
এবিএনএ : ডেমোক্রেট দলের কনভেনশনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি অনেকটাই একমুখী ছিল। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ভালো-মন্দের কথা নিয়েই রাজনৈতিক শিরোনামগুলো আবর্তিত হচ্ছিল। গত সপ্তাহে ডেমোক্রেট দলের জাতীয় কনভেনশনের মাধ্যমে রাজনীতির এ আলাপ অনেকটাই বদলে গেছে। ট্রাম্প মন্দ করার কারণে লোকজন বিরক্ত হয়ে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেবে—এ চিন্তা থেকে যেন দলটি বেরিয়ে এসেছে। ভার্চ্যুয়াল কনভেনশনের মাধ্যমেও ডেমোক্রেট দল নিজেদের কর্মসূচি উপস্থাপন করতে পেরেছে। ট্রাম্পের বিভেদ আর অস্থির রাজনীতির পাল্টা নিজেদের একটি সহনশীল রাজনৈতিক প্রস্তাবনা জনগণের সামনে সাফল্যের সঙ্গে উপস্থাপন করতে পেরেছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকেরা ভিন্ন। তাঁদের নড়াচড়া খুব একটা হচ্ছে না। এমন হওয়ার সুযোগও নেই। আমেরিকার রাজনীতিতে মধ্যপন্থী লোকজন বেশি। যারা কখনো এদিকে ঝুঁকে থাকেন, কখনো ওদিকে। এঁদের উদ্দীপ্ত করার মধ্য দিয়েই আগামী নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয় হতে পারে। দেরিতে হলেও এ মধ্যপন্থী আমেরিকানদের কাছে কনভেনশনের শুরুর দিন থেকেই ডেমোক্রেট দল তাদের সংযোগ করতে পেরেছে কার্যকরভাবে। ট্রাম্প মন্দ করার কারণে লোকজন বিরক্ত হয়ে ডেমোক্র্যাটদের ভোট দেবে—এ চিন্তা থেকে যেন দলটি বেরিয়ে এসেছে ভার্চ্যুয়াল কনভেনশন ডেমোক্রেট দলের জন্য ভালোই হয়েছে। ২০১৬ সালের জাতীয় কনভেনশনের কথা মনে করলে দেখা যায়, সেখানে বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকেরা নীরব ছিলেন না। দলের প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের বিরুদ্ধে তাঁদের সরব উপস্থিতির মধ্য দিয়ে ডেমোক্রেট দলের বিভক্তি স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থকেরা শেষ পর্যন্ত হিলারি ক্লিনটনের নির্বাচন নিয়ে তেমন কোনো উৎসাহ দেখাননি। অনেকে ভোটকেন্দ্রেই যাননি।
এবারের কনভেনশনে এমন কিছু ঘটেনি। ঘটার সুযোগও ছিল না। কনভেনশনের অন্তত চার মাস আগে থেকে বার্নি স্যান্ডার্সের সমর্থক ও দলের অতি উদারনৈতিক পক্ষকে এক করার জন্য দল একটি ওয়ার্কিং কমিটির মাধ্যমে প্রয়াস চালায়। উদারনৈতিকদের বেশ কিছু দাবি ডেমোক্রেট মধ্যপন্থী হিসেবে পরিচিত জো বাইডেনের কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা সম্ভব হয়। কনভেনশনে বার্নি স্যান্ডার্স বক্তব্য দিয়েছেন। নিজের অতি উদারনৈতিক পক্ষকেও আহ্বান জানিয়েছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পকে হোয়াইট হাউস থেকে বিদায় করার জন্য সব অনৈক্য পাশে রেখে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য।আমেরিকার উদারনৈতিক রাজনীতিতে এখন বার্নি স্যান্ডার্সই মূল নেতা। বয়সের ভারে নুয়ে পড়া স্যান্ডার্সকে আমেরিকার যুব-তরুণেরা যেমন করে পছন্দ করে, অন্য কারও ক্ষেত্রে তেমন দেখা যায় না। ডেমোক্রেট দল তাদের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে দলের ঐক্য ও সংহতি রক্ষায় বড় কাজ করেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রাজনৈতিক সংস্কৃতির বিপরীতে মানবিক ও সহনশীলতার প্রার্থী হিসেবে জো বাইডেনকে উপস্থাপন করতে পেরেছে ডেমোক্রেট দল। প্রথম দিন থেকে শেষ দিনের বক্তব্য পর্যন্ত আমেরিকার রাজনীতিতে মানবিকতা, সহনশীলতার আহ্বানকে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন থেকে বারাক ওবামা, সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামা, হিলারি ক্লিনটন—এঁদের সবাই রাজনীতির ইতিবাচক দিকটাকেই সামনে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। এ কাজে তাঁরা সফলও হয়েছেন।
Share this content: