বাংলাদেশ

গোপালগঞ্জে রক্তাক্ত সহিংসতার জেরে ৪টি হত্যা মামলা, আসামির সংখ্যা ছয় হাজার ছাড়িয়েছে

জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশ ঘিরে সংঘর্ষের চার দিন পর একাধিক হত্যা মামলা দায়ের, প্রতিটি মামলায় আসামি দেড় হাজারের বেশি

এবিএনএ:  গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আয়োজিত পদযাত্রা ও সমাবেশকে কেন্দ্র করে গত সপ্তাহে ঘটে যাওয়া সহিংস ঘটনায় চারজন নিহত হওয়ার ঘটনায় চার দিন পর দায়ের করা হয়েছে চারটি পৃথক হত্যা মামলা। প্রতিটি মামলাতেই আসামি করা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও তাদের অঙ্গসংগঠনের অজ্ঞাত পরিচয়ের ১,৪০০ থেকে ১,৫০০ জন কর্মীসহ ছয় হাজারের বেশি মানুষকে।

রোববার দুপুরে গোপালগঞ্জ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মির মোহাম্মদ সাজেদুর রহমান এই তথ্য নিশ্চিত করেন। জানা গেছে, সহিংসতায় নিহত আরও একজন রিকশাচালকের মৃত্যুর ঘটনায় আরও একটি হত্যা মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

সদর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আইয়ুব হোসেন বাদী হয়ে প্রথম মামলাটি করেছেন রমজান কাজী (১৭) হত্যার ঘটনায়। এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত বুধবার শান্তিপূর্ণভাবে পদযাত্রা শেষে এনসিপির গাড়িবহর মাদারীপুরের উদ্দেশে রওনা দেয়। শহরের এসকে সালেহিয়া মাদ্রাসার সামনে পৌঁছালে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের সদস্যরা দেশীয় অস্ত্র ও আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে তাদের ওপর হামলা চালায়। পুলিশের বাধা উপেক্ষা করে তারা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপরও গুলি চালায়। এতে রমজান কাজী গুলিবিদ্ধ হন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর তার মৃত্যু হয়।

একইদিন দীপ্ত সাহা (২৭) নামের একজন এনসিপি কর্মী নিহত হন সেনা-পুলিশকে লক্ষ্য করে চালানো গুলিতে। এই ঘটনার মামলা করেছেন এসআই শামীম হোসেন, যেখানে ১,৪০০–১,৫০০ অজ্ঞাত আসামিকে উল্লেখ করা হয়েছে।

তৃতীয় মামলা করেন এসআই আবুল কালাম আজাদ, সোহেল রানা মোল্লা (৩০) হত্যার ঘটনায়। এজাহারে বলা হয়, লঞ্চ ঘাট এলাকায় সংঘর্ষ চলাকালে তিনি গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।

চতুর্থ মামলাটি করেন এসআই শেখ মিজানুর রহমান, যেখানে বলা হয়, পুরাতন সোনালী ব্যাংকের সামনে সংঘর্ষে ইমন তালুকদার (১৭) গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

এছাড়া, রাজধানীর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রিকশাচালক রমজান মুন্সী (৩২)। তার মৃত্যুর ঘটনায়ও পৃথক একটি হত্যা মামলার প্রস্তুতি চলছে বলে জানিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

এখনও নিহতদের মধ্যে চারজনের ময়নাতদন্ত হয়নি বলে জানা গেছে। তবে প্রশাসন জানিয়েছে, বিলম্ব হলেও তদন্ত ও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। দীপ্ত সাহার মরদেহ দাহ করা হয়ে যাওয়ায় সেখানে বিশেষ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

গোপালগঞ্জে এই সহিংসতা শুধু রাজনৈতিক উত্তেজনা নয়, বরং এলাকায় আইনশৃঙ্খলার অবনতির বার্তাও দিয়েছে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button