এ বি এন এ : ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনাকে ‘কলঙ্কজনক ঘটনা’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
রোববার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির ‘সাগর-রুনি’ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক স্মরণসভায় এই মন্তব্য করেন। বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (বাংলাদেশ ন্যাপ) প্রাক্তন চেয়ারম্যান শফিকুল গাণি স্বপনের সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণসভার আয়োজন করে দলটি।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের নেতারা অল্পের জন্য বেঁচে গিয়েছিলেন। যদিও দলটির এক নেত্রী আইভি রহমানসহ আওয়ামী লীগের ২২ নেতা-কর্মী নিহত এবং শতাধিক আহত হন। হামলার মূল লক্ষ্য ছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের হত্যা করা।
অধিকতর তদন্তের পর এখন এই মামলার আসামির তালিকায় তখনকার স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের সঙ্গে যোগ হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের ছেলে তারেক রহমানও।
২১ আগস্টের গ্রেনেড হামলার দিনটির কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ওই ঘটনা জাতির জন্য একটি কলঙ্কময় দিন। ওই হামলায় ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হয়েছেন। এটি একটি বর্বরতম হত্যাকাণ্ড।
বিএনপি মহাসচিব ২১ আগস্ট হামলার ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানান।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শফিকুল গানি স্বপনের ৭ম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এ স্মরণ সভার আয়োজন করে দলটি।
‘জাতীয় নেতা’ হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন জানিয়ে দলটির এই মহাসচিব বলেন, ‘তিনি জাতির এই দুঃসময়ে জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছেন। কারণ সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সব দ্বিধা-বিভক্তি ভুলে এক হতে হবে। উগ্রতা ও সন্ত্রসাবাদ একটি দানব। যদি তা বাংলাদেশকে গ্রাস করে তবে জাতি হিসেবে মুখ থুবড়ে পড়ব।’
“তিনি (খালেদা জিয়া) বিএনপি বা ২০ দলের নেতা হিসেবে নয়, জাতীয় নেতার দায়িত্ববোধ থেকে এই ডাক দিয়েছেন। তার বক্তব্যে তিনি পরিস্কার করে বলেছেন, কোনো দল ক্ষমতায় যাবে, কোনো দল যাবে না, সেটা বড় কথা নয়। দেশ থাকবে, দেশের মানুষ থাকবে”, বলেন মির্জা ফখরুল।
তিনি বলেন, ‘যারা তার (খালেদা জিয়া) আহ্বানে সাড়া দিয়ে যোগাযোগ করছেন, তাদের সঙ্গে তিনি কথা বলেছেন, বলছেন। আশা করছি, কিছুদিনের মধ্যে জাতীয় ঐক্যকে একটি জায়গায় নিয়ে যেতে পারবো। এটা কোনো নির্বাচন বা আন্দোলনের ডাক নয়। এটা সেই আন্দোলনের ডাক, যেটা দেশকে একটি ভয়াবহ সংকট মোকাবিলা করেত ঐক্যবদ্ধ করবে।’
ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এক সময় গণতন্ত্রের রক্ষায় আন্দোলন করলেও এখন সেই দলটিই ক্ষমতায় থাকতে স্বৈরাচারের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন বিএনপি মহাসচিব।
“যে দলটি এক সময় গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করেছে, যুদ্ধ করেছে, সেই দলটিই এখন সবচেয়ে বড় স্বৈরাচারে পরিণত হয়েছে। গণতন্ত্র ধ্বংস করে দিয়ে তাদের ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে কাজ করছে। কথা বলার অধিকার, ভোটাধিকার; এমনকি নিরাপদভাবে বেঁচে থাকার অধিকারও কেড়ে নেওয়া হয়েছে”, বলেন মির্জা ফখরুল।
জঙ্গিবাদ নির্মূলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ না করে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল দমনে কাজ করছে অভিযোগ করে তিনি বিএনপি মহাসচিব বলেন, এর মাধ্যমে তারা জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছে, তাদের লালন করছে।
তিনি বলেন, ‘একটি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাই পারে জঙ্গিবাদকে মোকাবিলা করছে, অন্যায়কে দমন করতে, স্বাধীনতাকে রক্ষা করতে। অন্যথায় আমরা কোনোটা রক্ষা করতে পারব না। তাই প্রতিটি নাগরিকের দায়িত্ব হচ্ছে হরণ করা গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে সোচ্চার হওয়া।’
পরিবেশ ধ্বংস করে সুন্দরবনের অদূরে রামপালে বিদ্যুৎকেন্দ্র করার পদক্ষেপের সমালোচনা করে মির্জা ফখরুল বলেন, রামপালে কোনোদিনই বিদ্যুৎকেন্দ্র হতো না যদি নির্বাচিত সরকার থাকতো।
“কারণ তাদের একটি জবাবদিহিতা থাকতো। এই রামপাল আমার সুন্দরবনকে ধ্বংস করবে, পরিবেশকে ধ্বংস করবে, আমার ভবিষ্যতকে ধ্বংস করবে। তাহলে এই বিদ্যুৎ কি কাজে আসবে”, বলেন বিএনপির এই নেতা।
তিনি বলেন, ‘আজকে কাদের দ্বারা আমরা পরিচালিত হচ্ছি? কারা দেশকে নেতৃত্ব দিয়ে দেশকে কোনদিকে নিয়ে যাচ্ছে? স্বাধীন, সার্বভৌম ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়বার জন্য বর্তমান সরকার আমাদের কি দিচ্ছে? অথবা আমাদের একেবারেই পরনির্ভরশীল করে দিয়ে দুর্বল একটি রাষ্ট্রে পরিণত করার চেষ্টা হচ্ছে?’
মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে সরকার ‘ষড়যন্ত্র করছে’ দাবি করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘মধ্যবর্তী নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। যার মধ্যদিয়ে গণতান্ত্রিক শক্তিকে পেছেনে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু যুগে যুগে চত্রান্ত হয়েছে, সফল হয়নি। সজাগ থাকতে হবে তাহলে কোনো ষড়যন্ত্রই সফল হতে পারবে না।’
একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান তিনি।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শফিকুল গানি স্বপনের অবদান স্মরণ করেন মির্জা ফখরুল।
বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গানীর সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন, কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান সৈয়দ মুহাম্মদ ইবরাহিম বীর প্রতীক, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সভাপতি শফিউল আলম প্রধান, জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) মহাসচিব মোস্তফা জামাল হায়দার, এনডিপির চেয়ারম্যান খন্দকার গোলাম মোর্ত্তজা, বাংলাদেশ ন্যাপের মহাসচিব এম. গোলাম মোস্তফা ভূইয়া প্রমুখ।