জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

পায়রা বন্দরের সূচনা কাল থেকে

এ বি এন এ : দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে পদ্মাসেতুর পাথর খালাসের মধ্য দিয়ে পায়রা সমুদ্র বন্দরের শুভসূচনা হতে যাচ্ছে। আগামীকাল রোববার বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড  ৫৩ হাজার টন পাথর নিয়ে রামনাবাদ চ্যানেলের বহির্নোঙরে পৌঁছাবে বলে বন্দর সূত্রে জানা গেছে।

১ আগস্ট সোমবার থেকে পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে দেশের তৃতীয়তম সমুদ্র বন্দর পায়রার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।

পায়রা বন্দরের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ক্যাপ্টেন সাইদুর রহমান জানান, রোববার রাতের মধ্য চীন থেকে পাথর নিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ এমভি ফরচুন বার্ড বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে পণ্য খালাসের জন্য পায়রা বন্দর  সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে। এর মাধ্যমে পায়রা সমুদ্র বন্দরে পণ্য খালাসের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে। খুব শিগগিরই আরও কয়েকটি বিদেশি জাহাজ পণ্য নিয়ে পায়রা বন্দরে পৌঁছাবে।

তিনি আরও জানান, পণ্য খালাসের দিন থেকেই লাইটারেজ অপারেশনাল কার্যক্রম শুরু হবে। এর ফলে নিরাপদ পণ্যাদি নদীপথে পরিবহনের মাধ্যমে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ রয়েছে। এমভি ফরচুন বার্ডের মালিক সিলেটের আমদানিকারক জালাল উদ্দিন জানান, আমদানি করা পাথরগুলো মূলত ‘ক্রাসিং স্টোন’। এর বড় অংশই পদ্মাসেতু নির্মাণের জন্য চীন থেকে আনা হয়েছে।

বন্দরকে ঘিরে প্রকল্প এলাকায় এখনও চলছে বিরামহীন কর্মযজ্ঞ। অসংখ্য শ্রমিক কাজ করে যাচ্ছেন। প্রকল্প এলাকায় টার্মিনাল স্থাপন, সৌরবিদ্যুৎ, সিস্টেম চালু, পল্লীবিদ্যুতের  সংযোগ, প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ, নিরাপদ পানির সরবরাহে ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট স্থাপনসহ প্রয়োজনীয় কার্যক্রম ইতিমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

এরই মধ্যে প্রকল্প এলাকা পর্যন্ত সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে। উপজেলা সদর কলাপাড়া থেকে সড়ক পথে রয়েছে দ্বিমুখী যোগাযোগ সুবিধা। পাশাপাশি দর্শনার্থীদের ভিড় চোখে পড়ার মত।

বন্দর ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আরো জানান, অন্যান্য বন্দরে জাহাজ চলাচলে যেমন জোয়ার-ভাটার ওপর নির্ভর হতে হয়, পায়রা বন্দরে এ ধরনের সমস্যা হবে না। নদীর গভীরতা বেশি থাকায় ২৪ ঘণ্টা জাহাজ চলাচলের সুযোগ রয়েছে। এরই মধ্যে রামনাবাদ মোহনা থেকে কাজল, তেঁতুলিয়া নদী হয়ে কালীগঞ্জ পর্যন্ত  সমুদ্রের (নৌপথ) গভীরতা যাচাইয়ের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কাউয়ারচরে বাতিঘর স্থাপনের কাজ শিগগির শুরু হচ্ছে। সাগর মোহনা থেকে রামনাবাদ চ্যানেল পর্যন্ত নদীতে সিগন্যালিং বয়া এবং কিনারে সিগন্যাল বাতি স্থাপন করা হয়েছে। চলতি বছর লালুয়ার চারিপাড়াসহ আশপাশ এলাকার অন্তত সাত হাজার একর জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া চূড়ান্তের পথে।  এ প্রকল্পের জন্য ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও জানান, মূল বন্দরের কাজ শুরু করতে বিদেশি বিশেষজ্ঞ নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।  বন্দর এলাকা এক্সক্লুসিভ জোনে পরিণত হবে। এ ছাড়াও নৌবাহিনীকে আধুনিক এবং ত্রিমাত্রিক বাহিনী হিসেবে গড়ে তুলতে শিগগিরই সাবমেরিন সংযোজিত হতে যাচ্ছে। পায়রা সমুদ্র বন্দরের পাশে স্থাপিত হচ্ছে আধুনিক নৌঘাঁটি। শের-ই-বাংলা আবুল কাশেম ফজলুল হকের নামানুসারে প্রায় ৫০০ একর জমির ওপর স্থাপিত এ ঘাঁটির নামকরণ করা হয়েছে ‘বানৌজা শের-ই-বাংলা’।

এদিকে স্থানীয়রা মনে করেন, পায়রা সমুদ্র বন্দর চালু হলে দক্ষিণের অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। শিল্পকারখানা গড়ে উঠবে। বিদেশিরা এ অঞ্চলে বিনোয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন।
কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হালদার জানান, পায়রা সমুদ্র বন্দর এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করতে সহায়তা করবে। অর্থনৈতিক কাঠামোকে আরও সমৃদ্ধ করবে। তা ছাড়া নৌঘাঁটির মাধ্যমে দক্ষিণাঞ্চলের সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি সুন্দরবনের অপরাধ দমন সম্ভব হবে।

প্রসঙ্গত, ২০১৩ সালের ১৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সমুদ্র বন্দর প্রকল্পের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ২০১৮ সালের মধ্যে এর কার্যক্রম সম্পূর্ণভাবে চালু করার প্রতিশ্রুতি দেন।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button