আন্তর্জাতিক

যুক্তরাজ্যে স্থায়ী হওয়ার পথ আরও সংকুচিত

এবিএনএ : শিক্ষার্থী ভিসায় যুক্তরাজ্যে অবস্থানের সর্বোচ্চ সীমা নির্ধারণ করে দেওয়ার পর এবার কর্ম ভিসার (ওয়ার্ক পারমিট) ক্ষেত্রেও নানা কড়াকড়ি আরোপ করেছে দেশটি। আসছে ৬ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নতুন নিয়মে যুক্তরাজ্যে অভিবাসীদের স্থায়ী বসবাসের সুযোগ লাভের সম্ভাবনা আরও সংকুচিত হয়েছে।

এত দিন একটানা পাঁচ বছর কর্ম ভিসায় যুক্তরাজ্যে থাকার পর বিদেশি নাগরিকেরা দেশটিতে স্থায়ী বাসের (আইএলআর) আবেদন করতে পারতেন। এ জন্য তাদের কোনো সুনির্দিষ্ট আয় দেখাতে হতো না। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে, যেসব বিদেশি কর্মীর বেতন বছরে কমপক্ষে ৩৫ হাজার পাউন্ড (প্রায় ৪০ লাখ টাকা), তারাই কেবল স্থায়ী বসবাসের আবেদন করতে পারবেন। যাদের আয় বছরে ৩৫ হাজার পাউন্ডের কম, তারা সর্বোচ্চ ছয় বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করতে পারবেন।

যুক্তরাজ্যে সাধারণ চাকরিজীবীরা বছরে গড়ে ২৫ হাজার পাউন্ডের মতো বেতন পেতে পারে। তাই উচ্চ বেতনের শর্ত চাপানোর ফলে হাসপাতালের সেবিকা (নার্স), শিক্ষক, সাংবাদিক, হিসাবরক্ষক সহ বিভিন্ন পেশার বিদেশি কর্মীরা স্থায়ী বাসের সুযোগ লাভ থেকে বঞ্চিত হবেন। অবশ্য সমালোচনার মুখে সরকার সেবিকা ও বিজ্ঞানের শিক্ষকদের উচ্চ বেতনের ওই শর্ত থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত অব্যাহতি দিয়েছে।
এ ছাড়া বিদেশি কর্মী নিয়োগ নিরুৎসাহিত করতে বেতন সীমা বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর একটি লেভি (বার্ষিক শুল্ক) আরোপ করা হয়েছে। এপ্রিল থেকে অভিজ্ঞ বিদেশি কর্মীর ন্যূনতম বেতন হতে হবে বছরে ২৫ হাজার পাউন্ড। আর ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে এটা বেড়ে হবে ৩০ হাজার পাউন্ড। তবে অনভিজ্ঞ বা নতুন আবেদনকারীর (নিউ এনট্রেন্স) জন্য বছরে ২০ হাজার ৭০০ পাউন্ড ন্যূনতম বেতনের বিধান অপরিবর্তিত থাকছে।
২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে বিদেশি কর্মী নিয়োগের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বছরে কর্মী প্রতি এক হাজার পাউন্ড করে শুল্ক (লেভি) দিতে হবে। কেবল ক্ষুদ্র ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য এই শুল্কের পরিমাণ হবে কর্মী প্রতি বছরে ৩৬৪ পাউন্ড। আন্তকোম্পানি কর্মী স্থানান্তরের ক্ষেত্রে বছরে ন্যূনতম বেতন ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ৫০০ পাউন্ড।

নতুন নিয়মে ডিগ্রি পর্যায়ের কোর্স সম্পন্ন করা শিক্ষার্থীদের কর্ম ভিসায় স্থানান্তরিত হওয়ার সুযোগ উন্মুক্ত করা হয়েছে। কোর্স সম্পন্ন করা বিদেশি শিক্ষার্থীদের কাজ দেওয়ার ক্ষেত্রে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধার্যকৃত শুল্কও প্রদান করতে হবে না।

এদিকে নতুন নিয়মে গৃহকর্মী (ডোমেস্টিক ওয়ার্কার) ভিসা ও আশ্রয়প্রার্থীদের (অ্যাসাইলাম সিকার) জন্যও নিয়ম কিছুটা শিথিল করা হয়েছে। এত দিন গৃহকর্মী ভিসায় আসা ব্যক্তিরা সংশ্লিষ্ট স্পিকারের কাজ ব্যতীত অন্য কাজ করতে পারতেন না। নতুন নিয়মে ছয় মাস পর তারা চাইলে অন্য নিয়োগদাতার অধীনে কাজের আবেদন করতে পারবেন। এ ছাড়া, আশ্রয় প্রার্থীর আবেদন নিষ্পত্তি না হলেও ছয় মাস পর তাদের কাজের অনুমতি দেওয়ার কথা বলা হয়েছে নতুন নিয়মে।

বিবাহ সূত্র, শিক্ষার্থী ভিসা কিংবা কর্ম ভিসা-এই তিন পন্থায় যুক্তরাজ্যে এসে বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের অভিবাসীরা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ নিতেন। বৈবাহিক সূত্র (স্পাউস ভিসা) ও কর্ম ভিসায় পাঁচ বছর পর স্থায়ী হওয়ার সুযোগ এখনো রয়েছে। তবে স্পাউস ভিসার ক্ষেত্রে স্পন্সরের ন্যূনতম আয় বছরে ১৮ হাজার ৬০০ পাউন্ড আগেই নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। ওই শর্তের ফলে বাংলাদেশিসহ বিভিন্ন অভিবাসী সম্প্রদায়ে দেশে নিয়ে ছেলে-মেয়েদের বিয়ে দেওয়ার প্রবণতাও ব্যাপকভাবে কমে গেছে। এবার কর্ম ভিসার ক্ষেত্রে বছরে ৩৫ হাজার পাউন্ড বেতনের শর্ত আরোপের ফলে সাধারণ অভিবাসীদের জন্য স্থায়ী হওয়ার সুযোগ অসম্ভব হয়ে পড়েছে।

আবার কোনো অভিবাসী বৈধ উপায়ে টানা ১০ বছর যুক্তরাজ্যে অবস্থান করলে স্থায়ী হওয়ার সুযোগ পান। কিন্তু এই সুযোগ বন্ধ করতে ২০১৪ সালে শিক্ষার্থী ভিসায় সর্বোচ্চ ৮ বছর থাকার সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। আর ৬ এপ্রিল থেকে কার্যকর হতে যাওয়া নিয়ম অনুযায়ী কর্মী ভিসার লোকেরা সর্বোচ্চ ৬ বছরের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না। ফলে কোনো অভিবাসীর ক্ষেত্রে যুক্তরাজ্যে এসে টানা ১০ বছর অবস্থান প্রায় অসম্ভব।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button