
এবিএনএ : দিনাজপুরে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। স্মরণকালের এই ভয়াবহ বন্যার পানিতে তলিয়ে গেছে জেলার প্রায় সব উপজেলা। জেলার সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ভেঙ্গে গেছে দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধসহ বেশ কয়েকটি নদীর বাঁধ। বাঁধ রক্ষায় ও বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের জন্য মোতায়েন করা হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও বিজিবিকে। বাড়ী-ঘর ডুবে গিয়ে গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। দিনাজপুরে বিরল উপজেলার ১২ নং রাজারামপুর ইউনিয়নের হাসিলা গ্রামে বন্যার পানিতে ডুবে একই পরিবারের ৩ শিশু সহ ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে দিনাজপুরে বন্যাজনিত কারণে মৃতের সংখ্যা দাঁড়ালো ১৫ জন।
ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে দিনাজপুর জেলায় গত শনিবার থেকে শুরু হয় বন্যা। ইতিমধ্যেই দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুর সদর, বিরল, কাহারোল, বীরগঞ্জ, খানসামা, চিরিরবন্দর ও পার্বতীপুর উপজেলা বেশী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোটা জেলায় পানিবন্দী ও গৃহহীন হয়ে পড়েছে জেলার প্রায় ৫ লাখ মানুষ। এসব মানুষ আশ্রয় নিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বাঁধ এলাকায়। জেলার ২ হাজার ৯৩০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধিকাংশই বানভাসী মানুষের আশ্রয় কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম।
দিনাজপুর জেলা প্রশাসক মীর খায়রুল আলম জানান, ইতিমধ্যেই জেলায় ৩৬৯টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে এবং সেনা সদস্যরা বিজিবিকে সঙ্গে নিয়ে প্রশাসনের লোকজন ত্রাণ কাজে অংশ নিচ্ছেন। এ পর্যন্ত বন্যাজনিত কারণে জেলায় ১৪ জনের মৃত্যুর খরব নিশ্চিত করেছেন।
দিনাজপুর সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইফুজ্জামান জানান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি ঘোষণা করা না হলেও বন্যাদুর্গত এলাকায় বানভাসি মানুষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে আশ্রয় নেয়ায় সেগুলোতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, জেলার সব নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। শহরের তুঁতবাগান এলাকায় দিনাজপুর শহর রক্ষা বাধের ৫০ মিটার ভেঙ্গে গেছে। এছাড়াও দিনাজপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে নদীর বাধ ভেঙ্গে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ফয়জুর রহমান জানান, পুনর্ভবা নদীর পানি বিপদসীমার দশমিক ৭৮ সেন্টিমিটার এবং আত্রাই নদীর পানি দশমিক ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়াও সবকটি নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। জেলার অন্যান্য প্রায় ১০টি শাখা নদীর পানি বিপদসীমার অনেক উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে জমি ও বসতবাড়ি প্লাবিত করছে।
দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় সেই বাধ সংস্কারে বিজিবি সদস্যদের মোতায়েন করা হয়। বিজিবি বাধটি সংস্কারে ব্যর্থ হওয়ায় দুপুরে বাধ সংস্কারে এবং বানভাসি মানুষকে উদ্ধারে মোতায়েন করা হয় সেনাবাহিনী। গতকাল রবিবার দুপুর থেকে মেজর তৌহিদ-এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর ৬৬ পদাতিক ডিভিশনের ৫২ সদস্য বাধ সংস্কার ও বানভাসি মানুষকে উদ্ধারের কাজ শুরু করেছে।
শহর রক্ষা বাধ ভেঙ্গে যাওয়ায় দিনাজপুর শহরের বালুবাড়ী, মালদহপট্টি, ঈদগাহ আবাসিক এলাকা, উপশহর, পুলহাটসহ বিভিন্ন মহল্লায় বন্যার পানি ঢুকতে শুরু করেছে। রাতের মধ্যেই শহরের বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হয়ে পড়ে।
বন্যার কারণে দিনাজপুরের অধিকাংশ সড়ক ও মহাসড়ক পানির নীচে তলিয়ে যাওয়ায় দিনাজপুর জেলার সাথে অধিকাংশ উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। হিলি স্থল বন্দর পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় শনিবার থেকে বন্ধ রয়েছে আমদানি-রফতানি কার্যক্রম। বন্যার পানিতে কয়েকটি স্থানে রেল লাইন তলিয়ে যাওয়ায় দিনাজপুরের সাথে পার্বতীপুর ও ঠাকুরগাঁওয়ের রেল যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। ভেঙ্গে গেছে জেলার হাজার হাজার ঘরবাড়ী। পানির নীচে তলিয়ে গেছে জেলার প্রায় ২ লাখ হেক্টর জমির ফসল।
বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলেও বিকেলে সূর্যের মুখ দেখা গেছে। দিনাজপুর আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তোফাজ্জুর রহমান জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় দিনাজপুরে ২৯৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অফিস। তবে আজ এখনো কোন বৃষ্টি হয়নি। তবে আকাশে মেঘ রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম মাহমুদ আলী আজ সকালে বিমানযোগে তার নির্বাচনী এলাকায় পৌঁছান এবং বিভিন্ন ত্রাণ শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ করেন। এ সময় তিনি বলেন, বন্যা জনিত কারণে ত্রাণের কোন সংকট হবে না। তিনি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কড়া হুশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, ত্রাণের মালামাল নিয়ে যদি কেউ অনাচার সৃষ্টি করে তাহলে তাদেরকে রেহাই দেয়া হবে না। এছাড়াও জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম দিনাজপুর শহর ও তার নির্বাচনী এলাকায় প্রায় ৩০টি ত্রাণ শিবির পরিদর্শন ও ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত রেখেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী তার নির্বাচনী এলাকা বিরলে ৫০টি আশ্রয় শিবিরে স্পীড বোর্ডযোগে পরিদর্শন করেন। আজ সকালে পানি সম্পদ মন্ত্রী হুইপ ইকবালুর রহিমকে নিয়ে দিনাজপুর শহর রক্ষা বাঁধ পরিদর্শন করেন।
Share this content: