শুক্রবার অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জিডিপি সম্পর্কে এবার যে নাম্বারগুলো বলেছে তারা সেগুলো করোনার প্রভাবে অর্থনীতির স্বাভাবিক গতি শ্লথ হওয়ার শুরু থেকেই বলে আসছে এবং সেই একই জায়গাতেই তারা এখনো আছে। আমাদের অর্থবছরের তিন মাস পার হয়ে গিয়েছে এখনো নয় মাস সময় রয়েছে। করোনার প্রভাবে যে শ্লথ গতি অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছিল সেটি অনেকটা স্বাভাবিক। স্বাস্থ্য ও মহামারি পরিচালনব্যবস্থার ওপর উল্লেখযোগ্য চাপ সত্ত্বেও সরকারের উপযুক্ত অর্থনৈতিক প্রণোদনা ও সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থা অর্থনীতিকে সুসংহত করেছে, দরিদ্র ও দুর্বলদের জন্য মৌলিক সেবা ও পণ্যাদি নিশ্চিত করেছে। অভ্যন্তরীণ বেসরকারি ও সরকারি ব্যয়, বিনিয়োগ, রপ্তানি এবং রেমিট্যান্সসহ অর্থনীতির প্রায় সব খাত বেশ সক্ষম অবস্থানে রয়েছে।’
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া ইকনোমিক ফোকাস রিপোর্টে বাংলাদেশের জিডিপিতে চলতি ২০২০-২১ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি ১.৬ শতাংশ হবে বলে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে বাংলাদেশে জিডিপি প্রবৃদ্ধি হতে পারে ৩.৪ শতাংশ। করোনা মহামারির প্রভাবে দক্ষিণ এশিয়া নজিরবিহীন অর্থনৈতিক মন্দা পরিস্থিতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলেও উল্লেখ করা হয় ওই প্রতিবেদনে।
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সবাই জানি যে, তাদের প্রক্ষেপণের বৈশিষ্ট্যই হলো অত্যন্ত রক্ষণশীল পদ্ধতি। বিশ্বব্যাংকের এ যাবৎকালের সব প্রক্ষেপণ যদি কেউ একটি তালিকা করে তাহলে দেখা যাবে যে, তারা যে প্রক্ষেপণগুলো করে তা বাস্তবতা হতে অনেক দূরে! আমরা বিশ্বাস করি তারা এবারো সেই গতানুতিক ধারার একটি বিবৃতি প্রকাশ করেছে। আমরা আমাদের সক্ষমতার নিরিখে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করি এবং তা অর্জন করি। অর্জন করে বারবার প্রমাণ করতে হয় আমরা সঠিক। এবারও আমরা কাঙ্ক্ষিত প্রবৃদ্ধি অর্জন করে প্রমাণ করব যে, আমাদের লক্ষ্যমাত্রাই সঠিক। সাম্প্রতিক সময়ে রেমিট্যান্স বাড়লেও এটি সাময়িক মনে করছে অনেকে। বৈধপথে রেমিট্যান্স প্রেরণ উৎসাহিত করার জন্য আমরা যখন প্রণোদনার ব্যবস্থা করেছি তখন অনেকেই বলেছিল রেমিট্যান্সে এর কোনো প্রভাব পড়বে না। কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রণোদনার ফলে রেমিট্যান্স প্রবাহ বেড়েছে।’
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তথাকথিত বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, প্রবাসী আয় বেড়েছে, কারণ করোনার কারণে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমার ভাই-বোনেরা ফিরে আসছেন, তাদের সবকিছু বিক্রি করে চলে এসেছেন, কাজেই এই প্রবৃদ্ধি। কিন্তু তারা হয়তো ভুলে গেছেন, ২ শতাংশ নগদ প্রণোদনা এবং রেমিটেন্স পাঠানোর নিয়ম-কানুন সহজ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কথা। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেশে অর্থ পাঠানোর পরিমাণ বাড়িয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিরা করোনা আসার আগে থেকেই। ২০১৯-২০ অর্থবছরে শুরু থেকেই, যখন করোনা ছিল না, রেমিট্যান্স প্রবাহে ছিল ঊর্ধ্বগতি তাই আগামীতে এ ধারা অব্যাহত নাও থাকতে পারে এমন ভাবনা যৌক্তিক নয়। ২০১১ সালে বিশ্বকাপ ক্রিকেটের উদ্ভোধনী অনু্ষ্ঠানে বিতর্কের মধ্যেই আহ্বান জানিয়েছিলাম ‘ও পৃথিবী এবার এসে বাংলাদেশ নাও চিনে। ও পৃথিবী তোমায় জানাই, স্বাগতম এই দিনে।’ বাংলাদেশের সক্ষমতা ও অর্জন নিয়ে বিদ্যমান বিতর্ক দেখে এখনো আবার সংশ্লিষ্টদের বলতে ইচ্ছে করে, আসুন চিনে নিন এক অন্যরকম নতুন বাংলাদেশ।’
দেশবাসীকে উদ্দেশ্য করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বারবার আমরা বলেছি এদেশের মানুষ এদেশের অর্থনীতির প্রাণশক্তি, তারাই আবার প্রমাণ করবে যে বিশ্বব্যাংক যে প্রক্ষেপণ করেছে তা সামঞ্জস্যহীন। সাহসী বাঙালি জাতি অতীতেও বারবার প্রমাণ করেছে, এবারও পারবে। আমরা সবাই অবগত যে, আমরা সব বাধাবিপত্তি উপেক্ষা করে নিজেদের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে পদ্মা সেতু তৈরি করছি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের মানুষকে বিশ্বাস করে দেশের মানুষের জন্য তিনি বাজেটে প্রবৃদ্ধির যে প্রক্ষেপণ বা রূপরেখা দিয়েছেন, আমরা বিশ্বাস করি সবাই মিলে আমরা তা অর্জন করতে সক্ষম হবো ইনশাআল্লাহ। গত ১০ বছর বাংলাদেশ জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে সবার ওপরে ছিল, আমরা আত্মপ্রত্যয়ী যে ভবিষ্যতেও সে ধারা বজায় থাকবে।’
Share this content: