জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

‘২০২১ সালের মধ্যে নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা হবে’

এবিএনএ : ২০২১ সালের মধ্যে শতভাগ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।আজ শনিবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে ‘ঢাকা পানি সম্মেলন ২০১৭’ এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে প্রধানমন্ত্রী একথা বলেন।

পৃথিবীর শতকরা ৯০ ভাগ বিপর্যয়ের জন্য পানিকে দায়ী করে শেখ হাসিনা বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগে মৃত্যুর শতকরা ৭০ ভাগই সংঘটিত হয় বন্যা এবং অন্যান্য পানি-সংক্রান্ত দুর্যোগে। বিশুদ্ধ খাবার পানি শুধু আমাদের বেঁচে থাকার জন্যই নয়, সব প্রাণিকূলেরও বেঁচে থাকার জন্য অপরিহার্য।তিনি বলেন, বিশ্বে শতকরা ১ ভাগেরও কম পানিসম্পদ পান করার জন্য নিরাপদ বলে বিবেচনা করা হয়। ফলে এখন পর্যন্ত বিশ্বের প্রায় ১০০ কোটি মানুষের সুপেয় পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা যায়নি।এ সময় জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি ব্যবস্থাপনায় ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য নিরাপদ পানি ও স্যানিটেশন বিষয়ে পৃথক তহবিল গঠনের দাবির কথা উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।তিনি বলেন, গোটা বিশ্বে এ মুহূর্তে ২৪০ কোটি মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে বছরে ১০ লাখ মানুষ মারা যান, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন গড়ে বিশ্বে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়।রাজধানীসহ দেশের সব বিভাগীয় শহরে ভূগর্ভস্থ উৎস থেকে পানি তোলা চার বছরের মধ্যে বন্ধ করে দেওয়ার কথাও জানান প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে নিরাপদ পানি ভূ উপরিস্থ পানি থেকে নিশ্চিত করার কার্যক্রম আমরা হাতে নিয়েছি। নাব্যতা হ্রাস প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ নদীতে ড্রেজিং কার্যক্রম চলছে। আমরা ভূগর্ভস্থ পানির বদলে ভূ উপরস্থ পানি ব্যবহারের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছি।পানি সম্পদের সমন্বিত ব্যবস্থাপনার জন্য সরকার ১০০ বছর মেয়াদী উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লবণাক্ত পানিপ্রবণ এলাকায় পুকুরের পানি ফিল্টার করে লবণাক্ততামুক্ত করা হয়েছে। সাত হাজার পুকুর খনন ও গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে ৩২ হাজার ৬০০টি। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণে ৩২ হাজার চারশটি জলাধার সংরক্ষণ করা হয়েছে।সারা বিশ্বে ১৬০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানির সংকটে ভূগছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে আমাদের সরকার ইতিমধ্যে বিশেষ সাফল্যের সাক্ষর রেখেছে। সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে শতকরা ৮৪ শতাংশ মানুষের জন্য নিরাপদ পানি নিশ্চিত করার লক্ষ্য ছিল। কিন্তু এসেছে ৮৭ শতাংশ মানুষ। শহর এলাকায় শতকরা ৯৮ ভাগ মানুষ নিরাপদ পানির সুবিধা পাচ্ছে। অন্যদিকে শতকরা ৯৯ শতাংশ মানুষ নিরাপদ পয়ঃনিষ্কাষণ সুবিধার আওতায় এসেছে।বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতি ‘সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব ও কারও সঙ্গে বৈরীতা নয়’ জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সকলের সঙ্গে বন্ধুত্ব নিয়েও নিয়েও নিরাপদ পানি ব্যবস্থাপনা নিয়েও আমাদের নজর দিতে হবে।শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিশ্বে এই মুহূর্তে ২.৪ বিলিয়ন মানুষ স্যানিটেশন সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এছাড়া নিরাপদ পানির অভাবে পৃথিবীতে এক মিলিয়ন মানুষ মারা যাচ্ছে, যাদের অধিকাংশই শিশু। প্রতিদিন বিশ্বে গড়ে এক হাজার শিশু বিশুদ্ধ পানির অভাবে প্রাণ হারায়। আন্তর্জাতিক ফোরামে বিষয়টি আগেও তুলে ধরেছি।’উল্লেখ্য, ‘টেকসই উন্নয়নে পানি’ সম্মেলনের এই প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখেই সোনারগাঁও হোটেলে পানি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) বাস্তবায়নে পানির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে খাদ্য নিরাপত্তাসহ এসডিজির সাতটি অভিষ্ঠ লক্ষ্য সামনে রেখে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে।সম্মেলনে দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া ও ডেল্টা কোয়ালিশনভুক্ত অঞ্চলের ২৭টি দেশের মন্ত্রী- প্রতিমন্ত্রীসহ ৮২ জন বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। সম্মেলন আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।সম্মেলনে নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, পানির গুণগতমান, ব্যবহার এবং সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার ওপর চারটি কারিগরি আলোচনা পর্ব অনুষ্ঠিত হবে। এ আলোচনা পর্বসমূহে আটটি সুনির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর বিশেষজ্ঞ পরামর্শ ও মতামত গ্রহণ করা হবে। সম্মেলনের শেষ পর্যায়ে অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর সঙ্গে সুপারিশক্রমে ‘ঢাকা পানি ঘোষণাপত্র’ গৃহীত হবে।

Share this content:

Back to top button