লাইফ স্টাইললিড নিউজ

দশ দিক সামলেও মেদ ঝরাবেন যেভাবে

এবিএনএ: অনেকেরই ধারণা আছে, বাড়িতে ও অফিসে সারাদিন প্রচুর খাটছেন মানে আপনার ওজন ও শরীরের বাড়তি মেদ আপনা আপনিই কমে যাচ্ছে। কিন্তু এই ধারণা ভুল। নিজের শরীরকে চিনতে গোড়ার এই গলদটা করে ফেলেন বেশির ভাগ নারীই। তবে বিচলিত হওয়ার কিছু নেই। দশ দিক সামলেও বাড়িতেই কীভাবে শরীরের অতিরিক্ত ওজন ও মেদ ঝরাবেন সেই উপায় আছে আপনার হাতের নাগালেই।

প্রথমেই জানতে হবে উচ্চতা অনুযায়ী আপনার ওজন কত হওয়া উচিত। ব্যস্ত মানুষরা এমনিই নিজেদের প্রতি খেয়াল কম রাখেন। জিম কিংবা ডায়াটিশিয়ানের কাছে যাওয়াটাও অনেকে বিলাসিতা মনে করেন। তারা ভরসা রাখতে পারেন ‘আমেরিকান কাউন্সিল অন এক্সারসাইজ’-এর উপর। এর গাইডলাইন অনুযায়ী, ওজন কমানোর আদর্শ লক্ষ্য হওয়া উচিত প্রতি মাসে ২-৩ কেজি। বেশি তাড়াহুড়োর প্রয়োজন নেই।

উচ্চতা অনুযায়ী ওজন কত হওয়া উচিত, তাও হিসাব করতে পারেন সহজে। ইঞ্চি প্রতি এক কেজি। যদি আপনার উচ্চতা হয় ৫ ফুট অর্থাৎ ৬০ ইঞ্চি, তবে পুরুষদের ক্ষেত্রে ওজন হওয়া উচিত ৬০ কেজির আশপাশে। নারীদের ক্ষেত্রে এই হিসাবে চার-পাঁচ কেজি কমিয়ে নিতে হবে। অর্থাৎ ৫ ফুট লম্বা নারীর ওজন থাকতে হবে ৫০-৫৫ কেজির মধ্যে। টার্গেট একবার ঠিক করে নিলে আপনা থেকেই ক্যালরি ইনটেক ও বার্ন করার হিসাবটা পরিষ্কার হয়ে যাবে।

সারাদিন আপনার কতটা ক্যালরি দরকার, তার একটা হিসাব করে নিলে কতটা বার্ন করা প্রয়োজন, সেটা বুঝতে পারবেন। একজন পূর্ণবয়স্ক নারীর দিনে ২০০০ কিলোক্যালরি হলেই চলে। এবার যতটা ইনটেক করা হচ্ছে, ততটাই এক্সারসাইজ করে বার্ন করে ফেললে কিন্তু কমার সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে ঘাটতি তৈরি করা প্রয়োজন। এই ডেফিসিট ক্যালরি তৈরির সহজ প্রক্রিয়া হল, প্রত্যেক দিন ডায়েট থেকে ২৫০ ক্যালরি কমানো এবং একইসঙ্গে এক্সারসাইজ করে ২৫০ ক্যালরি কমানো। এতে শরীরে প্রয়োজনীয় ক্যালরির ঘাটতি তৈরি হবে, যার ফলে ওজন কমবে।

তবে এ ক্ষেত্রে ছোট ছোট টার্গেট করে এগোনোই ভালো। কারণ এই প্রক্রিয়ায় বারবার খিদে পেতে পারে এবং কিছুটা দুর্বলও লাগতে পারে। যেহেতু সাধারণত ক্যালরি মাপার ঝক্কিতে যেতে চান না অনেকে, তাই ডায়েটে পরিবর্তন এনে হিসাব রাখতে পারেন এই ভাবে- আগের চেয়ে দুহাতা ভাত কমালেন কিংবা চার টুকরোর বদলে দুই টুকরো মাংস খেলেন, এই আর কী।

সারাদিন যতই কাজ করুন, নিয়ম করে অন্তত আধ ঘণ্টা আলাদা করে রাখুন শারীরচর্চার জন্য। কার্ডিয়ো আর স্ট্রেংথ এক্সারসাইজে ১৫ মিনিট করে ভাগ করে নিন আপনার ঘরোয়া জিম রুটিন। আবাসন কিংবা বাড়ির কাছে সুইমিং পুল থাকলে সাঁতারে ভর্তি হয়ে যান। কাছাকাছি মাঠ থাকলে জোরে হেঁটে আসুন আধ ঘণ্টা। সাইকেলও চালাতে পারেন। হাঁটার জায়গা না থাকলে ঘর কিংবা বারান্দাতেও স্পট রানিং করতে পারেন। প্রথম প্রথম ৩০-৪০ সেকেন্ড করে বিশ্রাম নিন। ধীরে ধীরে সময়টা বাড়ান। স্পট হাই নি কিংবা জাম্পিং জ্যাকের মতো ব্যায়ামও খুব ভালো কার্ডিয়ো এক্সারসাইজ।

কোমর ও পায়ের জয়েন্ট এবং পেশির জোর বাড়াতে স্কোয়াট, লাঞ্জ কিংবা বাড়ির সিঁড়িতে স্টেপ আপ করতে পারেন। আর একটি ভালো স্ট্রেংথ এক্সারসাইজ হল দুহাতে দুটি দুই লিটারের পানির বোতল নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করা। দুই লিটারের পানির বোতল দুই কেজি ওজনের ডাম্বল তোলার সমান। এ ছাড়া পুশ আপ করতে পারেন আপার বডি শেপে আনার জন্য। বেলি ফ্যাট কমাতে করুন এয়ার সাইক্লিং। স্কিপিং, এয়ার বক্সিংও করুন ঘাম ঝরিয়ে।

যদি তাড়াতাড়ি ওজন কমানোই হয় লক্ষ্য, তাহলে যোগব্যায়ামের চেয়ে এক্সারসাইজ বেশি কার্যকর। তবে যোগব্যায়ামের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী এবং সুদূরপ্রসারী। মনে প্রশান্তি, চিন্তাভাবনায় স্বচ্ছতা, একাগ্রতা, শরীরে নমনীয়তা ইত্যাদির জন্য যোগাসনের বিকল্প নেই। যোগাসন এবং এক্সারসাইজ দুটিই সময় ভাগ করে নিয়ে করতে পারেন। যোগব্যায়াম বা প্রাণায়াম শুরু করলে কোনো পেশাদারের পরামর্শ নেয়াই ভালো।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button