সন্তান মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। পরম ভালোবাসার ধন। সন্তানের মুখের হাসি স্বপ্ন দেখায় নতুন জীবনের, তার গায়ের গন্ধ জীবনে আনে কর্মোদ্যমতা। অন্যদিকে সন্তান পৃথিবীর সব নিরাশার মাঝে আশ্রয় খোঁজে পিতা-মাতার বুকে। তাদের বুকে মাথাগুজে নির্ভার হয় সে। ভালোবাসা ও মমতার শক্ত এ ভিতের ওপর টিকে আছে মানবজাতি, দাঁড়িয়ে আছে মানবসভ্যতা। মমতার গভীর এ মেলবন্ধন না থাকলে অন্যান্য জীবগোষ্ঠির মতো হয়তো মনুষ্য জাতি এতোদিন পৃথিবী থেকে হারিয়ে যেতো।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে একজন মমতাময়ী মা ও তার কাছে সন্তানের আশ্রয় প্রদানের বর্ণনা দিয়ে বলেছেন- ‘এবং মুসার মায়ের অন্তর অস্থির হয়ে উঠলো। যদি তার অন্তর সুদৃঢ় না করতাম তবে সে অস্থিরতা প্রকাশের উপক্রম হয়েছিলো। আর আমি তা করেছিলাম যেনো সে মুমিনদের অর্ন্তভুক্ত থাকে। … অতঃপর আমি তাকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দিলাম যাতে তার চক্ষু জুড়ায় এবং সে দুঃখ না করে। এবং জানতে পারে আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ তা জানে না।’ -সূরা কাসাস : ১০ ও ১৩
কিন্তু দুর্ভাগ্য স্নেহ ও মমতার পবিত্র বন্ধনে যেনো ছেদ পড়তে শুরু করেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে আপনজন মায়ের কাছেও সন্তানরা হয়ে উঠছে অনিরাপদ। মায়ের আঁচলে আশ্রয় নেওয়া সন্তানের নির্মম মৃত্যু হচ্ছে মায়ের হাতেই। কখনও কখনও সন্তানের হাতেও খুন হচ্ছে প্রিয় মা-বাবা। নিকট অতীতকালে দেশবাসী এমন কিছু খবর দেখেছে। যার মাত্রা দিন দিন বাড়ছে। ভ্রুণ হত্যা ও অবৈধ গর্ভপাতের কথা না হয় বাদই দিলাম।
ক্রমবর্ধমান এ অপরাধ প্রবণতা সমাজের বিবেকবান শ্রেণীকে ভাবিয়ে তুলেছে। পৃথিবীর সবচেয়ে নিরাপদ আশ্রয় পিতা-মাতার কাছে যদি সন্তানের জীবন অনিরাপদ হয়ে যায়, তবে শিশুরা যাবে কোথায়? আর কেনোইবা এই নৈতিক ও মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হলো আমাদের সমাজে?
সমাজতাত্ত্বিকদের অভিমত হলো, বস্তুবাদী জীবনব্যবস্থার ভোগবাদী মানসিকতা, তথ্য-প্রযুক্তির অবাধ প্রবাহের ফলে সৃষ্ট নৈতিক স্খলন, একক পরিবার ব্যবস্থার চাপ ও বিষন্নতা, সুশাসনের অভাব ও ভবিষ্যৎ জীবনের অনিশ্চয়তা, পারিবারিক ও সামাজিক অনুশাসনের অনুপস্থিতি; সর্বোপরি খোদাভীতি ও ধর্মীয় জীবন থেকে বিমুখতাই এ বিপর্যয়ের প্রধান কারণ।