হিলারি লাখ লাখ জাল ভোট পেয়েছেন, দাবি ট্রাম্পের

এবিএনএ : যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন শেষ হয়েছে ২০ দিন আগে। কিন্তু এর ফলাফল নিয়ে বিতর্ক এখনো শেষ হয়নি। ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটে এগিয়ে থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। তবে মোট ভোটের হিসাবে ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ক্লিনটন প্রায় ১৩ লাখ ভোট বেশি পেয়েছেন। এই সংখ্যা আরও আট বা দশ লাখ বাড়তে পারে, কারণ ক্যালিফোর্নিয়ার সব ভোট গোনা এখনো শেষ হয়নি।
বিবিসির খবর অনুসারে, নির্বাচনে ৫০টি অঙ্গরাজ্যের মধ্যে ৪৯টির ভোট গণনা হয়েছে। এতে রিপাবলিকান পার্টির প্রার্থী হিসেবে ডোনাল্ড ট্রাম্প পেয়েছেন ৬ কোটি ১২ লাখ ১ হাজার ৩১ ভোট। তাঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী ডেমোক্রেটিক পার্টির হিলারি ক্লিনটন পেয়েছেন ৬ কোটি ২৫ লাখ ২৩ হাজার ১৬২। তবে জয়-পরাজয় নির্ধারণে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ইলেক্টোরাল কলেজ ভোটের ক্ষেত্রে ট্রাম্প পেয়েছেন ২৯০, আর হিলারি পেয়েছেন ২৩২।
এদিকে ইলেকট্রনিক ভোট যন্ত্রে কারচুপি হয়েছে—গ্রিন পার্টির প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী জিলস্টাইনের এই অভিযোগ আমলে এনে উইসকনসিনের নির্বাচন কমিশন সে রাজ্যের ভোট পুনর্গণনার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রথমে গররাজি থাকলেও দলের সমর্থকদের চাপের কারণে হিলারি ক্লিনটনও এই পুনর্গণনায় অংশ নিচ্ছেন। তিনি এ কাজে কোনো অর্থ ব্যয় করছেন না। তবে নিজের আইনজীবীদের ভোট গণনার সময় উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। আগামী সপ্তাহে গ্রিন পার্টি পেনসিলভানিয়া ও মিশিগানে কারচুপির অভিযোগে ভোট গণনার দাবি জানালে হিলারি শিবির তাতেও অংশ নেবে বলে জানিয়েছে।
আর এই খবরের কোনোটাই ভালোভাবে গ্রহণ করেননি ডোনাল্ড ট্রাম্প। ভোট পুনর্গণনা শুরু হয়েছে জেনে তাঁর প্রথম প্রতিক্রিয়া ছিল, এই কাজে অকারণে সময় ও অর্থ ব্যয় হবে, কিন্তু ফলাফলের কোনো হেরফের হবে না। সে সময় এই চেষ্টাকে তিনি দুঃখজনক বলে অভিহিত করেছিলেন। গতকাল রোববার অবশ্য তাঁর গলার স্বর যথেষ্ট বদলে গেল। টুইটারে ট্রাম্প দাবি করলেন, হিলারি নন, তিনিই মোট ভোটের হিসাবে জিতেছেন। হিলারির মোট ভোটের পরিমাণ তাঁর চেয়ে বেশি, কারণ লাখ লাখ জাল ভোট হিলারির বাক্সে পড়েছে। তাঁর দাবি, ‘এই জাল ভোটগুলো বাদ দিলে আমিই মোট ভোটের হিসাবে জয়ী হব।’ অবশ্য এমন দাবির পক্ষে কোনো যুক্তি-প্রমাণ তুলে ধরেননি ট্রাম্প।
জানা গেছে, ট্রাম্পের সমর্থক হিসেবে পরিচিত অতি দক্ষিণপন্থী ওয়েব পোর্টাল ড্রাজ রিপোর্ট ১৪ নভেম্বর এক প্রতিবেদনে জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ভোটার তালিকায় প্রায় ৩০ লাখের নাম নিবন্ধন করা হয়েছে, যাঁরা নাগরিক নন। অবৈধ ভোটারের নাম তালিকাভুক্ত করা হয়েছে সেখানে। ওয়েব পোর্টালটির এই দাবির সূত্র হলো টেক্সাসের সাবেক স্বাস্থ্য কমিশনার গ্রেগ ফিলিপ্সের একটি টুইট বার্তা। তাতে তিনি অভিযোগ করেছেন, এবারের নির্বাচনে ৩০ লাখ জাল ভোট পড়েছে। ১৩ নভেম্বর সেই টুইট বার্তায় তিনি আরও বলেন, তাঁর কাছে ১৮ লাখ ভোটারের নাম-ঠিকানাসহ একটি ডেটাবেইস আছে। এর মধ্যে নাগরিক নন, এমন ৩০ লাখ লোকের নাম রয়েছে। ভোটাধিকার না থাকলেও ওই ব্যক্তিরা হিলারির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। ফিলিপ্সও তাঁর এই দাবির পক্ষে কোনো প্রমাণ উপস্থিত করতে পারেননি। মূলত ফিলিপ্সের ওই বক্তব্যকে গুরুত্বের সঙ্গে ড্রাজ রিপোর্ট প্রকাশ করার পর ট্রাম্প পপুলার ভোটে নিজেকে জয়ী বলে দাবি করেন।
এদিকে ওয়াশিংটন পোস্ট পত্রিকা ট্রাম্পের এই দাবিকে সর্বৈব মিথ্যা বলে উল্লেখ করেছে। এই মিথ্যাচারের জন্য তারা ট্রাম্পকে সর্বোচ্চ ‘চার পিনোকিও’ দিয়েছে। পোস্ট দীর্ঘদিন থেকেই ইতালীয় গল্পকার কার্লো কলোদির কাঠপুতুলের গল্পের অতি মিথ্যাবাদী চরিত্রের নামানুসারে বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার বক্তব্যের সত্যাসত্য নির্ধারণের জন্য এই পিনোকিও দিয়ে আসছে।
Share this content: