বাংলাদেশরাজনীতিলিড নিউজ

লন্ডনে তারেক রহমান ও অনুসারীদের বিপদজনক তৎপরতা

এবিএনএ : বাংলাদেশে যাদের স্থায়ীভাবে বসবাসের ইরাদা আছে তাদের এখন থেকেই অনেক বেশি সাবধান হতে হবে। আমাদের তো অনেকের মত বিদেশে সেকেন্ড হোম নেই। দেশ মানে একটা, বাড়িও আছে একটা, তাও অধিকাংশের গ্রামের বাড়ি। আমাদের বাপ-দাদারা এই দেশে জন্ম নিয়ে নিজেরা তাদের বাবা-মার যত্নে বড় হয়েছেন, আমাদেরকে বড় করেছেন; আমরাও এখন অনেকে বাবা-মা হয়েছি। আমাদেরও অনেকের সন্তান আছে। এই সন্তান বড় করার চেষ্টায় আছি আমরা। এই সন্তান বড় হয়ে কি তার নিজের আওলাদদের জন্য বাসযোগ্য বাংলাদেশ রেখে যেতে পারবে? তাই আমাদের সকলকে এখন থেকেই সাবধান হতে হবে। নিজেদের স্বার্থেই আমাদেরকে সমঝদার হতে হবে, না হলে ইহকালেই ভয়ানক আজাব নেমে আসবে। দেশের ভেতরে আমাদের শত্রু আছে; এরা সম্পদ লুটে বিদেশে পাচার করছে। বিদেশে আগেও ছিল, এখনো আছে। এরা বাংলাদেশকে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রে রূপান্তরিত করতে চায়। নতুন করে একদল সৃষ্টি হয়েছে বিলেতের লন্ডনে। এরা বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে লন্ডনে গিয়ে বাংলাদেশবিরোধী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয়েছে। এই আত্মঘাতী বাঙালির দল ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থ হাসিলের নেশায় হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে উন্মাদ হয়ে গেছে। প্রতিবাদের নামে এরা কখন কী করছে, নিজেরাও বুঝতে পারছে না। এরা বিদেশে বাংলাদেশের বদনাম করছে। ক্ষুদ্র গোষ্ঠী স্বার্থের জন্য এরা শুধু বাংলাদেশের অস্তিত্বকেই হুমকির মধ্যে ফেলছে না, বিলেতে বসবাসকারী শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশিদের জন্য বিপদ সৃষ্টি করছে। হয়ত সেদিন বেশি দূরে নয়, যখন এদের জন্য বাংলাদেশ থেকে বিলেত যাওয়ার উপর স্থায়ী নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে। কারণ সেখানে,  বিশেষ করে লন্ডনে এই বিশেষ শ্রেণির বাংলাদেশিদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে চলেছে। ফলে অন্যান্য সাধারণ ও শান্তিপ্রিয় বাংলাদেশিদের বদনাম হচ্ছে।

এই তো সেদিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে এক সরকারি সফরে গিয়েছিলেন। সে সময় একদল বাংলাদেশি ঢাকঢোল নিয়ে তার অনুষ্ঠানস্থলের আশেপাশে প্রতিবাদ কর্মসূচির নামে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হিন্দু ধর্মকে জড়িয়ে আপত্তিকর স্লোগান দিয়ে সামাজিক মাধ্যমে তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। কমনওয়েলথ সম্মেলনে যোগ দিতে ১৬ থেকে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যে অবস্থান করেন প্রধানমন্ত্রী। সে সময় একদল বাংলাদেশি এই ঘৃণ্য কাণ্ড করে বসে। আমি ভদ্রতা করে এই উচ্ছৃঙ্খল মানুষগুলোকে ‘বাংলাদেশি’ বলছি। আসলে এরা সবাই বিএনপি-জামাতের প্রবাসী কর্মী।  ভিডিওতে দেখা যায়, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে হিন্দু দেবতার নাম জড়িয়ে স্লোগান দিচ্ছে যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি এম এ মালেকের নেতৃত্বে সেখানকার একদল নেতাকর্মী।

খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার দাবির ব্যানার নিয়ে দাঁড়ানো ওই সমাবেশে উগ্র সাম্প্রদায়িক স্লোগান দেয়ার পর যুক্তরাজ্য বিএনপির সভাপতি মালেক সেখানে একজন গণমাধ্যমকর্মীকে সাক্ষাৎকারও দেন। সেই ছবিও আছে গণমাধ্যমে। ভিডিওটিতে দেখা যায় বিএনপির নেতা-কর্মীরা তুমুল উৎসাহের সঙ্গে স্লোগান দিচ্ছে ‘হরে কৃষ্ণ, হরে রাম! শেখ হাসিনার বাপের নাম…!!!’। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই ধরনের স্লোগানের ব্যবহার সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদের সরাসরি লংঘন। আর ঘটনাটি দেশের বাইরে হলেও যেহেতু ওই দেশের বিএনপি এই কাজ করেছে, তার দায় দলের কেন্দ্রকেই নিতে হবে। সংবিধানের ১২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ১. সর্বপ্রকার সাম্প্রদায়িকতা, ২. রাষ্ট্র কর্তৃক কোন ধর্মকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দান, ৩. রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ধর্মের অপব্যবহার এবং ৪. বিশেষ ধর্ম পালনকারী ব্যক্তির প্রতি বৈষম্য বা তার উপর নিপীড়ন– বিলোপ করা হবে। অর্থাৎ সংবিধানের এই অনুচ্ছেদের এক এবং তিন উপ অনুচ্ছেদের লংঘন হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির কাছে ব্যাখ্যা দাবি করা উচিত বলে মনে করেন চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কৌঁসুলি তুরিন আফরোজ।

এই আইনজীবী ঢাকাটাইমসকে বলেন, ‘লন্ডনে যে সাম্প্রদায়িক স্লোগান দেয়া হয়েছে, আমাদের সংবিধান অনুযায়ী এই দল থাকতে পারে না। যারা সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কানি দেয় তাদের এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার দেয়নি আমাদের সংবিধানে।’ ‘বিএনপি আন্ডারগ্রাউন্ড সন্ত্রাসী দলের মতো করছে। যারা এই ধরনের কর্মকাণ্ড করেছে, বিএনপি বলছে তারা আমাদের নয়। তাহলে আপনারা প্রতিবাদ করছেন না কেন? প্রতিবাদ না করে এটাকে প্রচ্ছন্ন সমর্থন করছে।’ তুরিন আফরোজ বলেন, ‘আসলে এরা বিদেশের মাটিতে বিএনপির ক্ষতি করছে। এটা একটা বাজে প্র্যাকটিস, এতে বিএনপিরই ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে।’ এই সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেয়ায় যুক্তরাজ্য সরকারেরও সমালোচনা করেন তুরিন আফরোজ। বলেন, ‘গণতন্ত্রের পূণ্যভূমিতে (যুক্তরাজ্য) বারবার এ ধরনের কর্মকাণ্ড দেখছি। সেখানে ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতার চর্চা হয়েছে, আমাদের মিশনে আক্রমণ করা হচ্ছে, এতে ভিয়েনা কনভেনশনের লঙ্ঘন হচ্ছে। তারা এই ধরনের কর্মকাণ্ডকে আশ্রয় প্রচ্ছয় দিচ্ছে। এমনকি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকেও তারা আশ্রয় দিচ্ছে।’

তারেক রহমান নিজে পাসপোর্ট সারেন্ডার করে রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়েছেন লন্ডনে। দুর্নীতি আর সন্ত্রাসী হামলার মামলার ফেরারি আসামি তারেক রহমান লন্ডনে যত পারছেন, বাংলাদেশের নাম বদনাম করছেন। তারেক রহমান হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে এমন কিছু করে চলেছেন যার কিমাত দিতে হবে পুরো বাংলাদেশকে! তারেক রহমান ইউরোপে বাংলাদেশকে একটি ব্যর্থ, দুর্নীতিগ্রস্ত রাষ্ট্র হিসেবে উপস্থাপন করছেন। বিদেশে বসে বিবৃতি দেয়ার নামে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃত করছেন। কী এক অন্ধ আক্রোশে মেতে আছেন জিয়াউর রহমান সাহেবের ছেলে তারেক রহমান! তারেক রহমান যদি নির্দোষ হয়ে থাকেন, দেশে ফিরে এসে মামলা মোকদ্দমা আইনি প্রক্রিয়ায় মোকাবেলা করুন। এত বড় দলের নেতা বিদেশে পালিয়ে থাকছেন।  জেল-জরিমানার এত ভয় থাকলে জননেতা হবেন কীভাবে?

তারেক রহমান সাহেব মনে হয় বিএনপি আর জামাতের মধ্যকার পার্থক্য ভুলে গেছেন। না হলে জামাতের কাজ উনি নিজ দায়িত্বে করাচ্ছেন কীভাবে? বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলা করিয়েছেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ছবিকে ভয়ানকভাবে অপমান করিয়েছেন। তারেক রহমান তাঁর বাবার ভুলগুলো শোধরাতে পারতেন। ষড়যন্ত্র আর সন্ত্রাসের পথ পরিহার করে নিয়মতান্ত্রিক পথে রাজনীতি করে দেশের ভেতর গঠনমূলক ভূমিকা রেখে কলঙ্কজনক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঠেকাতে পারতেন। জিয়াউর রহমান সাহেব বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের অন্যতম নির্দেশদাতার ভূমিকা পালন করেছিলেন। গোলাম আযমসহ সমস্ত যুদ্ধাপরাধী আর বঙ্গবন্ধুর খুনিদের পুনর্বাসন করে বাংলাদেশের জন্য স্থায়ী আপদের ব্যবস্থা করে গিয়েছিলেন। খালেদা জিয়ার আমলেও জামাত এবং যুদ্ধাপরাধীদের রাষ্ট্রীয় পুনর্বাসন অব্যাহত ছিল। এই সুযোগে দেশে জঙ্গিবাদের জন্ম দিয়েছিল স্বাধীনতা-বিরোধীরা। এর পরিণাম বিএনপিকে ভুগতে হয়েছে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে। সে নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দল আওয়ামী লীগ বিপুল ভোটে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসে।

গত ৯ বছরে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে। অর্থনৈতিক উন্নয়ন অব্যাহত আছে। এখনো অনেক সমস্যা রয়েছে বাংলাদেশে। কিন্তু দেশের মানুষদের বড় একটা অংশ বিশ্বাস করে, শেখ হাসিনার সরকারের অন্তত আরেক দফা ক্ষমতায় থাকা উচিত। শান্তির পথে বিএনপির আপাতত ক্ষমতায় ফেরার কোন কারণ নেই। তাই বুঝি, দেশে-বিদেশে ষড়যন্ত্রের ফাঁদ পেতেছেন তারেক রহমান। কিন্তু বাংলাদেশ যে অনেক বেশি শক্তিশালী এখন। এদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহ, সর্বোপরি দেশের সাধারণ মানুষ আগের থেকে অনেক বেশি দক্ষ, সচেতন এবং সক্রিয়।

এমতাবস্থায় ষড়যন্ত্রের পথে হেঁটে নিজের এবং দলের সর্বনাশ ডেকে আনছেন তারেক রহমান। বিএনপি একটি জনপ্রিয় দল কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু এই জনপ্রিয় দল নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে, যদি তারেক রহমান নিজেকে শোধরাতে না পারেন। সুস্থ ও স্বাভাবিক রাজনীতি করেই দেশে টিকে থাকতে হবে। বিএনপির নিয়ন্ত্রণ জামাত নিয়ে নিলে, বাংলাদেশের কপালে আরও দুর্দশা নেমে আসতে পারে। তবে দেশের মানুষ এখন এতটাই সচেতন যে, নিজেদের অগ্রগতির পথ রুদ্ধ হবে এমন কিছু করতে দেবেন না তারা। ফলে ষড়যন্ত্রের পথে হাঁটলে বিএনপি নিজে ধ্বংস হবে, বাংলাদেশ কিন্তু ধ্বংস হবে না, এগিয়ে যাবে।

Share this content:

Related Articles

Back to top button