আন্তর্জাতিক

মেয়েদের রাজনীতির জগতটা কেমন?

এ বি এন এ : সাই ইং ওয়েন তাইওয়ানের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসাবে শপথ নিয়েছেন শুক্রবার। জানুয়ারি মাসের নির্বাচনে বিপুল সংখ্যাধিক্যে বিজয়ী হন মিস সাই। সাবেক আইনের ছাত্রী এবং বেড়াল-প্রিয় মিস সাই-এর কোনোদিন প্রেসিডেন্ট হবার কোনো উচ্চাকাঙ্ক্ষা ছিল না।

তবে পূর্ব এশিয়ার নারী রাজনীতিকদের মধ্যে তিনি স্বতন্ত্র লিখছেন বিবিসির তাইপেই সংবাদদাতা সিন্ডি সুই।

পূর্ব এশিয়ায় সাধারণত নারী রাজনীতিকরা ক্ষমতায় এসেছেন বাবা, ভাই বা স্বামীর সূত্রে। যেমন দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পাক গুন-হে, ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন অ্যাকিনো অথবা থাইল্যান্ডের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইংলাক চিনাওয়াত। কিন্তু সাই ইং ওয়েনের ক্ষেত্রে সেটা ঘটে নি। তাইওয়ানে এটা অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়।

শুধু মিস সাই নন, তাইওয়ানে বহু নারী রাজনীতিকেরই কোনো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নেই- তারা রাজনৈতিক পরিবারে বড় হন নি। এদের মধ্যে রয়েছেন দেশটির সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট, এবং কাওশিউং শহরের মেয়র। তারা নিজেদের চেষ্টা ও যোগ্যতা দিয়ে তাদের অবস্থানে পৌঁছেছেন ।

তাইওয়ানের সংসদেও দেখা যায় মেয়েদের ভাল দাপট। দেশটির সংসদে প্রায়ই যে মারপিট- হাতাহাতি হয় তাতে নারী সংসদ সদস্যরাও যে শুধু সমানতালে অংশ নেন তাই নয়, কখনও কখনও এতেও তারা নেতৃত্ব দেন।

জানুয়ারির নির্বাচনের পর তাইওয়ানে সংসদ সদস্যের হার এখন রেকর্ডসংখ্যক- ৩৮ শতাংশ- যা এশিয়ার অন্যান্য দেশের তুলনায় সবচেয়ে বেশি তো বটেই। এমনকী যুক্তরাজ্য, জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক বিশ্বে নারী আইনপ্রণেতাদের গড় সংখ্যাও এর থেকে অনেক কম – ২২ শতাংশ।

কিন্তু তাইওয়ানে নারী রাজনীতিকদের সংখ্যা এত বেশি হলেও মিস সাইয়ের চল্লিশ সদস্য বিশিষ্ট মন্ত্রিসভায় কেন মাত্র চারজন নচুচারমন্ত্রিসভার একজন মুখপাত্র বলছেন এর মূল কারণ এসব নারী রাজনীতিকের অভিজ্ঞতার অভাব। তিনি বলছেন মিস সাইয়ের দল বহু বছর ক্ষমতার বাইরে থাকার ফলে তাদের ঝুলিতে প্রয়োজনীয় রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা জমা হয় নি।
আর অভিজ্ঞ ও যোগ্য অনেকে মন্ত্রী পদের দায়িত্ব নিতে রাজিই হননি।

এদের একজন ৬৫ বছরের হো মেই উয়ে- একসময় অর্থনীতি বিষয়ক মন্ত্রী ছিলেন। তিনি বলছেন জীবনের ৩৩ বছর তিনি সরকারকে দিয়েছেন। সংসার সামলানোর পাশাপাশি রাজনীতিতে সময় দিয়েছেন। “কিন্তু নিজেকে আমি বঞ্চিত করেছি।”

“আমাকে চাকরিও করতে হয়েছে, আবার ছেলেপুলে মানুষ করতে হয়েছে। এখন নিজেকে সময় দিতে চাই।” তাইওয়ানে মেয়েদের জন্য সংসার সামলে রাজনীতি করা কঠিন বলেই তিনি বললেন। তবে, তাইওয়ানের রাজনীতিতে নারীদের এই উঁচু হারের পেছনে কিন্তু বিশেষ কোটার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। সংসদে কিছু আসন রয়েছে যার অর্ধেকই মহিলাদের প্রাপ্য। এছাড়াও স্থানীয় পরিষদ নির্বাচনে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকার চারটি আসনের মধ্যে একটি মহিলাকে দিতে হবে।

তাইওয়ানের রাজনীতিতে নারীদের অবস্থান নিয়ে গবেষনা করেছেন আমেরিকান অধ্যাপক জয়েস গেল্ব। তিনি বলছেন -“দেশটির সংবিধানে নারীদের জন্য বিশেষ অবস্থান সংরক্ষিত আছে। একমাত্র স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশগুলো এই নীতি নিয়েছে। এশিয়া বা অন্যান্য দেশের জন্য এটা একেবারেই নতুন।”তবে, নারী আইনপ্রণেতাদের সংখ্যা এখন এই কোটাকেও অতিক্রম করে যাচ্ছে। ফলে অনেকেই বলছেন এই কোটা পদ্ধতি তুলে দেওয়ার সময় এসেছে।

তবে, মিজ সাই-এর মন্ত্রিসভায় সংখ্যার হিসাবে নারীদের যে দুরাবস্থা তা দেখে বলা যায় এই কোটার প্রয়োজনীয়তা এখনও রয়েছে।
তাইপেই-এর একজন গবেষক নাথান বাত্তো বলছেন, এই কোটা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে দলগুলো নারী রাজনীতিকদের আরো প্রস্তুত করে তোলায় মনোযোগী হতে পারবে। তবে তার মতে, “সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন এখনও একটি বড় চ্যালেঞ্জ।”

– See more at: http://www.bd24live.com/bangla/article/91427/index.html#sthash.DDrQd08R.dpuf

Share this content:

Related Articles

Back to top button