অর্থ বাণিজ্যলিড নিউজ

সাত সরকারি প্রতিষ্ঠানকে শেয়ারবাজারে আনতে নতুন উদ্যোগ

এবিএনএ : আগামী দুই মাসের মধ্যে দেশের পুঁজিবাজারে আসছে সরকারি আরো সাতটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার। এ সময়ের মধ্যে কোম্পানিগুলোর সম্পদ মূল্যায়ন করা হবে। রোববার শেরেবাংলা নগরে অর্থমন্ত্রীর দপ্তরে এক বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে। অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে বৈঠকে অর্থ সচিব, জ্বালানি সচিব, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল), গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডের (জিটিসিএল) শেয়ার পুঁজিবাজারে আনা হবে।

বৈঠক শেষে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, আমাদের পুঁজিবাজারের জন্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার। এখানে যারা আছে তারা বিক্ষিপ্তভাবে আছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে আসতে হবে। সাতটি প্রতিষ্ঠানকে ধরা হয়েছে। এ সাতটি প্রতিষ্ঠানকে শিগগিরই শেয়ারবাজারে আনা হবে। তিনি বলেন, তাদের দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। এই সময়ে তারা তাদের সম্পদের পরিমাণ যাচাই করে জানাবেন। এরা সাতটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সম্পদের পরিমাণ যাচাই করবে।

অর্থমন্ত্রী বলেন, বাজার চাঙ্গা করতে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (টিজিটিডিসিএল), পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ, নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি, ইলেক্ট্রিসিটি জেনারেশন কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেড (ইজিসিবি), আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লিমিটেড, বি-আর পাওয়ারজেন লিমিটেড (বিআরপিএল) এবং গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি লিমিটেডকে (জিটিসিএল) শেয়ারবাজারে আনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

কত দিনের মধ্যে এসব কোম্পনি শেয়ারবাজারে আসবে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ওভারনাইট তো তাদের আনা যাবে না। একটু সময় লাগবে। তবে আমাদের পুঁজিবাজার শক্তিশালী করতে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ দরকার। আমাদের শেয়ারবাজারে যারা আছে তারা নিজস্বভাবে আছে। উন্নত দেশের মতো আমাদের দেশের পুঁজিবাজারও ব্রডবেইজড করতে হবে। এজন্য আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে হবে। আমি আগেও বলেছিলাম, বাজারকে শক্তিশালী করার জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুঁজিবাজারে নিয়ে আসা উচিত। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী ও স্থিতিশীল করার জন্য আজকে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।’

মুস্তফা কামাল বলেন, ‘তাদের অ‌্যাসেট রিভ্যালু করার জন্য তাদেরকে দুই মাস সময় দেয়া হয়েছে। রিভ্যালুর ভিত্তিতেই শেয়ারগুলোর ভ্যালুয়েশন হবে। এরপর এসব কোম্পানির ১০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত প্রাথমিকভাবে শেয়ারবাজারে নিয়ে আসব। আগামী দুই মাসের মধ্যে তারা সম্পদের অ্যাসেসমেন্ট করে রিপোর্ট দিবে। আমরা তাড়াতাড়ি কোম্পানিগুলোকে শেয়ারবাজারে আনতে চাই। তাই সাতটি ফার্ম দিয়ে অ্যাসেসমেন্টের কাজটা দ্রুত শেষ করতে চাই।’

শেয়ারবাজার চাঙ্গা করতে ড. ফখরুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মির্জা আজিজুল হক লাভজনক সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়ারউদ্যোগ নেন। এরপর বিগত সরকারের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতও বিষয়টিতে নাড়া দেন। শেয়ারবাজারে ছাড়ার জন্য বেশ কয়েকবার সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়। কিন্তু নানা অজুহাতে সেসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন হয়নি।

এর আগে ২০১৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের তৎকালীন সিনিয়র সচিব মো. ইউনুস আলীর সভাপতিত্বে বৈঠক হয়। সে বৈঠকেও ওই বছরের ১৫ জুনের মধ্যে সরকারি কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়তে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেয়া হয়। বৈঠকে সরকারি ১৫ কোম্পানির প্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।

সূত্র জানায়, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় থেকে সরকারি ১৫ কোম্পানির শেয়ার বাজারে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। সেসময় নির্দেশ দেয়া হয়েছিল- কোম্পানিগুলোর সম্পদের পুনর্মূল্যায়ন করে লাভজনক পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে। এরপর এগুলোর শেয়ার পুঁজিবাজারে অবমুক্ত করতে হবে। এজন্য দফায় দফায় সময়সীমাও বেঁধে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেয়ার না ছাড়ার পিছনে সংশ্লিষ্ট কোম্পানিগুলোর অনীহা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতাই মূল কারণ।

সূত্র জানায়, রোববার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী দুই মাসের মধ্যে সরকারি সাত কোম্পানির শেয়ার বাজারে ছাড়তে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

২০১৮ সালে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ থেকে প্রস্তুতকৃত বৈঠকের কার্যপত্রে উল্লেখ করা হয়েছিল- জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের আওতাধীন কোম্পানিগুলো মুনাফা অর্জন করতে সক্ষম হচ্ছে না। সেগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নসহ মুনাফামুখী করার জন্য পুনর্গঠন করা প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে দেশি-বিদেশি পরামর্শক নিয়োগ করে লাভজনক না হওয়ার কারণগুলো চিহ্নিত করতে হবে এবং সে অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা করে অগ্রসর হতে হবে। এর ফলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের পর কোম্পানিগুলো মুনাফাজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হবে এবং পুঁজিবাজারে আসতে পারবে।

দুই বছর পরেও সরকারি কোম্পানিগুলোর শেয়ার বাজারে ছাড়ার আগে আবার কোম্পানিগুলোর সম্পদ পুনর্মূল্যায়নের কথা বলা হয়েছে। গত আট বছরেও আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় যে সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়নি আগামী দুই মাসে তা কার্যকর হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েই গেল।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button