আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

বেনজির ভুট্টো হত্যাকাণ্ড যেভাবে চাপা দিয়েছে পাকিস্তান

এবিএনএ : বেনজির ভুট্টো ছিলেন প্রথম নারী, যিনি একটি মুসিলম দেশের নেতৃত্ব দেন। আততায়ীর হাতে তিনি নিহত হওয়ার এক দশক পরে এসে দেখা যাচ্ছে, তার হত্যার প্রকৃত হুমুকদাতা কে ছিল, তাকে খুঁজে বের না করে, তার চেয়ে বেশি আড়ম্বর করে জানানো হয়েছে, এ নিয়ে পাকিস্তান কী কী করেছে।
বিলাল নামে ১৫ বছর বয়সি এক আত্মঘাতীর হামলায় ২০০৭ সালের ২৭ ডিসেম্বর নিহত হন বেনজির ভুট্টো। ওইদিন রাওয়ালপিন্ডিতে একটি নির্বাচনী জনসভা শেষে গাড়িবহরের দিকে আসার সময় তার ওপর প্রথমে গুলি চালায় এবং পরে নিজের কাছে থাকা বোমার বিস্ফোরণ ঘটায় বিলাল। পাকিস্তান তালেবান তাকে এ হামলা চালাতে বলেছিল।
গণতান্ত্রিক নির্বাচিত পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টোর কন্যা বেনজির ভুট্টো। স্বৈরশাসক জেনারেল জিয়া-উল হকের আমলে জুলফিকার আলীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার রাজনৈতিক জীবন অকালে শেষ করে দেওয়া হয়। এরপর ১৯৯০-এর দশকে দুইবার পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হন বেনজির। কিন্তু সেনাবাহিনী সবসময় তার পিছে লেগে থাকত এবং দুর্নীতির অভিযোগ এনে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করে ছাড়ে।
মৃত্যুর সময় তৃতীয় মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন তিনি। আততায়ীর হাতে তার মৃত্যুর খবরে পাকিস্তানে বেসামরিক জনগণের মধ্যে ব্যাপক অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। তার সমর্থকরা রাস্তায় নেমে আসে, আগুন জ্বালিয়ে সড়ক অবরোধ করে এবং পাকিস্তানবিরোধী স্লোগানে প্রকম্পিত হয় দেশ।
জেনারেল ও টেলিফোনে হুমকি
বেনজির হত্যাকাণ্ডের সময়ে পাকিস্তানের নেতৃত্বে থাকা জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এক দশক পরে এসে দাবি করলেন, তার হত্যার সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের লোকজন জড়িত থাকতে পারে। এই হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে তালেবানের সঙ্গে রাষ্ট্রযন্ত্রের দুর্বৃত্তদের যোগসাঁজশ ছিল কি ছিল না- জানতে চাইলে মোশাররফ বলেন, ‘সম্ভবত। থাকতে পারে। ধর্মীয় মত-পথ নিয়ে সমাজে বিভক্তি আছে।’ তিনি যুক্ত করেন, সমাজের ওইসব বিভক্ত অংশ তার মৃত্যুর কারণ হয়ে থাকতে পারে।
পাকিস্তানের একজন প্রাক্তন রাষ্ট্রপ্রধানের এ ধরনের বিবৃতিতে অবাক করার মতো। সহিংস জিহাদি হামলার সঙ্গে রাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ  পাকিস্তানের সামরিক নেতারা সাধারণত অস্বীকার করে থাকেন। বেনজির হত্যাকাণ্ডে পাকিস্তানের রাষ্ট্রযন্ত্রের কোনো দুর্বৃত্ত অংশের জড়িত থাকার সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ তার কাছে কিনা- জানতে চাইলে মোশাররফ বলেন, ‘আমরা কাছে নির্দিষ্ট কোনো তথ্য নেই। তবে আমি করি, আমার অনুমান খুবই সঠিক। পশ্চিমের দিকে ঝোঁক থাকার জন্য যে নারী পরিচিত, তার বেলায় এ ধরনের দুর্বৃত্ত অংশের চোখ পড়তেই পারে।’
বেনজির ভুট্টো হত্যা মামলায় মোশাররফ নিজেও অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে হত্যা, হত্যার ষড়যন্ত্র ও হত্যায় সহায়তা করার অভিযোগে মামলা রয়েছে। বেনজির ভুট্টোর আইনজীবীরা বলেছেন, স্বেচ্ছানির্বাসন থেকে দেশে ফিরে আসার তিন সপ্তাহ আগে ওই বছর ২৫ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে থাকা অবস্থায় তাকে ফোন করেছিলেন জেনারেল মোশাররফ।
বেনজির ভুট্টোর দীর্ঘদিনের সহযোগী মার্ক শেগাল ও সাংবাদিক রন সাস্টিন্ড উভয়ে বলেছেন, ফোন কল আসার সময় তারা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। শেগালের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ফোনে কথা বলার পরপরই বেনজির তাদের বলেছিলেন, তিনি (মোশাররফ) আমাকে হুমকি দিয়েছেন। দেশে না ফিরতে বলেছেন। ফিরে না যেতে তিনি আমাকে হুঁশিয়ার করেছেন।’
সেগাল বিবিসি বলেছেন, মোশাররফ তাকে বলেছিলেন, দেশে ফিরলে তার যদি কিছু হয়ে যায়, তাহলে সেজন্য তিনি দায়ী থাকবেন না। তিনি আরো বলেছিলেন, ‘তার নিরাপত্তা ও বিপদ মুক্ত থাকা নির্ভর করছে তার (মোশাররফ) সঙ্গে সম্পর্কের ওপর।’
তবে বেনজিরকে ফোন করার কথা পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন এবং তাকে হত্যার নির্দেশ দেওয়ার অভিযোগও প্রত্যাখ্যান করেছেন। সম্প্রতি বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ‘এমন প্রশ্ন শুনলে আমার হাসি পাই। কেন আমি তাকে হত্যা করতে যাব?’
মারাত্মক ষড়যন্ত্র
দুবাইয়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকায় মোশাররফের বিরুদ্ধে মামলা স্থগিত রয়েছে। তবে বেনজিরের ছেলে ও তার রাজনৈতিক উত্তরাধিকারী বিলাওয়াল ভুট্টো মোশাররফের অস্বীকৃতিকে প্রত্যাখ্যান করেছেন। বিলাওয়ালের দাবি, ‘আমার মাকে হত্যার পুরো ষড়যন্ত্র করেছেন মোশাররফ।’ আরো অভিযোগ করেছেন, ‘তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে তার নিরাপত্তা দুর্বল করে রেখেছিলেন, যেন তিনি গুপ্তহত্যার শিকার হন এবং দৃষ্টির বাইরে চলে যান।’

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button