জাতীয়বাংলাদেশলিড নিউজ

‘মিন্নিই মাস্টারমাইন্ড’

এবিএনএ : বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। স্বামীর হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মিন্নি নিজেই মাস্টারমাইন্ড ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এবং বরগুনার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর মোস্তাফিজুর রহমান বাবু। এ রায়ের মাধ্যমে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। রায় নিয়ে উচ্চ আদালতে যাবেন কিনা প্রশ্নে রিফাত শরীফ হত্যা মামলার অন্যতম আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু বলেন, ‘আদালতের রায়ে আমরা সন্তোষ প্রকাশ করছি। আমরা উচ্চ আদালতে যাব না।’

সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বাবু ও কিসলুর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন বরগুনা জেলা দায়রা জজ আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর সঞ্জীব দাস। এর আগে দুপুর পৌনে ২টার দিকে জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান রিফাত শরীফ হত্যা মামলায় নিহতের স্ত্রী আয়শা সিদ্দিকা মিন্নিসহ ৬ জনকে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন। মিন্নিসহ ফাঁসির আদেশ পাওয়া আসামিরা হলেন- রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান। আর খালাস পেয়েছেন মুসা, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর ও কামরুল ইসলাম ওরফে সাইমুন। মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ভূবন চন্দ্র হালদার এসব তথ্য নিশ্চিত করেন।

দণ্ডপ্রাপ্ত রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ১০ আসামির মধ্যে মুসা পলাতক এবং মিন্নি জামিনে রয়েছেন। মুসা ছাড়া বাকিরা রিফাত হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছিলেন।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে শত শত লোকের উপস্থিতিতে রিফাত শরীফকে (২৫) কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ হত্যাকাণ্ডের একটি ভিডিও ফুটেজ দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। তাতে দেখা যায়, ধারালো দা দিয়ে রিফাতকে একের পর এক কোপ দিতে থাকেন দুই যুবক। ওই সময় রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি ওই দুই যুবককে প্রতিহত করতে আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রিফাতকে বাঁচানো যায়নি। গুরুতর আহত অবস্থায় বরিশাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যান রিফাত।

এ ঘটনায় রিফাতের বাবা দুলাল শরীফ বাদী হয়ে ১২ জনকে আসামি করে বরগুনা থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলায় মিন্নিকে প্রধান সাক্ষী করা হয়। এর পর আরেকটি ভিডিও ভাইরাল হলে মামলার প্রধান সাক্ষী মিন্নিকে গত বছরের ১৬ জুলাই রাতে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পরদিন তাকে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়। দুদিন পর মিন্নিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তখন ১৬৪ ধারায় মিন্নির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদালতে রেকর্ড করা হয়। পরদিন বরগুনার পুলিশ সুপার মো. মারুফ হোসেন সংবাদ সম্মেলনে বলেন, মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। এ হত্যা পরিকল্পনার সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন।

অবশ্য মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন শুরু থেকেই অভিযোগ করেন, নির্যাতন করে ও ভয়ভীতি দেখিয়ে মিন্নিকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেছে পুলিশ। এর নেপথ্যে স্থানীয় প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের মদদ রয়েছে। গত ৩০ জুলাই বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান মিন্নির জামিন নামঞ্জুর করেন। তার আগে ২১ জুলাই বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম মো. সিরাজুল ইসলাম গাজীর আদালত মিন্নির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করেন। গত বছরের ২৯ আগস্ট শর্তসাপেক্ষে মিন্নির জামিন মঞ্জুর করেন হাইকোর্ট। সেই থেকে জামিনে ছিলেন রিফাত শরীফ হত্যা মামলার প্রধান সাক্ষী থেকে আসামি হওয়া মিন্নি।

Share this content:

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button