শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, অপেক্ষায় সারা বিশ্ব

এবিএনএ : অবশেষে সেই দিনটি এলো। পরাক্রমশালী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আজ বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যায় শুরু হওয়া ভোটগ্রহণ শেষ হবে বুধবার সকালে। জানা যাবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে কে যাচ্ছেন হোয়াইট হাউসে, ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী হিলারি ক্লিনটন নাকি রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্র আজ বেছে নেবে পরবর্তী চার বছরের জন্য তাদের নতুন নেতা। মূল নির্বাচনী প্রচারণা শুরুর পর থেকেই বিভিন্ন গণমাধ্যমের পরিচালিত জনমত জরিপে দেখা গেছে, হিলারি ক্লিনটনই এগিয়ে রয়েছেন। সর্বশেষ জরিপ অনুযায়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে হিলারি ক্লিনটন ৩ পয়েন্ট এগিয়ে রয়েছেন। এর আগে অনুষ্ঠিত তিনটি প্রেসিডেনশিয়াল বিতর্ক শেষেও দেখা গেছে একই চিত্র। এগিয়ে ছিলেন হিলারি। যুক্তরাষ্ট্রের ৫০টি অঙ্গরাজ্য ও ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়ায় ভোটগ্রহণ হবে। ডিস্ট্রিক্ট অব কলাম্বিয়া (ওয়াশিংটন নগরী) কোনো অঙ্গরাজ্যের অংশ নয়। ভোটাররা তাদের ভোটের মাধ্যমে প্রেসিডেন্ট ও একজনকে ভাইস-প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবেন। একজন ভোটার নিজের পছন্দের প্রেসিডেন্টের জন্য ভোট দেওয়ার সময় একই সঙ্গে ইলেক্টোরাল প্রতিনিধির জন্যও ভোট দেবেন। মূলত ভোটাররা ইলেক্টর নির্বাচনের জন্য ভোট দেবেন। কারণ কাগজে-কলমে এ ইলেক্টরদের ভোটেই নির্বাচিত হন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট। প্রতিটি অঙ্গরাজ্যের পপুলার ভোটের মাধ্যমেই ইলেক্টোরাল কলেজের সদস্যদের নির্ধারণ করা হয়। ইলেক্টোরাল কলেজের প্রতিনিধিদের নির্বাচিত করা হয়ে থাকে দলীয় ভিত্তিতে। ৫৩৮টি ইলেক্টোরাল কলেজের মধ্যে যিনি ন্যূনতম ২৭০টি পাবেন, তিনিই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত বলে ঘোষিত হবেন এবং ভাইস প্রেসিডেন্ট পদে তার রানিংমেট আপনা-আপনিই নির্বাচিত হয়েছেন বলে বিবেচিত হবে। আজ নির্বাচনে মার্কিন নাগরিকরা দুই বছরের জন্য হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভের ৪৩৫ জন সদস্য ও ছয় বছরের জন্য ১০০ সিনেটরের মধ্যে ৩৪ জনকেও নির্বাচিত করবেন। একই দিনে ভোটাররা ১২টি অঙ্গরাজ্যের গভর্নরকেও নির্বাচিত করবেন। মার্কিন গণমাধ্যমগুলোর বিভিন্ন প্রতিবেদনের তথ্য মতে, প্রধান দুই প্রতিদ্বন্দ্বীর কেউই যে খুব সহজে এই নির্বাচনী বৈতরণী পার হতে পারছেন না, তা পরিষ্কার। ব্যাটলগ্রাউন্ড-খ্যাত ১১টি রাজ্যের ১৪৬টি ইলেক্টোরাল ভোট নিয়েই এখন সব আগ্রহ। এর মধ্যে ডোনাল্ড ট্রাম্পের এগিয়ে থাকা ফ্লোরিডা, ওহাইও এবং আইওয়া অঙ্গরাজ্যে সব মিলিয়ে ৫৩টি ইলেক্টোরাল ভোট। এই তিন রাজ্যে তিনি জিতে গেলেও চূড়ান্ত জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭০টি ইলেক্টোরাল ভোট থেকে তিনি অনেক দূরে থাকবেন। সে কারণেই নেভাদা, নিউ হ্যাম্পশায়ার ও আইওয়ার মতো ছোট রাজ্যগুলোও শেষ মুহূর্তে চষে বেড়াচ্ছেন তিনি। অন্যদিকে ফ্লোরিডায় নিজের অবস্থানের উন্নতি করা এবং একই সঙ্গে অধিক ইলেক্টোরাল ভোটের নর্থ ক্যারোলাইনা, পেনসিলভেনিয়া, মিশিগান ও ভার্জিনিয়ার মতো রাজ্যগুলোতে নিজের শক্তি ক্ষয় করছেন হিলারি ক্লিনটন। এ ছাড়া উইসকনসিন এবং কলোরাডোও ছাড় দিতে নারাজ দুজনের কেউই। তবে শেষ পর্যন্ত ব্যাটলগ্রাউন্ডের পরিণতি দেখতে ভোট গণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। নির্বাচিত হলে হিলারি ক্লিনটন হবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে রাজনীতিতে আছেন হিলারি ক্লিনটন। অন্যদিকে হিলারি ক্লিনটনের এক সময়ের এই দাতা ট্রাম্প ১৮ মাসেরও কম সময় আগে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। এই কম সময়েই নানান বিতর্ক ও সমালোচনার জন্ম দিয়ে চ্যালেঞ্জে ফেলেছেন হিলারিকে। নির্বাচনের প্রার্থী হওয়ার সময়ই ১৭ প্রার্থীকে পরাজিত করে রাজনৈতিক বোদ্ধাদের মধ্যে বিস্ময় তৈরি করেছেন। গতকাল সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, নির্বাচনে হিলারির জয়ের সম্ভাবনা ৪৫ দশমিক আট ভাগ এবং রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ৪৩ ভাগ। জরিপে বলা হয়, ১৯১টি স্টেটে ডেমোক্রেট পার্টির এবং ১৫৪টি স্টেটে রিপাবলিক পার্টির শক্তিশালী অবস্থান রয়েছে। স্টেটভিত্তিক জরিপে দেখা যায়, হিলারি জয়ের সম্ভাবনা ভার্জিনিয়ায় ৯৫ ভাগ, পেনসিলভিনিয়ায় ৮৯ ভাগ, উইসকনসিনে ৯৩ ভাগ, কলোরাডোতে ৮৮ ভাগ, মিশিগানে ৯২ ভাগ, মিনেসোটায় ৯৩ ভাগ, নিউ ক্যালিফোর্নিয়ায় ৬৭ ভাগ, নিউ হ্যাম্পশায়ারে ৭৬ ভাগ, ফ্লোরিডায় ৬৬ ভাগ এবং নেভেদায় ৭০ ভাগ। এদিকে ট্রাম্পের জয়ের সম্ভাবনা ওহিওতে ৫৫ ভাগ, অ্যারিজোনাতে ৮১ ভাগ, জর্জিয়াতে ৭৭ ভাগ, লওয়াতে ৬৩ ভাগ এবং মিসওরিতে ৯৭ ভাগ। পলিটিকো/মর্নিং কনসাল্ট-এর জনমত জরিপে হিলারি ক্লিনটন এগিয়ে রয়েছেন তিন পয়েন্টে। এতে হিলারিকে সমর্থন দিয়েছেন ৪৫ শতাংশ। আর ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন ৪২ শতাংশ। রিয়েল ক্লিয়ার পলিটিক্স-এর গড় জরিপে ডোনাল্ড ট্রাম্প মাত্র ১ দশমিক ৮ শতাংশ পিছিয়ে আছেন। বিভিন্ন প্রতিবেদনে অনেক রাজ্যে অবস্থান পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে। তাই শেষ সময় পর্যন্ত নাওয়া খাওয়া ভুলে প্রচারণায় ছিলেন হিলারি ক্লিনটন ও ডোনাল্ড ট্রাম্প। প্রচারণার শেষ সময়ে গতকাল ফিলাডেলফিয়ায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে অংশ নেন হিলারি ক্লিনটন। মধ্য রাতে নর্থ ক্যারোলিনার রাজধানী রালেগ-এ আয়োজিত র্যালিতে তাকে সর্বশেষ নির্বাচনী প্রচারণায় দেখা যায়। একই সময়ে মিশিগানে অনুষ্ঠিত হয় ডোনাল্ড ট্রাম্পের শেষ র্যালি।
Share this content: