অর্থ বাণিজ্যলিড নিউজ

সঞ্চয়পত্র কেনার সীমা কমছে

একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা * প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সঞ্চয় বন্ড জনপ্রিয় করতে রোডশো

এবিএনএ : সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হচ্ছে সরকার। সঞ্চয়পত্র বিক্রির লাগাম টানতে ক্রয়সীমা কমানো হচ্ছে। একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কেনা যাবে না। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রের কাগুজে সার্টিফিকেটের (সঞ্চয়পত্রে বই) পরিবর্তে অটোমেটেড সিস্টেমে সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হবে। পাশাপাশি প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছে সঞ্চয় বন্ড জনপ্রিয় করতে রোডশো করা হবে।

বর্তমানে একক নামে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৩০ লাখ টাকা করে মোট ৬০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা যায়। এ ছাড়া মহিলা, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনের নামে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের পাশাপাশি পরিবার সঞ্চয়পত্রে আরও ৪৫ লাখ পর্যন্ত টাকা বিনিয়োগ করা যায়। অর্থাৎ মহিলা, প্রতিবন্ধী ও সিনিয়র সিটিজেনরা একক নামে মোট এক কোটি পাঁচ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারতেন। যৌথ নামে এক কোটি ২০ লাখ টাকার তিন মাস অন্তর ও পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র কেনা যেত। নতুন সিদ্ধান্তে একক নামে ১০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে ২০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র কম কিনতে পারবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতরের মহাপরিচালক সামছুন্নাহার বেগম যুগান্তরকে বলেন, একক নামে সর্বোচ্চ ৫০ লাখ টাকা এবং যৌথ নামে সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সঞ্চয় অধিদফতর সঞ্চয়পত্রের জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালা প্রণয়নের কাজ করছে। সেখানে বিষয়গুলো উল্লেখ থাকবে। নীতিমালার খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। স্টেকহোল্ডারদের মতামতের জন্য এটি শিগগির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। আগামী জুন থেকে নীতিমালা বাস্তবায়ন করা যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

সিডিএমসির সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে- নতুনভাবে আর কাগুজে সঞ্চয়পত্র ছাপানো হবে না। তবে সিকিউরিটি প্রিন্টিং প্রেসে থাকা সঞ্চয়পত্রগুলোর মূল্য পরিশোধ সাপেক্ষে নিষ্পত্তি করা হবে। সঞ্চয়পত্র ম্যানুয়ালি ইস্যু না করে অটোমেটেড সিস্টেমে ইস্যু করা হবে। আগে সঞ্চয়পত্র হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে নতুন সঞ্চয়পত্র ইস্যু করা হতো। সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়- ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড এবং ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ডে প্রবাসী বাংলাদেশিদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে মধ্যপ্রাচ্য, মালয়েশিয়া, যুক্তরাজ্য, ইতালিসহ বেশ কয়েকটি দেশে রোডশো করা হবে। সঞ্চয় অধিদফতর সূত্র জানায়, সিদ্ধান্ত হওয়ার পরপরই সঞ্চয় অধিদফতরের আঞ্চলিক অফিসগুলোয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে মৌখিকভাবে জানিয়ে দেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সঞ্চয়পত্রে সরকারের ব্যয় কম হচ্ছে। এ হিসেবে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগের সীমা কমানো ইতিবাচক। এ ছাড়া একক নামে সঞ্চয়পত্রে কোটি টাকা বিনিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছে। যে ব্যক্তি কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন তিনি মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত নন। নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য সরকার সঞ্চয়পত্র চালু রেখেছে। তিনি আরও বলেন, সঞ্চয়পত্র অটোমেটেড করার উদ্যোগ নিঃসন্দেহে ভালো। তবে সঞ্চয়পত্র কিনতে গিয়ে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত মানুষ যাতে ভোগান্তিতে না পড়ে সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। সভায় বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট ডিপার্টমেন্টের মহাব্যবস্থাপক জানান, সঞ্চয়পত্রের মতো সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ করলে কর রেয়াত সুবিধা পাওয়া যায়। তবে সঞ্চয়পত্রে মুনাফার ওপর উৎসে কর দিতে হয়, কিন্তু সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত আয় সম্পূর্ণ করমুক্ত এবং সুদের হার চক্রবৃদ্ধি হওয়ায় অধিক লাভযুক্ত বিনিয়োগ। এ বিষয়ে জনসাধারণকে সচেতন করতে রোডশো গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ।

জানতে চাইলে মহাব্যবস্থাপক খুরশীদ আলম যুগান্তরকে বলেন, দেশের ২১টি প্রাইমারি ডিলার ব্যাংকে বিভিন্ন মেয়াদে সরকারি সিকিউরিটিজ বিক্রি করা হয়। এসব সিকিউরিটিজে বিনিয়োগ নিরাপদ, অধিক লাভজনক এবং কর রেয়াত পাওয়া যায়।

সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমেছে : জাতীয় সঞ্চয় অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, নানা শর্তের বেড়াজালে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। গত অর্থবছরের তুলনায় চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে (জুলাই-নভেম্বর) সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৭৩ শতাংশ কমেছে। সূত্র জানায়, অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পাঁচ হাজার ৮৪১ কোটি ৬৪ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে। অথচ আগের অর্থবছরে ২৭ হাজার কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। এ হিসাবে সঞ্চয়পত্র বিক্রি ৭৩ শতাংশ কমেছে। মাস ভিত্তিতে নভেম্বরে ৩২০ কোটি ৬২ লাখ টাকা সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়। আগের বছরের একই মাসে তিন হাজার ৮৩৩ কোটি টাকা সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছিল। সঞ্চয়পত্র কেনার ক্ষেত্রে নানা বাধ্যবাধকতা আরোপ ও কর বাড়ানোয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রি কমেছে। পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এক লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সঞ্চয়পত্রের সব লেনদেন ব্যাংক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে হচ্ছে। দুর্নীতি বা অপ্রদর্শিত আয়ে সঞ্চয়পত্র কেনা বন্ধে অভিন্ন সফটওয়্যারে সঞ্চয়পত্র বিক্রি কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এ ছাড়া সঞ্চয়পত্রে বড় বিনিয়োগে কঠোর হয়েছে সরকার। চাইলেই ভবিষ্য তহবিল বা প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থে সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ নেই।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button