আমেরিকালিড নিউজ

ফাহিম হত্যা: বেরিয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর তথ্য

এবিএনএ : গোয়েন্দাদের ধারণা অনুযায়ী পাঠাওয়ের সহ-প্রতিষ্ঠাতা তরুণ উদ্যোক্তা ফাহিম সালেহকে হত্যা করা হয় ১৩ জুলাই (সোমবার)। তবে সন্দেহভাজন খুনি মঙ্গলবার আবারও তার ফ্ল্যাটে ঢুকেছিল মরদেহ টুকরো করতে। এই হত্যার পেছনের রহস্যগুলো এখন একে একে বের হয়ে আসছে।

সোমবার থেকে ভাইকে ফোনে না পেয়ে ফাহিমের এক ছোটবোন মঙ্গলবার তার কামরায় (অ্যাপার্টমেন্ট) ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, শরীর থেকে মাথা, হাত ও পা বিচ্ছিন্ন অবস্থায় ফাহিমের মরদেহ পড়ে আছে এবং শরীরের একটা অংশ পাশের একটি প্লাস্টিক ব্যাগে ভরা। পাশেই পড়ে আছে একটি ইলেকট্রিক করাত। এরপর নিউইয়র্কের ম্যানহাটন এলাকার সেই অ্যাপার্টমেন্ট থেকে ক্ষত-বিক্ষত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

শুক্রবার (১৭ জুলাই) ফাহিমকে হত্যার ঘটনায় গ্রেফতার করা হয় তার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী হাসপিলকে। একইদিনে তার বিরুদ্ধে সেকেন্ড ডিগ্রি মার্ডারের অভিযোগ দায়ের করা হয়। এক সংবাদ সম্মেলনে নিউইয়র্ক পুলিশ বিভাগের প্রধান ডিটেকটিভ রোডনি হ্যারিসন সাংবাদিকদের বলেন, ফাহিমের অর্থনৈতিক ও ব্যক্তিগত বিষয়গুলো তদারকি করত সন্দেহভাজন হাসপিল।

ফাহিম সালেহ যখন জানতে পারেন তার চিফ অব স্টাফ টেরেস ১ লাখ ডলার আত্মসাৎ করেছে, তখন তাকে ওই টাকার জন্য চাপ দেন। পরে টেরেস টাকা ফেরত দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এর জেরেই ফাহিম সালেহ খুন হন বলে নিউইয়র্ক পুলিশের ধারণা। এর আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে নিউইয়র্ক সিটির ম্যানহাটনে নিজ কামরা থেকে ফাহিমের খণ্ড-বিখণ্ড লাশ উদ্ধার করা হয়। গত বছর সাড়ে ২২ লাখ ডলারে ম্যানহাটানের লোয়ার ইস্ট সাইডে সাফোক স্ট্রিটের ইস্ট হিউস্টন স্ট্রিটের ওপর কন্ডোটি (বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট) কেনেন তিনি।

ফাহিমকে হত্যার ঘটনায় বিশ্ব মিডিয়ায় আলোড়ন সৃষ্টি হয়। ইতোমধ্যেই তিনি পশ্চিমা মিডিয়ায় টেক জায়ান্ট হিসেবে পরিচিতি পেয়েছেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সেই নিজের প্রযুক্তি প্রতিভার প্রমাণ দেন এ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত। ৩৩ বছর বয়সী ফাহিম চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের হরিসপুরের আইবিএমের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার সালেহ আহমেদের ছেলে। গোয়েন্দারা জানান, ফাহিমের কাছ থেকে কয়েক হাজার ডলার চুরি করেন টেরেস। বিষয়টি জানার পরও তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি ফাহিম। উল্টো মনস্থির করেছিলেন, ডলার ফেরত পাওয়ার পর সেখান থেকে তাকে (টেরেস) একটা অংশ দেবেন।

নিউইয়র্ক পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের আগের দিন সোমবার ফাহিমকে খুন করা হয়। এরপর খুনি হত্যার আলামত মুছে ফেলতে তার মালিকের (ফাহিম) ক্রেডিটকার্ড ব্যবহার করে ২৩ ম্যানহাটন স্ট্রিট থেকে ফ্লোর ও ঘর পরিষ্কারের সামগ্রী কেনেন। পরেরদিন লাশটি খণ্ড-বিখণ্ড করতে সে আবার ওই অ্যাপার্টমেন্টে যায়। গোয়েন্দারা জানান, হত্যাকারী কালো রঙের স্যুট, কালো মাস্ক পরে এসেছিলেন। হাতে ছিল একটি ব্যাগ। সে ফাহিমের পেছন পেছন ওই অ্যাপার্টমেন্টে ঢুকেছিল।

ফাহিম সালেহর জন্ম ১৯৮৬ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের বেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইনফরমেশন সিস্টেম নিয়ে পড়াশোনা করতেন ফাহিম। নাইজেরিয়া আর কলম্বিয়াতে তার দুটি রাইড শেয়ারিং অ্যাপ কোম্পানি রয়েছে। পেশায় ওয়েবসাইট ডেভেলপার ফাহিম অ্যাডভেঞ্চার ক্যাপিটাল গ্লোবাল নামক একটি ভেঞ্চার ক্যাপিটাল প্রতিষ্ঠানেরও উদ্যোক্তা ছিলেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button