স্বাধীনতা পাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক: আসছে সাংবিধানিক মর্যাদা ও শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণব্যবস্থা
গভর্নর-ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে সংসদের অনুমোদন বাধ্যতামূলক, থাকছে না সরকারি আমলা, পরিচালিত হবে স্বায়ত্তশাসিত পর্ষদের মাধ্যমে


এবিএনএ: বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে শুধু আর্থিক নয়, রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেও পাবে সাংবিধানিক মর্যাদা—এমন উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন একটি আইন (বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডিন্যান্স ২০২৫) প্রণয়নের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে দেওয়া হচ্ছে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসন ও নীতিনির্ধারণী ক্ষমতা।
নতুন আইনের খসড়া অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্ব থাকবে স্বতন্ত্র পরিচালনা পর্ষদের ওপর, যেখানে কোনো সরকারি কর্মকর্তা থাকতে পারবেন না। পর্ষদে থাকবেন আটজন সদস্য, যাদের আর্থিক, ব্যাংকিং, বাণিজ্য বা আইনি বিষয়ে ন্যূনতম ১৫ বছরের অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। গভর্নরের প্রস্তাবিত তালিকা থেকে সরকার পর্ষদ সদস্য নিয়োগ দেবে।
🔶 গভর্নর ও ডেপুটি গভর্নর নিয়োগে কঠোর নিয়ম
নতুন আইনে বলা হয়েছে, গভর্নর পদে নিয়োগ পেতে হলে সংসদের অনুমোদন প্রয়োজন। একইভাবে ডেপুটি গভর্নররাও নিয়োগ পাবেন গভর্নরের সুপারিশ ও সংসদের অনুমোদনের মাধ্যমে। পদগুলোতে ছয় বছরের মেয়াদে নিয়োগ দেওয়া হবে এবং একবার পুনঃনিয়োগের সুযোগ থাকবে। নিয়োগের আগে তাঁদের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির সামনে শপথ নিতে হবে।
🔶 অপসারণ হবে নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে
কেউ যদি দায়িত্বে অনিয়ম করেন, আস্থা ভঙ্গ করেন বা ব্যাংকের স্বার্থবিরোধী কোনো কাজ করেন, তাহলে প্রধানমন্ত্রী ও সংসদের সম্মতিক্রমে রাষ্ট্রপতি অপসারণ করতে পারবেন। তবে আগে কারণ দর্শানোর সুযোগ দিতে হবে এবং শুনানিও নিতে হবে।
🔶 পর্ষদের অধীনেই সব সিদ্ধান্ত
পর্ষদ নিয়ন্ত্রণ করবে মুদ্রানীতি, আর্থিক স্থিতিশীলতা এবং ব্যাংক তদারকি। পর্ষদ বছরে অন্তত ছয়বার এবং প্রতি ত্রৈমাসিকে অন্তত একবার বৈঠক করবে। গভর্নর থাকবেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে এবং পর্ষদের বাইরে থাকা বিষয়ে এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। তাঁকে সহায়তা করবে একটি নির্বাহী উপদেষ্টা কমিটি।
🔶 অর্থনৈতিক সমন্বয়ে আসছে নতুন প্ল্যাটফর্ম
মুদ্রা ও বিনিময় হারের সমন্বয় নিশ্চিত করতে গঠন করা হবে “সমন্বয় পরিষদ”। এতে অর্থমন্ত্রী হবেন সভাপতি এবং সদস্য হিসেবে থাকবেন বাণিজ্যমন্ত্রী, পরিকল্পনামন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। এই পরিষদ বাজেট প্রণয়ন, বেসরকারি ঋণ মূল্যায়ন এবং রাজস্ব-ব্যয়ের ভারসাম্য নিশ্চিত করবে।
🔶 ব্যাংক রেজল্যুশনে বাধ্যতামূলক ক্ষমতা
আইন অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক এখন থেকে বাধ্যতামূলক ব্যাংক রেজল্যুশনের ক্ষমতা পাবে। কোন ব্যাংক যদি ঝুঁকিতে পড়ে, তবে মূলধন পুনর্গঠন, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপসহ তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নিতে পারবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
🔶 আন্তর্জাতিক পরামর্শক যুক্ত
এই খসড়া প্রণয়নে নেতৃত্ব দিয়েছেন সাকের সিদ্দিকী, যিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল রিজার্ভের সাবেক কর্মকর্তা এবং বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের উপদেষ্টা। তাঁর নেতৃত্বে প্রস্তাবনাগুলো ইতিমধ্যে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পাঠানোর প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
🔶 বিশ্লেষকদের মত
বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, “স্বায়ত্তশাসন শুধু নামেই হলে চলবে না, গভর্নর নিয়োগ হবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। একটি সার্চ কমিটির মাধ্যমে যোগ্য ব্যক্তি নির্বাচন করতে হবে।”