরীর জন্য স্বপ্ন দেখছেন—যাতে ষষ্ঠীর পথ হয়ে উঠতে পারে আগামী প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা।