অর্থ বাণিজ্যলিড নিউজ

হয়রানিমুক্ত রাজস্ব ব্যবস্থার প্রতি দৃষ্টি দেওয়ার আহ্বান

এবিএনএ : দেশের অর্থনীতির সুষ্ঠু বিকাশে ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ যথাযথভাবে কর দিতে চায়, এ কথা উল্লেখ করে রাজস্ব ব্যবস্থা ব্যবসাবান্ধব ও হয়রানিমুক্ত করতে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের প্রতি (এনবিআর) আহ্বান জানিয়েছে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই।

বৃহস্পতিবার এফবিসিসিআইর সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ী নেতারা এ আহ্বান জানান। আগামী ২০১৮-২০১৯ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে যেন মূল্য সংযোজন কর (মূসক), শুল্ক ও আয়কর বিষয়ে এফবিসিসিআইর প্রস্তাবসমূহ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হয়, সে লক্ষ্যে এ আহ্বান জানায় সংগঠনটি।
সভায় এফবিসিসিআইর সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, আমাদেরকে বেশকিছু চ্যালেঞ্জ সামনে নিয়ে বাজেটের কার্যক্রম করতে হবে। ২০২১ সালের ভিশন বাস্তবায়ন এবং ২০৪১ সালের উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যে সরকারি এবং বেসরকারি খাতকে একসাথে কাজ করতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ব্যবসা-বাণিজ্যের সহায়ক পরিবেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ তৈরির ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি আরো বলেন, আয়কর, মূসক, শুল্ক আইন ও বিধি-বিধান ব্যবসাবান্ধব হলেই দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য সঠিকভাবে পরিচালিত হবে এবং সরকার অটোমেটিক্যালি তার রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে সক্ষম হবে। সরকারের রাজস্ব আহরণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরাই অগ্রণী ভূমিকা পালন করে থাকে। আমরা জানি, মূসক এবং আয়করের ক্ষেত্রে ৭০ শতাংশ থেকে ৮০ শতাংশ রাজস্ব উৎসে আদায় হয়ে থাকে। আর এই উৎসে আদায়ের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ভূমিকা বা দায়িত্ব অপরিসীম। তাই রাজস্ব নীতি গ্রহণ এবং বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদেরকে সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। এখানে যেন আস্থার সংকট তৈরি না হয়।
এফবিসিসিআইর সভাপতি বলেন, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের বাজেটের আকার ৪ লক্ষ ২৬৬ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে ৪ লাখ ৬০ হাজার বা ৪ লাখ ৭৫ হাজার কোটি টাকা বাজেটের আকার হতে পারে বলে অর্থমন্ত্রী ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছেন। বাজেটের আকার বৃদ্ধি করা হলে রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করে তা নির্ধারণ করা হয়ে থাকে। তখনই ব্যবসায়ীরা শংকিত হয়ে পড়েন। এ ধরনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের সাথে পরামর্শ করা হয় না। বড় আকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ প্রয়োগ করা হয়। তখনই আইন ও বিধি-বিধানের অপপ্রয়োগ, জুলুম, হয়রানি বৃদ্ধি পায়। দেশের উন্নয়নে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আহরণের বিকল্প নেই। তবে সেটি আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে হতে হবে। যারা এখনো করের আওতার বাইরে তাদেরকে করজালের আওতায় এনে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের দিকে নজর দিতে হবে। আয়করের ক্ষেত্রে ই-টিআইএনধারীর সংখ্যা প্রায় ৩০ লাখ। অথচ রিটার্ন দাখিল করে মাত্র ১২ লাখ। এটা হতে পারে না। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, রাজধানী ঢাকাসহ সিটি করপোরেশন, জেলা শহর, উপজেলা এমনকি পৌরসভাসহ প্রতিটি এলাকায় আয়কর প্রদানে সক্ষম ব্যাক্তিদের আয়কর আওতায় আনলে এ দেশের রাজস্ব আহরণের চিত্র পাল্টে যাবে। তখন ব্যবসায়ীদের ওপর জুলুম কম হবে। অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ বাজেট দেওয়া সম্ভব হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড আগামীতে পূর্ণাঙ্গ অটোমেশনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে আমরা তার প্রশংসা করি। সুতরাং কর আদায় এবং ফাঁকি বন্ধ করার ক্ষেত্রে অটোমেশনের মাধ্যমে বিরাট পরিবর্তন সাধিত হবে।
মতবিনিয়য় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, আগামী বাজেটে মূসক ও শুল্ক হার ব্যবসায়ীদের জন্য সহনীয় রাখাসহ বিভিন্ন খাতের গুরুত্ব অনুযায়ী স্তরভিত্তিক মূসক নির্ধারণ করা হবে। এছাড়া আগামী বাজেটে স্থানীয় শিল্পের সংরক্ষণে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হবে।
তিনি আরো বলেন, সরকারের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ বছর রাজস্বের পরিমাণ আরো ৪০ শতাংশ বাড়াতে হবে। এক্ষেত্রে দেশের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের প্রয়োজনীয় সহযোগিতা জরুরি। আর পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে যাতে বন্ড সুবিধার অপব্যবহার না হয় এজন্য ব্যবসায়ীদের সতর্ক থাকারও পরামর্শ দেন এনবিআর চেয়ারম্যান।
এফবিসিসিআই সভাপতি মো. শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন- সংসদ সদস্য ও এফবিসিসিআইয়ের প্রাক্তন পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী, বিজিএমইএর সভাপতি মো. সিদ্দিকুর রহমান, এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম,  সহ-সভাপতি মো. মুনতাকিম আশরাফ ও পরিচালকবৃন্দসহ সংগঠনের সদস্য ও সংস্থার প্রধানগণ।

Share this content:

Back to top button