জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

স্বাধীনতাবিরোধী প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্র এখনও শেষ হয়নি: প্রধানমন্ত্রী

এবিএনএ: প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী প্রেতাত্মাদের ষড়যন্ত্র শেষ হয়নি। তারা এখনও ঘুরে বেড়ায়। যারা স্বাধীনতার বিরুদ্ধে কাজ করেছে, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ষড়যন্ত্রে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে অপবাদ-অপপ্রচার শুরু করেছিল, যারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশের ইতিহাস বিকৃত করেছিল, দেশকে উল্টো পথে নিয়ে গিয়েছিল তারা এখনো সক্রিয়। নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনরত ছোট্ট ছোট্ট শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে পা রেখে অনেকে রাজনৈতিক ফায়দা লুটার চেষ্টা করেছিল। মিথ্যা বলে বলে অপপ্রাচার চালানোই তাদের কাজ। এদের অনেকে নাকি আবার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। কিন্তু দেশের স্বার্থে কোনো ছাড় নেই। আমার বাবা (বঙ্গবন্ধু), আমার মায়ের (বঙ্গমাতা) কাছ থেকে শিখেছি, নীতির প্রশ্নে আপোস নেই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ বেয়েই আমরা দেশকে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলবোই।
জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে গণভবনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুননেছা মুজিব স্মরণে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
আর ছাত্রলীগের এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমেই শোকাবহ আগস্টের আওয়ামী লীগ গৃহীত মাসব্যাপী কর্মসূচি শেষ হয়। ছাত্রলীগের নবনির্বাচিত সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে আলোচনা সভা পরিচালনা করেন সংগঠনের নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানী।
সম্প্রতি নিরাপদ সড়কের দাবীতে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে বিভ্রান্ত ও উস্কানী দিয়ে একটি মহলের রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওই কোমলমতি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে কাজে লাগিয়ে একটি মহল রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টায় নেমে পড়ে। আমার প্রশ্ন- অনেক জ্ঞানী-গুনি ও খ্যাতিসম্পন্ন ব্যক্তিরা ওই সময় কী করেছেন? আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছি। সেই প্রযুক্তির সুযোগ নিয়ে সোস্যাল মিডিয়ায় মিথ্যা ও গুজব ছড়িয়ে আন্দোলনকে উস্কানী দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, এই উস্কানী ও গুজবের ফলে কত শিশুর পাণ যেতে পারতো, কতো শিশুর ক্ষতি হতে পারতো কেউ কী তা ভেবে দেখেছে?
তিনি বলেন, আমরা যখন গুজব সৃষ্টিকারী ও উস্কানীদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলাম তখন দেখলাম অনেকের হাহাকার! আন্তর্জাতিক কত চাপ। কিন্তু আমি ছাত্রজীবন থেকে রাজনীতি করি। দেশের স্বার্থে কোনো ছাড় নেই। আমার বাবা-মা’র কাছ থেকে শিখেছি নীতির প্রশ্নে কোন আপোষ নেই, করবোও না। দেশে-বিদেশের সবাইকে তা মনে রাখতে হবে। এ সময় একটি উদাহরণ তুলে ধরে বঙ্গবন্ধু কন্যা বলেন, আমার পরীক্ষায় পাকিস্তান চ্যাপ্টার ছিল, এতে মার্ক ছিল ২০ নম্বর। আইয়ুব খানের প্রশংসা করার এই চ্যাপ্টার বিষয়টি আমি পরীকসায় লিখিনি। এতে ফেলও করতে পারতাম। কিন্তু নীতির প্রশ্নে আপোষ করেনি। তিনি বলেন, আমার রাজনৈতিক জীবনে গ্রেনেড হামলা, গুলি, বোমা হামলাসহ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত আমাকে মোকাবেলা করতে হয়েছে। আমি কোন কিছুর পরোয়া করিনি। কারণ আমরা আত্মবিশ্বাস আছে যে, আমি সত্য ও ন্যায়ের পথে  দেশের মানুষের কল্যাণ ও তাদের মুখে হাসি ফোটানোই আমরা রাজনীতির একমাত্র লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য থেকে কেউ আমাকে বিচ্যুত করতে পারবে না।
ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে নিজেদের শিক্ষিত করে গড়ে তুলে ন্যায়-প্রগতি ও শান্তির পতাকা উড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরেই আমরা বাংলাদেশকে উন্নত-সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলেছি, স্বলন্নোত বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের কাতারে। আমরা আর বেশি দিন থাকবো না। তোমরাই (ছাত্র) দেশের ভবিষ্যত। তোমাদেরই আগামী দিনে দেশের নেতৃত্ব দিতে হবে। নিজেদের একেকজন আদর্শিক নেতা হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আদর্শ নিয়ে নিজেকে গড়ে তুলতে ইতিহাসে তোমরাই মূল্যায়ণ পাবে, স্থান পাবে। কিন্তু ধন-সম্পদের দিকে গা ভাসালে হারিয়ে যাবে। ছাত্রলীগের অনেক নেতাই আদর্শচ্যুত হয়ে হারিয়ে গেছে, অনেকেই আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিসহ নানা দলে চলে গেছে। শিক্ষাই একমাত্র সম্পদ এ কথাটি সবসময় মনে রাখার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের প্রতিটি অর্জনের পেছনে ছাত্রলীগের বিরাট অবদান রয়েছে। আইয়ুব-ইয়াহিয়া, জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়াবিরোধী প্রতিটি আন্দোলনের শহীদের তালিকা দেখলে দেখা যাবে, এক্ষেত্রে শহীদের তালিকায় ছাত্রলীগেরই বেশি সদস্য রয়েছে। তাই ছাত্রলীগকে আদর্শিক সংগঠন হিসাবে গড়ে তুলতে হবে। ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না, কেউ সঙ্গে করে নিয়ে যেতে পারে না। কিন্তু শিক্ষাই একমাত্র সম্পদ যা কেউ কোনদিন কেড়ে নিতে পারে না। তাই ছাত্রলীগের প্রতিটি সদস্যকে সর্বাগ্রে শিক্ষা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে গড়ে তুলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শের পথ ধরে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ কেউ নিজের ভাগ্য বদলের জন্য রাজনীতি করে, কেউ সামাজিক মর্যাদা বাড়ানো ও নিজেদের ধন-সম্পদ বাড়ানোর জন্য রাজনীতি করে। তারা দেশকে কিছু দিতে পারে না। কিন্তু যারা জনগণের জন্য রাজনীতি করে, ইতিহাস তাদের মূল্যায়ন করেই। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুুজিবুর রহমানকে হত্যার পর ইতিহাস বিকৃতি করার চেষ্টা হলেও তাঁর আদর্শ মুছে ফেলা যায়নি। সত্যকে কেউ মুছে ফেলতে পারে না। সত্য উদ্ভাসিত হবেই একদিন। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণটি বাজানো নিষিদ্ধ ছিল, সেই ভাষণটিই আড়াই হাজার বছরের ইতিহাসে বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ভাষণের স্বীকৃতি পেয়েছে, প্রামাণ্য দলিলে স্থান পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সংগ্রাম করে প্রথমে করলেন পাকিস্তান। পরে দেখলেন এই পাকিস্তান তো সেই পাকিস্তান নয়। তারা এই ভূখন্ডের মানুষের শোষণ করে। আবার সংগ্রাম করে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করলেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button