বাংলাদেশরাজনীতিলিড নিউজ

শাহবাগে ঢাবি শিক্ষার্থীদের মিছিলে জলকামান ও কাঁদানে গ্যাস, আহত ১২

এবিএনএ: নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামা শিক্ষার্থীরা চোখ খুলে দিয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের। বর্তমান পরিস্থিতি বহু দিনের চেষ্টার জাতীয় ঐক্যের পথ খুলে দিয়েছে বলে মনে করেন তিনি। সোমবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘উদ্বিগ্ন নাগরিক সমাজ’ এর ব্যানারে আয়োজিত ‘শিক্ষার্থীদের উপর নিপীড়নের প্রতিবাদ সংহতি সমাবেশে’ যোগ দেন বিএনপি নেতা। ফখরুল বলেন, ‘আমরা আছি আমাদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে। ইনশাল্লাহ আমরা ঐক্যবদ্ধ হব এবং ঐক্যবদ্ধ হয়ে দানব সরকারকে সরাব।’ গত ২৯ জুলাই ঢাকার বিমানবন্দর সড়কে বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পরদিন থেকে ‘নিরাপদ সড়ক’ এর দাবিতে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ অন্য রূপ পেয়েছে ৪ আগস্ট থেকে। সেদিন আওয়ামী লীগ সভাপতির ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে হামলার চেষ্টা, সেই কার্যালয়ে চার জন ছাত্রকে হত্যা ও চার মেয়েকে ধর্ষণের গুজব ছড়ানো, বিএনপি নেতা আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীর সঙ্গে নওমি নামে এক যুবকের কথোপকথন ফাঁস হয়। সেদিনই স্পষ্ট হয়ে উঠে এই আন্দোলনে তৃতীয় পক্ষ ঢুকেছে, যেটি সরকার এর তিন দিন আগে থেকেই সতর্ক করছিল। সবশেষ ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এ বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক করে তাদের ছেলে-মেয়েদের ঘরে ফিরিয়ে নেয়ার অনুরোধ করেন।

শনিবারের সংঘর্ষের পর আর ছোটরা রাস্তায় নামেনি। তবে এরপর বিভিন্ন এলাকায় ‘বড়রা’ নামার চেষ্টা করে। শাহবাগে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জমায়েত থেকে জিগাতলাগামী মিছিলে কাঁদানে গ্যাস ছুড়েছে পুলিশ। আর রামপুরা এলাকায় সংঘর্ষ হয়। আজও আফতাবনগরে ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করতে আসলে তাদের সঙ্গে সংঘর্ষ শুরু হয় পুলিশের। পরে তাতে ক্ষমতাসীন দলের সমর্থকরাও যোগ দেয় পুলিশের সঙ্গে। মির্জা ফখরুল বলেন, “ছাত্রদের আন্দোলন অত্যন্ত সুন্দর, সুশৃঙ্খল।  তাদের একটি ব্যানার খুব ভালো লেগেছে আমার, যেখানে লেখা, ‘রাস্তা বন্ধ। রাষ্ট্র মেরামতের কাজ চলছে। সাময়িক অসুবিধার জন্য দুঃখিত’।  ছেলেরা আমাদের চোখ খুলে দিয়েছে।” ‘আওয়ামী লীগ একটি সংগ্রামী দল। আজ সে দলটিই ছেলেদের উপর গুণ্ডা লেলিয়ে দিয়েছে। ছাত্রলীগ দিয়ে আক্রমণ করেছে। আজকের পত্রিকায় সব এসেছে।’ কারও মায়ের বুক খালি দেখতে চাই না বলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে আহ্বান জানিয়েছেন, তাকে হুমকি হিসেবে দেখছেন ফখরুল। বলেন, ‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও হুমকি দিয়েছেন। এর পরপরই আক্রমণ হয়েছে ছেলেদের উপর।’ ‘অনেকের বাসায় বাসায় হুমকি দিচ্ছে। প্রত্যেক জেলায় গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে। যারা এই আন্দোলনে সংগঠক হিসেবে কাজ করছে তাদের গ্রেপ্তার করছে।’

বিএনপি নেতা বলেন, ‘আমাদের উপর দানব সরকার চেপে বসেছে৷ এই দানব সরকার থেকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশকে রক্ষা করতে হবে। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন সমস্যা নয়। এটি বড় সমস্যা।’ মামলা কোনো ব্যাপার নয় রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগে জননেত্রী পরিষদ নামে একটি সংগঠনের নেতা এ বি সিদ্দিকের মামলার আবেদন করা নিয়েও কথা বলেন ফখরুল। বলেন, এসব মামলাকে তিনি আর পরোয়া করেন না। ‘আমাদের অনেক নেতার বিরুদ্ধে একশর উপর মামলা। আমার বিরুদ্ধে ছিয়াশি ছাড়িয়ে গেছে। আমরা অনেক নির্যাতিত হয়েছি। অনেকবার কারাগারে গিয়েছি। মামলা এখন কোনো ব্যাপার নয়।’ ‘মূল ব্যাপার হলো, আমরা আমাদের ছেলে-মেয়েদের জন্য নিরাপদ রাষ্ট্র রেখে যেতে পারব কি না সেটিই ভাবনার। এটি করা আমাদের কর্তব্য৷’ বিকল্প ধারার সভাপতি এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফর উল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল প্রমুখ এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।

Share this content:

Related Articles

Back to top button