
এবিএনএ: ‘ছাত্রসমাজ কখনই কোটা বাতিল চায়নি, তারা কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিল। আর সরকারি চাকরিতে বিশেষ নিয়োগ ছাত্রসমাজ মেনে নেবে না।’ রোববার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরির সামনে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম ‘বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ’র আহ্বায়ক হাসান আল মামুন। গত ৩ অক্টোবর মন্ত্রীপরিষদের মিটিংয়ে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ও ৪ অক্টোবর কোটা বাতিলের পরিপত্র জারির পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীদের প্রতিক্রিয়া জানাতে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। লিখিত বক্তব্যে হাসান আল মামুন বলেন, বাংলার ছাত্রসমাজ কখনই কোটার বাতিল চায়নি, তারা কোটার যৌক্তিক সংস্কার চেয়েছিলো। কোটা বাতিলের কারণে উদ্ভূত সমস্যার দায়ভার সরকারকেই নিতে হবে। এছাড়া সরকারি চাকরিতে কোনো বিশেষ নিয়োগ দেওয়া যাবে না। বিশেষ নিয়োগ ছাত্রসমাজ মেনে নিবে না। তিনি বলেন, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও কোটার যৌক্তিক সংস্কার করতে হবে। নিয়োগের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে। এ সময় প্রিলিমিনারি, লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার নম্বরসহ ফলাফল প্রকাশের দাবি জানান তিনি। আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহার ও হামলাকারীদের বিচার দাবি করে মামুন বলেন, অন্যথায় ছাত্রসমাজ আবারও রাস্তায় বের হয়ে আসবে। যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন, মুক্তিযোদ্ধা, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী, নারী, প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্দিষ্ট সংখ্যক কোটা রাখা যেতে পারে। যারা প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা ও অস্বচ্ছল অবস্থায় রয়েছে, তাদের আর্থিক সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধারা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান, তাদের আমরা সম্মান জানাই। তাদের সন্তানদের শিক্ষার ব্যবস্থা করা হোক।
যুগ্ম আহ্বায়ক ফারুক হাসান বলেন, সরকার কোটা বাতিলের পরিপত্র জারি করে সব গোষ্ঠীকে সন্তুষ্ট করতে পারে নাই। কোটা বাতিল করায় এখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, তার পুরো দায়ভার সরকারকে নিতে হবে। তবে কোটা বাতিলের এ পরিপত্রকে আংশিক সফলতা হিসেবে দেখছি। শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরি নয়, তৃতীয়, চতুর্থসহ সব ধরনের চাকরিতে পাঁচ দফার আলোকে কোটা সংস্কার করে পরিপত্র জারির দাবি জানান তিনি। বিদ্যমান কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে জোরালো আন্দোলন শুরু করেন। আন্দোলন চলাকালে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। এক পর্যায়ে ১১ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে কোটা বাতিলের ঘোষণা দেন। কিন্তু প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়ায় শিক্ষার্থীরা আবারও আন্দোলনে নামেন। এ সময় আন্দোলনকারীদের ওপর আবারও হামলার ঘটনা ঘটে। এরপর গত ২ জুলাই সরকারি চাকরিতে বিদ্যমান কোটাপদ্ধতি পর্যালোচনা, সংস্কার বা বাতিলের বিষয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলমের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও দপ্তরের সচিবদের নিয়ে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে সরকার। গত ১৭ সেপ্টেম্বর কমিটি তাদের প্রতিবেদন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দেয়।
সরকারের এই কমিটি তাদের প্রতিবেদনে কোটা বাতিলের বিষয়ে বিভিন্ন যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরে। এই কমিটির সুপারিশ অনুমোদন করে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয় মন্ত্রিসভা। প্রথম শ্রেণির চাকরি শুরু হয় নবম গ্রেড দিয়ে। এর ওপরের পদগুলো সাধারণত পদোন্নতির মাধ্যমে পূরণ হয়। আর দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিগুলো ১০ গ্রেড থেকে ১৩ তম গ্রেডের মধ্যে। ব্যতিক্রম ছাড়া শুরুর পদেই নিয়োগ হয় এবং সেখানেই কোটা নির্ধারণ হয়। আগে চাকরি শ্রেণি ভিত্তিতে হলেও এখন গ্রেড ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।
Share this content: