
এবিএনএ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে রাজধানী ঢাকাসহ জেলার মোট ২০টি সংসদীয় আসনে যে কোনো মূল্যে আবারো জয় পেতে চায় সরকারি দল আওয়ামী লীগ। তাদের ধারনা দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরবর্তীতে দেশজুড়ে নাশকতা প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে শুধু মাত্র রাজধানী তাদের দখলে থাকায়। এ কারণে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকার ২০টি আসনে পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে সরকারি দলটি। সংশ্লিষ্ট সুত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সূত্রটি জানায়, গত নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মহাজোট গঠন করে বর্তমান আওয়ামী লীগ। রাজধানীসহ ঢাকা জেলার মোট ২০ আসনে সবগুলোতেই জয়ী হয় মহাজোট প্রার্থীরা। দশম সংসদ নির্বাচনেও ঢাকার ২০টি আসনে জয় পায় মহাজোট। নবম সংসদে ঢাকা-১৭ আসনে জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচএম এরশাদ ও ঢাকা-৮ আসনে ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন ছাড়া ১৮ টি আসনেই আওয়ামী লীগ দলীয় প্রার্থীরা জয়ী হয়েছিলেন।
দশম সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-১ আসনে জাপার এডভোকেট সালমা ইসলাম, ঢাকা -৪ সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা, ঢাকা ৬ কাজী ফিরোজ রশীদ, ঢাকা -১৭ আসনে বিএনএফের এস এম আবুল কালাম আজাদ জয়ী হন, ঢাকা-৮ আসনে রাশেদ খান মেনন এবং ঢাকা-৭ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা হাজী মোহাম্মদ সেলিম জয়ী হন। ঢাকার বাকি ১৪ টি আসনে জয়ী হন আওয়ামী লীগ প্রার্থীরা। দশম নির্বাচনে ঢাকায় মহাজোট শরিকদের ৫টি আসনে ছাড় দিলেও আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে ২ থেকে ৩ টি আসনের বেশি ছাড় দেবে না আওয়ামী লীগ দলীয় বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়।
এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের একাধিক শীর্ষ নেতা বলেন, দশম নির্বাচনের আগে এবং পরে বিএনপি জামায়াত জোটের সহিংসতা প্রতিরোধে রাজধানীতে জোট শরিকদের খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবে সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত রাজপথে পাহারা বসিয়ে নাশকতাকারিদের প্রতিরোধ করেছেন অবিভক্ত ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি নির্বাচনের সময়ও মহাজোটের নেতাকর্মীদের মাঠে পাওয়া যায়নি। জোট শরিক দলগুলোর এমপিরা নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়েই ব্যাস্ত থাকেন। তাদের কাছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা চরম উপেক্ষিত বলেও জানান এই সব নেতারা।
মহাজোট শরিকদের আসন ছাড় দেওয়ার বিষয়টি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরেই চূড়ান্ত হবে। তবে দলীয় প্রার্থীতায় আওয়ামী লীগ যে ব্যাপক পরিবর্তন আনবে সে আভাস দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী শেখ হাসিনা ও সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। ঢাকা-৫ আসনের এমপি হাবিবুর রহমান মোল্লা, ঢাকা-১৮ আসনের এডভোকেট সাহারা খাতুন, ঢাকা-১৫ কামাল আহমেদ মজুমদার শারিরীর অসুস্থতার কারনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন থেকে বাদ পড়তে পারেন। তবে এই আসনগুলোতে এমপি’র ছেলে কিংবা দলের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী-মেধাবী ও যোগ্য প্রার্থীরা আগামী নির্বাচনে মনোনয়ন পেতে পারেন। ঢাকা-১৪ আসনের এমপি আসলামূল হক নেতিবাচক কর্মকান্ডের কারনে মনোনয়ন বঞ্চিত হতে পারেন। সেখানে কোমর বেধে মাঠে নেমেছেন সংরক্ষিত আসনের এমপি সাবিনা আকতার তুহিন। ঢাকা-১৬ আসনে ইলিয়াস উদ্দীন মোল্লার বিরুদ্ধে গত নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন মহানগর উত্তরের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এস এ মান্নান কচি। আগামী নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী। ঢাকা-১৯ আসনের এমপি ডা. এনামুর রহমানও মনোনয়ন থেকে বাদ পড়তে পারেন বলে দলীয় সুত্রে জানা যায়। ঢাকা-২০ আসনে বর্তমান এমপি আব্দুল মালেকের পরিবর্তে নতুন মূখ আনতে পারে আওয়ামী লীগ।
ঢাকা-৫ আসনে মনোনয়ন পেতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন বর্তমান এমপি আলহাজ্ব হাবিবুর রহমান মোল্লা’র বড় ছেলে মশিউর রহমান মোল্লা। নিজ যোগ্যতা-ব্যবহার এবং ওই আসনের অলিগলিতে মাদক-জঙ্গি ও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষনার মধ্যদিয়ে প্রতিদিন সভা-সমাবেশ করে যাচ্ছেন তিনি। একারণে বাবার আসনে তিনিই মনোনয়ন পাবেন এমন ধারণা ওই আসনের নবীন-প্রবীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের। ওই আসনে আরেক প্রার্থী যাত্রাবাড়ী থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হারুনর রশিদ মুন্নাও মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন। ঢাকা-৭ আসনের এমপি হাজী সেলিম মারাত্মক অসুস্থ। তিনি কথা বলতে পারেন না। ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে আগামীতে প্রার্থী করতে পারে আওয়ামী লীগ। জাপার এক নেতাও আওয়ামী লীগে যোগ দিয়ে প্রার্থী হতে পারেন এমন গুঞ্জণও শোনা যাচ্ছে। ঢাকা-১৮ আসনে সাহারা খাতুনের বিপরীতে গণসংযোগ চালাচ্ছেন মহানগর উত্তরের নেতা তোফাজ্জল হোসেন ও হাবিব হাসান। এছাড়া আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য ফারুক খান এমপির নামও শোনা যাচ্ছে এই আসনে।
Share this content: