হিলারি আমার ও বিলের চেয়েও যোগ্য: ওবামা

এ বি এন এ : যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়ায় ডেমোক্রেটিক পার্টির জাতীয় সম্মেলনের তৃতীয় দিন গত বুধবার মঞ্চে একের পর এক হাজির হয়েছিলেন দলের ও দেশের সুপরিচিত ‘তারকারা’। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী
লিওন প্যানেটা, নিউইয়র্কের সাবেক মেয়র মাইক ব্লুমবার্গ। কিন্তু দিনের শেষ ও সেরা আকর্ষণ ছিলেন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। আর তিনিই হয়তো সবচেয়ে বেশি প্রশংসায় ভাসিয়েছেন দলের প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীকে।
প্রায় ৪৫ মিনিট স্থায়ী ভাষণে ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হিসেবে হিলারি কেন সবচেয়ে যোগ্য প্রার্থী, তার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন। পাশাপাশি ডোনাল্ড ট্রাম্পের হাতে দেশের শাসনভার তুলে দেওয়া কেন বিপজ্জনক তারও ব্যাখ্যা তুলে ধরেন। বারাক ওবামা বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে হিলারি ক্লিনটনের চেয়ে বেশি যোগ্য ও অভিজ্ঞ প্রেসিডেন্ট প্রার্থী নেই। আমার অথবা বিল ক্লিনটনের চেয়েও বেশি যোগ্য হিলারি।’
হিলারিকে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে চিহ্নিত করে ওবামা বলেন, তিনি যে কাজ শুরু করেছিলেন, তা শেষ করবেন হিলারি। স্পষ্টতই ট্রাম্পকে খোঁচা দিয়ে ওবামা বলেন, ‘আর সে কাজ তিনি করবেন নির্যাতনের আশ্রয় না নিয়ে, কোনো বিশেষ ধর্মের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি না করে।’
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েছিলেন ওবামা। হিলারিও নভেম্বরের নির্বাচনে জিতলে হবেন দেশটির প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ও রিপাবলিকান নেতারা তাঁদের সম্মেলনে যে ‘ব্যর্থ ও দুর্বল’ যুক্তরাষ্ট্রের চিত্র তুলে ধরেন, ঠিক তার বিপরীত এক আশাবাদী ও সফল যুক্তরাষ্ট্রের পরিচয় তুলে ধরতে উদ্গ্রীব ছিলেন ডেমোক্রেটিক পার্টির বক্তারা। এ কাজে নেতৃত্ব দেন প্রেসিডেন্ট ওবামা নিজে। তিনি বলেন, ‘যে যুক্তরাষ্ট্রকে আমি চিনি, তা সাহসী, আশাবাদী ও উদ্ভাবনী ক্ষমতাসম্পন্ন।’ ওবামা দাবি করেন, তাঁর আট বছরের শাসনামলে দেশ এক বিপর্যস্ত অর্থনীতি কাটিয়ে উঠেছে। তবে এখনো অনেক মানুষ রয়েছে, যারা অর্থনৈতিক পুনর্জাগরণের সুফল সমানভাবে ভোগের সুযোগ পায়নি।
ওবামা বলেন, ‘এখনো অনেক কিছু করার বাকি। এখনো দরকার ভালো কর্মসংস্থানের, দরকার বেতনসহ ছুটির সুযোগ, প্রতিটি শিশু যাতে দারিদ্র্যের কশাঘাত কাটিয়ে বিশ্বসেরা শিক্ষার সুযোগ পায় তার নিশ্চয়তা। সেই সুযোগ সৃষ্টির জন্য সেরা প্রার্থী হলেন হিলারি ক্লিনটন।’
ওবামা ডোনাল্ড ট্রাম্পের দুর্বল দিকগুলোও তুলে ধরেন। একপর্যায়ে তিনি এই ধনকুবের ব্যবসায়ীকে ‘ফ্যাসিস্ট’ ও ‘বাক্যবাগীশ’ বলেও ইঙ্গিত করেন। একমাত্র তিনিই পারেন দুর্দশাগ্রস্ত যুক্তরাষ্ট্রকে টেনে তুলতে—ট্রাম্পের এই দাবি চ্যালেঞ্জ করে ওবামা বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তির উৎস এ দেশের মানুষ, যারা সম্মিলিত চেষ্টায় অসম্ভব সাধন করেছে। তারা কোনো একনায়কের অধীনে শাসিত হতে চায় না।
ওবামার ভাষণ শেষে সম্পূর্ণ অপ্রত্যাশিতভাবে মঞ্চে প্রবেশ করেন হিলারি ক্লিনটন। তিনি ওবামার সঙ্গে আলিঙ্গন করেন এবং কয়েক মুহূর্ত মঞ্চে একসঙ্গে কাটান। সম্মেলনকক্ষের ২০ হাজারের বেশি দর্শক এ সময় মুহুর্মুহু করতালি ও ‘আমরা পারি’ (ইয়েস, উই ক্যান) স্লোগান দিয়ে বিদায়ী এবং তাঁর আসনে সমাসীন হওয়ার প্রত্যাশী দুই নেতাকে অভিনন্দিত করেন।
দিনের অন্য প্রধান বক্তা ছিলেন মাইক ব্লুমবার্গ। নিউইয়র্কের এই জনপ্রিয় রিপাবলিকান মেয়র কঠোর ভাষায় ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি ট্রাম্পকে একজন বিপজ্জনক, লাগামহীন ও বেপরোয়া মানুষ আখ্যা দিয়ে বলেন, এমন একজনের হাতে কোনোভাবেই দেশের শাসনভার তুলে দেওয়া যায় না। তিনি ট্রাম্পের মানসিক সুস্থতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন।
হিলারির রানিং মেট ভার্জিনিয়ার সাবেক গভর্নর ও সিনেটর টিম কেইনও বক্তব্য দেন। স্প্যানিশ ভাষায় পারদর্শী এই সিনেটরও তাঁর ভাষণে ট্রাম্পের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। হিলারির নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, ‘সামরিক বাহিনীর সদস্য ছেলের নিরাপত্তা হিলারির হাতে তুলে দিয়ে আমি নিশ্চিন্ত হতে পারি।’
গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল সম্মেলনের শেষ দিন। এদিনই হিলারি ক্লিনটনের আনুষ্ঠানিকভাবে দলের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন গ্রহণ করার কথা।
Share this content: