বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে ১৫ ঘণ্টা ফেরি বন্ধ, চরম দুর্ভোগে যাত্রীরা
ইজারা নিয়ে দুই পক্ষের দখল-পাল্টা দখল, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে ফের ফেরি চলাচল শুরু


এবিএনএ: শরীয়তপুরের নরসিংহপুর ফেরিঘাটে ইজারাকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘাতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বৃহস্পতিবার গভীর রাতে শুরু হওয়া এই অচলাবস্থা শেষ হয় শুক্রবার সন্ধ্যায় সেনাবাহিনীর সরাসরি হস্তক্ষেপে।
স্থানীয় সূত্র ও বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের মতে, ইজারার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে শরীয়তপুর ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জিসান বালা এবং যুবদলের সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মমিন দিদারের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়।
জিসান বালার অনুসারীরা রাত ৩টার দিকে চাঁদপুর-শরীয়তপুর সড়ক অবরোধ করেন। অন্যদিকে, মমিন দিদারের পক্ষের লোকজন নরসিংহপুর ফেরিঘাট দখল করে নেন এবং প্রতিপক্ষকে সেখান থেকে সরিয়ে দেন। ফলে ফেরি চলাচল সম্পূর্ণভাবে বন্ধ হয়ে যায়।
চার শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে
এই ঘটনায় ফেরিঘাট এলাকায় চার শতাধিক যানবাহন আটকা পড়ে। যানবাহনের চালক ও যাত্রীরা দীর্ঘ সময় ধরে প্রচণ্ড গরমে বসে থাকতে বাধ্য হন।
ট্রাকচালক নজরুল ইসলাম বলেন, “রাত ৩টার দিকে ঘাটে আসি, এখন দুপুর হয়ে গেছে। কাঁচামাল পচে গেলে আমাদেরই ক্ষতি। কোম্পানি টাকা কেটে রাখবে।”
গরু ব্যবসায়ী রুবেল মিয়া জানান, “ট্রাকে ২৫টি গরু নিয়ে যাচ্ছি টেকনাফ। এখন পর্যন্ত দুটি গরু অসুস্থ হয়ে গেছে। এই সমস্যা কাদের কারণে— সেটা জানতেই চাই না, শুধু দ্রুত ফেরি চালু হোক।”
আইনি দ্বন্দ্ব এবং আদালতের আদেশ
২০২৫-২৬ অর্থবছরে বিআইডব্লিউটিএ নতুন ইজারা দেয় জিসান বালাকে। তবে দাবি রয়েছে, উচ্চ আদালতের এক আদেশে মমিন দিদারকে বৈধ ইজারাদার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
জিসান বলেন, “আমি বৈধ ইজারাদার, সরকারের কাছ থেকে ইজারা পেয়েছি। কিন্তু মমিনের লোকজন জোর করে ফেরিঘাট দখল করে গাড়ি বন্ধ করে চাঁদাবাজি করছে।”
অন্যদিকে মমিন দিদারের দাবি, “উচ্চ আদালতের রায়ে আমি বৈধ ইজারাদার হয়েছি। আমার লোকজন ঘাটে নিয়ম মেনেই কাজ করছে। ঝামেলা করছে জিসানের অনুসারীরা।”
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ
বিআইডব্লিউটিএ’র ঘাট ব্যবস্থাপক ইকবাল হোসেন জানান, প্রশাসন এবং সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার পর ফেরিগুলো আবার যানবাহন পারাপার শুরু করে।
এই ঘটনার ফলে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে চট্টগ্রাম রুটের যান চলাচলে বড় ধরনের বিঘ্ন ঘটে। পরিস্থিতি যাতে আবার না ঘটে, সে জন্য প্রশাসন সতর্ক রয়েছে বলে জানা গেছে।