আন্তর্জাতিকলিড নিউজ

‌‘কোনো অজুহাত নয়, স্কুল খুলে দিন’

এবিএনএ : বিশ্বজুড়ে মহামারির মধ্যেও শিশুদের পড়াশোনা যাতে ব্যাহত না হয় সেজন্য কোনো অজুহাত না দিয়ে স্কুলগুলো খোলা রাখার আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশুবিষয়ক তহবিল ইউনিসেফ। গতকাল শুক্রবার ইউনিসেফের নির্বাহী পরিচালক হেনরিয়েটা ফোর এক বিবৃতিতে এ আহ্বান জানান। বিশ্বের সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে ফোর বলেন, ‘কোভিড-১৯ এর ওমিক্রন ধরনটি সারা বিশ্বে যখন ছড়িয়ে পড়ছে, এটি যাতে শিশুদের পড়াশোনাকে ব্যাহত করতে না পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নিতে আমরা সরকারগুলোর প্রতি আহ্বান জানাই।’

বিশ্বজুড়ে স্কুলগুলো পুরোপুরি বা আংশিক বন্ধ থাকার কারণে বর্তমানে প্রায় ৬১ কোটি ৬০ লাখ শিশু ক্ষতিগ্রস্ত- এমন তথ্য উল্লেখ করে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘সংকটময় পরিস্থিতিতে সবসময় কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হয়। কোভিড-১৯ মহামারি বিশ্বজুড়ে শিক্ষা ব্যবস্থায় যে নজিরবিহীন চ্যালেঞ্জ তৈরি করছে, তা আমরা স্বীকার করি। তবে এ ক্ষেত্রে ঝুঁকি খুবই বেশি। শিশুদের স্কুলে রাখার জন্য সম্মিলিতভাবে আমাদের পক্ষে সম্ভব সবকিছু করতে হবে।’

বিবৃতিতে শিশুদের পড়াশোনার ক্ষেত্রে বিপর্যয় এড়াতে এবং শিশুদের তাদের শেখার পথে ফিরিয়ে আনতে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, ‘আমরা জানি যে, ডিজিটাল সংযুক্তির পেছনে বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে পারলেই কোনো শিশু পেছনে পড়ে থাকবে না। প্রতিটি শিশুকে স্কুলে ফিরিয়ে আনতে আমাদের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। এর মধ্যে রয়েছে প্রতিটি কমিউনিটির প্রান্তিক শিশুদের ওপর বিশেষ লক্ষ্য রেখে কিছু বিষয়ে বিস্তৃত সহায়তা প্রদান করা। যেমন- শ্রেণিকক্ষে পাঠদানের ঘাটতি পূরণে অতিরিক্ত ক্লাস নেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সহায়তা, সুরক্ষা এবং অন্যান্য পরিষেবা প্রদান।’

শিক্ষক এবং স্কুল কর্মীদের অবিলম্বে টিকা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, শিক্ষক এবং স্কুল কর্মীদের অবিলম্বে টিকা দিন। প্রথম সারির স্বাস্থ্যকর্মী এবং উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীকে কোভিড-১৯ এর টিকাদানের পরপরই এই টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে শিক্ষক এবং স্কুল কর্মীদের সম্পূর্ণরূপে সমর্থন ও অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সশরীরে স্কুলে যাওয়ার জন্য টিকাদানকে পূর্বশর্ত না করার আহ্বান জানিয়ে বিবৃতিতে ফোর বলেন, ‘অগ্রাধিকার প্রাপ্য জনগোষ্ঠীকে পুরোপুরি সুরক্ষিত করার পর এবং টিকার যথেষ্ট প্রাপ্তি নিশ্চিত হলে ইউনিসেফ শিশুদের টিকাদানকে সমর্থন করে। কোভিড-১৯ টিকা প্রাপ্তি সাপেক্ষে সশরীরে স্কুলে যাওয়ার শর্ত আরোপ করলে তা শিশুদের শিক্ষাগ্রহণের সুযোগ না পাওয়া এবং ক্রমবর্ধমান বৈষম্যের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে ফেলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা সুপারিশের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ইউনিসেফ শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের টিকাদান ছাড়াই স্কুলগুলো খোলা রাখার এবং কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণ কৌশল যাতে পড়াশোনা ও সামাজিক জীবনের অন্যান্য দিকগুলোতে শিশুদের অংশগ্রহণকে সহজতর করে তা নিশ্চিত করার সুপারিশ করে।’

এর আগে ইউনিসেফ তার করা এক জরিপের বরাত দিয়ে জানিয়েছিল, করোনাভাইরাস মহামারিতে বাংলাদেশে দেড় বছরের বেশি সময় স্কুল বন্ধ থাকায় ৩ কোটি ৭০ লাখ শিশুর পড়াশোনা ব্যাহত হয়েছে। মহামারির কারণে দেড় বছর বন্ধ থাকার পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে খোলে বাংলাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। পরে আবারও করোনার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় সরকার নতুন করে ২৩ জানুয়ারি থেকে ৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত স্কুল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছে।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button