জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

রাজধানীতে তীব্র গ্যাস সংক‌ট

এবিএনএ : রাজধানীজুড়ে গ্যাসের তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। ২০২১ সালের ন‌ভেম্ব‌রের শেষের দিক থেকে এই সমস্যার শুরু। চলতি ১২ জানুয়ারি থেকে সংক‌ট প্রকট আকার ধারণ ক‌রেছে। রাজধানীর সেন্ট্রাল রোড এলাকার বাসিন্দা রেহানা আক্তার ভো‌রে উ‌ছে নাস্তা তৈরি করেন। দুপুরের রান্নাও করে নেন এই সময়ে। দুবেলার ভাত রান্না হয় রাইস কুকারে। গ‌্যাস না থাকায় সকা‌লের চা থেকে শুরু করে টুকটাক রান্নার কাজ চলে রাইস কুকা‌রেই। তি‌নি ব‌লেন, ‘সকাল সাতটার ম‌ধ্যে গ্যাস চ‌লে যায়। বিকেল চারটার পর থেকে আবার পাওয়া যায়। তখন আর সেই গ্যাস কো‌নো কা‌জে লা‌গে না। শী‌তের দি‌নে ঠাণ্ডা খাবার খে‌তে হয়। ইলেক‌ট্রিক কেত‌লি‌তে পা‌নি গরম ক‌রে, সেই পা‌নি জ‌মি‌য়ে তাই গোসল কর‌তে হয়। এ কারণে নিয়মিত গোসলও করা হয় না।’

খিলগাঁও‌য়ের বা‌সিন্দা ইসমাইল হো‌সেন মাস খা‌নেক আগে কেরোসিনের চুলা কিনেয়ে‌ছেন। গ‌্যাস সংকটের কারণে সেই চুলায় রান্নার কাজ চল‌ছে। তি‌নি ব‌লেন, ‘এক‌দি‌কে কে‌রো‌সি‌নের খরচ, অন্য‌দি‌কে গ্যাস না পে‌লেও মা‌সে প্রায় হাজার টাকা দি‌তে হ‌চ্ছে। তিতাস যদি গ‌্যাস নাই দিতে পারে, তাহলে টাকা নি‌চ্ছে কেন? সী‌মিত আ‌য়ের মানুষ আমরা। এমন অনিয়মের কারণে খুবই সমস‌্যার মধ‌্যে পড়েছি।’

বাসায় গ্যা‌সের লাইন থাকার পরও কে‌রো‌সি‌নের চুলায় রান্নার কাজ ক‌রেন ব‌লে জানা‌লেন লালবা‌গের বা‌সিন্দা রানা। তিনি বলেন, ‘ন‌ভেম্ব‌রের শেষ থে‌কে লাইনে ঠিকমতো গ্যাস পাচ্ছি না। বিকাল ৪টা থে‌কে পর‌দিন ভোর ৬টা পর্যন্ত গ্যাস সরবরাহ স্বাভা‌বিক থা‌কে। দি‌নের বাকী সময় গ্যাস একেবারে থাকে না। রান্না, পা‌নি গরম করাসহ কোনো কাজই করা যায় না। তাই বাধ্য হয়েই কেরোসিনের চুলা কিনলাম। যেন অন্তত রান্না করে বাসার সবাই খেতে পারি।’

মিরপু‌রের বা‌সিন্দা তা‌রেক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাসজুড়ে গ্যাস থাকে না, তারপরও বিল দিতে হচ্ছে পুরোটাই! প্রতিদিনই গ্যাস থাকছে না ‌দি‌নের বে‌শি‌ভোগ সময়। এরপর বিকা‌লে গ্যাস এলেও জ্বলে মিটমিট করে। সেই গ্যাস দিয়ে রান্না তো হয়ই না, পানিও গরম করাও যায় না।’ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নি‌য়ে এবং বাসিন্দা‌দের স‌ঙ্গে কথা ব‌লে গ্যাসের এমন সমস্যায় কথা জানা গে‌ছে।

গ্যাস সংকট বিষ‌য়ে তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ জা‌নিয়ে‌ছিল, ১২ জানুয়ারি থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত তিতাস অধিভুক্ত এলাকায় গ্যাসের চাপ কম থাকবে। ইতোম‌ধ্যে রাস্তা খুঁড়ে সেন্ট্রাল রোডসহ ক‌য়েক‌টি এলাকায় গ্যাসলাইন মেরামতও করা হ‌য়ে‌ছে। তারপরও তিতাস গ্যাস কর্তৃপ‌ক্ষের দেওয়া নির্ধারিত সময়ের দশ দিন পার হয়েছে। কিন্তু গ্যাস সরবরাহ সমস্যার সমাধান আজও (৩১ জানুয়া‌রি) হয়নি।

গ্যাসের এই তীব্র সংকট রাজধানীর লালবাগ, আজিমপুর, ধানম‌ন্ডি, সেন্ট্রাল রোড, কাঁঠালবাগান, মিরপুর, আগারগাঁও, শেওড়াপাড়া, রামপুরা, বাড্ডা, খিলগাঁও, বনশ্রী, বাসা‌বো, মুগদা, মাদার‌টেক, মহাখা‌লি, রায়েরবাজার, মোহাম্মদপুর ও ইস্কাটন এলাকায় বেশি।

তিতাস বো‌র্ডের প‌রিচালক প্রকৌশলী মো. মাইদুল ইসলাম জানান, রাজধানীতে গ্যাস সরবরাহের জন্য দুটি টার্মিনাল ব্যবহার করে প্রতিদিন ৭০০ থেকে ৮০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস নিয়ে আসা হয়। এর মধ্যে হঠাৎ ক‌রে একটি টার্মিনালে সমস্যা দেখা দিয়েছে। যে কারণে লাইনে অর্ধেক গ্যাস আসছে। এ কার‌ণেই রাজধানীজুড়ে গ্যা‌সের এ সংকটের সৃষ্টি হয়েছে।

তিতাস গ্যাসের ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. রবিউল আওয়াল বলেন, ‘এলএনজি আমদা‌নী‌তে কাজ করা দুটি টার্মিনালের একটিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় সেটা মেরামতের কাজ চলছে। এ কারণে গ্যাস সরবরাহে ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ত‌বে, কাজ খুব দ্রুত গ‌তি‌তে চলছে। মেরামত শেষ হলে আশা করা যায় গ্যাস সংকট কমে আসবে।’ এই প্রকৌশলী আরও বলেন, ‘যতদূর জানি, মেরামত কাজ শেষ হয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে আরও দুই সপ্তাহ সময় লাগ‌বে। এরপর টার্মিনাল থেকে নিয়‌মিত গ্যাস সরবরাহ শুরু হলে আশা কর‌ছি গ্যাসের সংকট কেটে যাবে।’

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button