জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

সবার অংশগ্রহণে অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চান গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা

এবিএনএ : সব দলের অংশগ্রহণে আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করার পক্ষে মত দিয়েছেন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা। সাংবিধানিকভাবে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) যে ক্ষমতা আছে সেটির প্রয়োগ করার ওপরও জোর দেন তারা।

বুধবার সকাল ১০টায় রাজধানীর অাগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনের সম্মেলন কক্ষে সংলাপে গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা এ মত দেন।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা সংলাপে সভাপতিত্ব করেন। এ ছাড়া চার নির্বাচন কমিশনার উপস্থিত ছিলেন।
ইসির একটি সূত্র জানায়, বুধবারের সংলাপে অংশ নিতে প্রিন্ট মিডিয়ার ৩৪ জন প্রতিনিধিকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। তাদের মধ্যে ২২ জন সংলাপে অংশ নেন।
আমন্ত্রিতদের মধ্য থেকে সংলাপে উপস্থিত ছিলেন (নির্বাচন কমিশনের তালিকার ক্রমানুসারে) নিউএজ সম্পাদক নূরুল কবির, যুগান্তরের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক সাইফুল আলম, ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত, কালের কণ্ঠ নির্বাহী সম্পাদক মোস্তফা কামাল, মানবজমিন প্রধান সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, ভোরের কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত, আমাদের অর্থনীতি সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি মুহাম্মদ শফিকুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল ও মহাসচিব ওমর ফারুক, বিএফইউজের অপর অংশের মহাসচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহ, সাংবাদিক মাহফুজউল্লাহ, প্রথম আলোর সহযোগী সম্পাদক আনিসুল হক, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর, সাপ্তাহিক সম্পাদক গোলাম মর্তুজা, কলাম লেখক বিভুরঞ্জন সরকার, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক মাহবুব কামাল, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, দৈনিক সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক খন্দকার মুনীরুজ্জামান, যায়যায়দিনের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কাজী রুকুনউদ্দীন আহমেদ, সাংবাদিক কাজী সিরাজ ও সাংবাদিক আনিস আলমগীর।
সংলাপ থেকে বেরিয়ে জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি শফিকুর রহমান বলেন, ‘অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে (ইসিকে) নিরপেক্ষ ভূমিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি।’
বিএফইউজের একাংশের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ‘নির্বাচন একটা রাজনৈতিক উৎসব। সব দলের অংশগ্রহণ যেন নিশ্চিত করা যায় সে ব্যবস্থা নিতে হবে। দলগুলোর আস্থা অর্জন করতে হবে।’
সার্বিকভাবে সেনাবাহিনী মোতায়েনের প্রয়োজন নেই বলে অনেকে মত দিয়েছেন জানিয়ে তিনি বলেন, অনেকে বলেছেন এখন যেভাবে মোতায়েন করা হয় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসাবে তারা থাকতে পারে। কেউ কেউ বলেছেনে ‘নো’ ভোট না থাকা ভালো, কেউ কেউ বলেছেন নো ভোট থাকতে পারে।
বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম সাংবাদিকদের বলেন, ভারতের নির্বাচন কমিশনের তুলনায় আইনগত দিক থেকে আমাদের কমিশন অনেক বেশি শক্তিশালী। আমরা বলেছি আপনারা শুধু মেরুদণ্ড সোজা করলেই হবে না, আপনাদের প্রকৃত ভূমিকা পালন করতে হবে। সাংবিধানিকভাবে আপনাদের যে ক্ষমতা আছে সেটির প্রয়োগ করে সব দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে। যেহেতু কমিশন নির্বাচন আয়োজক সংস্থা সেহেতু সবার অংশগ্রহণের জন্য যে প্রক্রিয়া দরকার তাই করতে হবে।
ভোরেরর কাগজ সম্পাদক শ্যামল দত্ত বলেন, সুষ্ঠু অবাধ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন শেষ করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া দলগুলোর আস্থা অর্জন, প্রয়োজনে সেনা মোতায়েন, না ভোটের বিধান এবং সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার প্রতিও জোর দেওয়া হয়েছে।
জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আমানুল্লাহ কবীর জানান, এখন থেকেই সবার জন্যে সমান সুযোগ তৈরি করতে উপযুক্ত পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। ইভিএম নিয়ে সব দলের সঙ্গে আলোচনার পর সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
ইত্তেফাকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক আশিস সৈকত বলেন, বিদ্যমান সীমানাতেই ভোট করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। জনসংখ্যার ভিত্তিতেই সীমানা পুননির্ধারণ করতে হবে। ২০১১ সালে সর্বশেষ আদমশুমারি প্রতিবেদন হওয়ায় নতুন করে আর সীমানা পুননির্ধারণের দরকার নেই।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন টেলিভিশন, রেডিও ও অনলাইন গণমাধ্যমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সংলাপে বসবে ইসি।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে গত ৩১ জুলাই থেকে সংলাপ শুরু করে ইসি। প্রথম দিন সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা সংলাপে অংশ নিয়ে নির্বাচনে নিয়মিত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংজ্ঞায় অন্তর্ভুক্ত করা, নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া, ‘না’ ভোট প্রবর্তন করাসহ বিভিন্ন প্রস্তাব তুলে ধরেছিলেন।
আগামী ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে ইসি। ওই দিন সকালে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের সংগে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। আর বিকাল ৩টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (মুক্তিজোট) সংগে বৈঠক হবে। পরে ২৮ আগস্ট সকাল ১১টায় বাংলাদেশ মুসলীম লীগ-বিএমএল আর বিকাল ৩ টায় খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বসবে ইসি। ৩০ আগস্ট সকাল ১১ টায় বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আর বিকাল ৩ টায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি- জাগপার সঙ্গে বসবে ইসি।
যেসব সুপারিশ এসেছে:
ইসির ভারপ্রাপ্ত সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ পরে সংলাপে পাওয়া সুপারিশগুলো তুলে ধরেন সাংবাদিকদের কাছে।
১. সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন প্রত্যাশা করেন গণমাধ্যম প্রতিনিধিরা।
২. বিদ্যমান আইনের সঠিক প্রয়োগ করার পরামর্শ
৩. সেনা মোতায়েনের পক্ষে বলেছেন কেউ কেউ; অধিকাংশই বলেছেন সেনা মোতায়েনের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন হলে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।
৪. না ভোটের পক্ষে-বিপক্ষে মত; কেউ ভালো বলেছেন, কেউ কেউ বিপক্ষে বলেছেন।
৫. দেশ-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের বিষয়ে সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
৬. গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ বাংলায় করার পরামর্শ
৭. জনসংখ্যার ভিত্তিতে সীমানা পুননির্ধারণ করার পরামর্শ
৮. সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি
৯. আচরণবিধি প্রয়োগে কঠোর হওয়ার পরামর্শ
১০. প্রবাসীদের ভোটার ও ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা
১১. নিরপেক্ষ কর্মকর্তাদের রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ
১২. ধর্মকে কোনোভাইবে যাবে ভোটের প্রচারে ব্যবহার করতে না পারে
১৩. অবৈধ অর্থ ও পেশি শক্তির ব্যবহার রোধ
১৪. প্রার্থীদের হলফনামা প্রকাশ ও প্রচারের উদ্যোগী হতে হবে
১৫. নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রণয়ন ও কাউকে যেন ভোকেন্দ্রে গিয়ে ফিরে আসতে না হয়
১৬. ইসিকে দৃঢ়তার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে
১৭. অনলাইনে মনোনয়ন নেওয়ার সুযোগ দিতে হবে
১৮. লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে
১৯. ভোটার ও প্রার্থীর আস্থা তৈরি করতে হবে
২০. নারী ভোটার উপস্থিতি ও নারী নেতৃত্বের অগ্রগতি ধরে রাখতে ভূমিকা নিতে হবে।

Share this content:

Back to top button