আমেরিকালিড নিউজ

আমেরিকার সীমান্তে ‘বর্ণবাদীদের’ হামলার স্বীকার ৯১ বছরের বৃদ্ধ

এবিএনএ : ৯১ বছর বয়সী রোডোল্ফ রদ্রিগেজ। মেক্সিকোর মিচোকান এলাকায় থাকেন। পেশা কৃষিকাজ। পার্শ্ববর্তী দেশ আমেরিকার লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়ার উইলোব্রুকে তার আত্নীয় স্বজনরা থাকেন। বুধবার (৪ জুলাই) তাদের সঙ্গে দেখা করতে বাড়ি বের হয়েছিলেন তিনি। কিন্তু আমেরিকার সীমানা কাছে এলেই ঘটে যায় তার জীবনের ভয়াবহ ‘বর্ণবাদের’ ঘটনা। জানা যায়, বুধবার তিনি সীমান্তের একটি পার্কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন। এমন সময় এক নারী ও বাচ্চা মেয়েকে নিয়ে হাঁটছিল। তাদের ক্রস করে এগিয়ে যাওয়া শুরু করতেই ওই নারী কোন কথা না বলেই তাকে মারতে শুরু করেন। এসময় ওই নারীর সঙ্গে কয়েকজন পুরুষও এগিয়ে এসে ইট দিয়ে আঘাত করতে থাকেন। রদ্রিগেজ বলেন, ওই নারীটি কখন ইট তুলে নিয়েছিল সেটা বলতে পারব না। তবে সে যে বারবার ইট দিয়ে আঘাত করেছে এটুকু মনে আছে। কিছুক্ষণ পর ওই নারীটি পাশেই দাঁড়ানো লোকগুলার কাছে যায় ও তাদের জানায় আমি তার মেয়েকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। এরপর ওই লোকগুলাও তাদের সঙ্গে যোগ দেয়। আমাকে মারতে মারতে রক্তাক্ত করে ফুটপাতে ফেলে দেয়।
অশ্রুসজল চোখে রদ্রিগেজ বলেন, ‘কিন্তু এটা আদৌ সত্য নয়। আমি তার মেয়েকে ধাক্কাও দেই  নি। শুধু তাদের ক্রস করেছি। এরপরই হঠাৎ সে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ইচ্ছেমত মারতে শুরু করে। আমি এত দিন ধরে বেঁচে আছি কিন্তু কখনো কারো ক্ষতি সাধন করিনি।’ আগামি সেপ্টেম্বরে রদ্রিগেজ ৯২ বছরে পা দিবেন। কিন্তু জীবনে তিনি কখনো এমন ভাবে আহত হন নি। স্প্যানিশ ভাষায় রদ্রিগেজ বলেন, ‘আর চলতে পারছি না’ । ‘খুব কষ্ট লাগছে’ রদ্রিগেজের নাতি এরিক মেনডোজা বলেন, মেক্সিকোর মিচোকান লস এঞ্জেলসের ক্যালিফোর্নিয়ার উইলোব্রুকে পরিবারের সাথে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। বছরে তিনি দুইবার যান সেখানে। দুপুরেরে খাবার পর প্রতিবেশী দেশের সীমান্ত হেটেই পার হচ্ছিলেন। দাদাকে দুই সীমান্তের লোকজনই খুব ভালো করে চেনে।এই ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মিবেল বোরজাস। ওই বৃদ্ধকে যখন ইট দিয়ে পেটানো হচ্ছিল তখন তিনি গাড়ি চালিয়ে ওই জায়গা পার হচ্ছিলেন। হঠাৎ বৃদ্ধকে মারার ঘটনায় তিনি গাড়ি থামিয়ে দেখা শুরু করেন। সিএনএনকে মিবেল জানান, ‘হামলাকারীরা যখন ওই বৃদ্ধকে মারছিল তখন তারা বলছিল, তোমার দেশে ফিরে যাও। মেক্সিকোতে ফিরে যাও।’ মোবাইল ফোন দিয়ে এ ঘটনার ভিডিও করতে গেলে তারা আমার দিকেও ইট ছুড়ে মারে। গাড়িতে ভাংচুরের চেষ্টা করে।

ইট হাতে দাঁড়িয়ে থাকা এক নারী
ঘটনার তদন্ত ইতোমধ্যেই শুরু করেছে লস এঞ্জেলসের পুলিশ। সোমবার এক বিবৃতিতে তারা বলেন, হামলারে উদ্দেশ্য কি এবং এসময়ে কোন হাতিয়ার ব্যবহার হয়েছে কি না সেটা জানিনা। আমরা সন্দেহভাজন এক নারী ও তিন/চার পুরুষকে খুঁজছি। থানার ডেপুটি কর্মকর্তা অ্যাঞ্জেলো রবিনসন বলেন, এখানে যে ধরনের অপরাধ সংগঠিত হয়েছে সেটা নিয়ে আমরা সতর্ক আছি। আতঙ্কের বিষয়টা হল ৪ বছরের একটা শিশু সেখানে ছিল। যার চোখের সামনেই পুরো ঘটনাটি ঘটেছে। এ ধরনের উগ্র মানসিকতার ব্যক্তিদের আমরা রাস্তায় বের হতে দিতে পারি না। হামলায় রদ্রিগেজের চোয়াল, কাঁধ, বুকের দুটি হাড় ভেঙ্গে গেছে। মাথা, পিট ও পেটে ব্যাপকভাবে ছিলে রক্তক্ষরণ হয়েছে। ইতোমধ্যে তার চিকিৎসার ব্যয়ভার মেটানোর জন্য গো ফান্ড মি ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে।
মেনডোজা বলেন, আমাদের একটা ধারনা আছে কে এই হামলা করতে পারে। তবে চাই পুলিশ তাদের খুঁজে বের করুক। আমার দাদা যেন সুবিচার পায়।

Share this content:

Related Articles

Back to top button