এবিএনএ : আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কোন সরকারের অধীনে হবে তা রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই নির্ধারিত হবে বলে মনে করেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. আকবর আলি খান। নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করে কোনো লাভ হবে না, সরকারের পছন্দের লোক দিয়েই ইসি গঠন হবে বলেও মনে করেন তিনি।
শনিবার (১ জানুয়ারি) সকালে এফডিসিতে ‘সুশাসন নিশ্চিতকরণে স্থানীয় সরকারের ভূমিকা’ নিয়ে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির আয়োজিত ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।
রাষ্ট্রপতির চলমান সংলাপ প্রসঙ্গে আকবর আলি খান বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য সার্চ কমিটি করে কোনো লাভ হবে না। সরকারের পছন্দের তালিকাভুক্ত লোক দিয়েই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হবে। বর্তমান কে এম নুরুল হুদা কমিশন আইনের সঠিক প্রয়োগ করে নাগরিক অধিকার সুরক্ষা ও ভালো নির্বাচন করতে পারতো, যা বাস্তবে হয়নি।’
স্থানীয় সরকার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে সত্যিকার অর্থে স্থানীয় সরকার নেই। মূলত কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণেই স্থানীয় সরকার চলছে। স্থানীয় সরকারের আর্থিক ক্ষমতা নাই। এখানে জনপ্রতিনিধি ও স্টাফদের বেতন কেন্দ্রীয় সরকারের বরাদ্দ থেকে আসে। বাংলাদেশে কেন্দ্রীয় সরকার এতিম নয়, বরং তা এত বেশি ক্ষমতাশালী যা পৃথিবীর অন্য কোথাও নেই। আবার স্থানীয় সরকারের এমপিদের উপদেষ্টা হওয়ার নিয়ম একমাত্র বাংলাদেশেই আছে।’
আকবর আলি খান বলেন, ‘স্থানীয় সরকারের অনিয়ম ও অভিযোগের তদন্ত করে থাকে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। অথচ এ ধরনের তদন্তের জন্য স্বাধীন কমিশন থাকা উচিত। অতীতে একটি কমিশন থাকলেও তা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। স্থানীয় সরকারের ক্ষমতায়ন করতে হলে বর্তমান আইন পরিবর্তন করতে হবে।’
সভাপতির বক্তব্যে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসির চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ‘সুশাসন নিশ্চিত করতে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা জোরদার করতে হবে। সেক্ষেত্রে শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন গঠন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিদায়ী নুরুল হুদা কমিশন তাদের সময়কালে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করতে পারেনি। তাই আগামী নির্বাচন কমিশন গঠনে মহামান্য রাষ্ট্রপতিকে সকল রাজনৈতিক দলের মতামত গ্রহণের লক্ষ্যে আরও বেশি বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করতে হবে। তবে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন নিয়ে পূর্বের অভিজ্ঞতার আলোকে বলতে হয় এই সংলাপ নিতান্তই আনুষ্ঠানিকতা মাত্র। নির্বাচন কমিশন গঠনে রাষ্ট্রপতির এই সংলাপে বিএনপি, বাসদ, সিপিপি সহ অন্যান্য দলের অংশগ্রহণ না করায় সংলাপের গুরুত্ব হারাবে। দলীয় প্রতীকে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন হওয়ায় সব চেয়ে যোগ্য, জনপ্রিয় ও গ্রহণযোগ্য প্রার্থী বিজয়ী হতে পারছে না। অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় প্রার্থীরা নির্বাচিত হচ্ছে। ফলে তৃণমূল পর্যায়ে মানুষ সঠিক জনপ্রতিনিধি পাচ্ছে না। অনেক ভালো মানুষ স্থানীয়ভাবে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিরা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধি হওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বিনা ভোটে জয়ী হবার প্রবণতা অনেক বেশি দেখা গেছে এবারের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে। সাংবিধানিক নির্দেশনার আলোকে বিনা ভোটে যারা চেয়ারম্যান হয়েছেন, তাদেরকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি বলা যাবে কি না তা নিয়ে রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন অভিমত।’
প্রতিযোগিতায় সরকারি তিতুমীর কলেজকে পরাজিত করে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদপত্র প্রদান করা হয়। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন অধ্যাপক আবু মোহাম্মদ রইস, ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক সবুজ ইউনুস, সাংবাদিক সোমা ইসলাম ও সাংবাদিক কাজী জাবেল।